ইসলামে শহীদের মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বোঝ না।’ (সুরা বাকারা: ১৫৪)। প্রিয়জন বা কোনো মুসলমান ভাই শহীদ হলে বা মারা গেলে তার জন্য দোয়া করা জীবিতদের ঈমানি দায়িত্ব।
মৃত ব্যক্তির জন্য শোকে বিহ্বল না হয়ে সুন্নাহসম্মত উপায়ে দোয়া করলে তা আল্লাহর দরবারে দ্রুত কবুল হয়। রসুলুল্লাহ (স.) তার প্রিয় সাহাবিদের মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছেন এবং তাদের জন্য জান্নাতের উচ্চ মাকাম বা মর্যাদা কামনা করে দোয়া করেছেন। বিশেষ করে তার ফুফাতো ভাই ও প্রিয় সাহাবি আবু সালামা (রা.) শহীদ হওয়ার পর তিনি যে দোয়াটি করেছিলেন, তা মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষণীয়। সাহাবি আবু সালামার জন্য মহানবীর (স.) দোয়ামহানবীর (স.) প্রিয় সাহাবি আবু সালামা (রা.) ওহুদ যুদ্ধের আঘাতজনিত কারণে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি ইন্তেকাল করলে নবীজি (স.) তাকে দেখতে যান এবং তার জন্য বিশেষ একটি দোয়া করেন।
হাদিসে দোয়াটি এভাবে এসেছে:اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأَبِي سَلَمَةَ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِউচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লিআবি সালামাহ ওয়ারফা’ দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যীন, ওয়াখলুফহু ফী আক্বিবিহী ফিল গাবিরীন, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রব্বাল আলামীন। ওয়াফসাহ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাওয়ির লাহু ফীহি। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আবু সালামাকে মাফ করে দিন, হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা বুলন্দ করে দিন এবং তার উত্তরাধিকারীদের মধ্য থেকে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করুন। হে রাব্বুল আলামীন, আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দিন।
তার জন্য কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং তার কবরকে আলোকময় করে দিন। (মুসলিম: ২০০২) অন্য যেকোনো শহীদ বা মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া মহানবীকে (স.) অনুসরণ করে আমরা যেকোনো শহীদ বা মৃত ব্যক্তির জন্য এই দোয়াটি পড়তে পারি। সেক্ষেত্রে ‘আবু সালামা’র নামের জায়গায় ‘লাহু’ (তাকে) শব্দটি ব্যবহার করতে হবে। দোয়াটি নিম্নরূপ—اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লাহু ওয়ারফা’ দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যিন ওয়াখলুফহু ফি আকিবিহি ফিল গাবিরিনা ওয়াগফির লানা ওয়া লাহু ইয়া রাব্বাল আলামিন। ওয়াফসাহ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাওয়ির লাহু ফীহি। অর্থ: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন। আপনি তার বংশধরদের অভিভাবক হয়ে যান। হে রাব্বুল আলামিন তাকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তার কবরকে প্রশস্ত করুন এবং তা আলোকজ্জ্বল করে দিন।
এছাড়া আরও কিছু দোয়া:
১. সাধারণ ক্ষমা ও রহমতের দোয়াاللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লাহুম ওয়ারহামহুম
অর্থ: হে আল্লাহ! তাদের ক্ষমা করুন ও তাদের উপর রহম করুন।
২. জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধির দোয়াاللَّهُمَّ ارْفَعْ دَرَجَاتِهِمْ فِي الْمَغْفُورِ لَهُمْ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মারফা‘ দারাজাতিহিম ফিল মাগফুরি লাহুম
অর্থ: হে আল্লাহ! ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।৩. শহীদদের পরিবারের জন্য দোয়াاللَّهُمَّ صَبِّرْ أَهْلَهُمْ وَاخْلُفْهُمْ فِي الْآخِرِينَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাব্বির আহলাহুম ওয়াখলুফহুম ফিল আখিরিন
অর্থ: হে আল্লাহ! তাদের পরিবারকে ধৈর্য্য দিন এবং তাদের স্থলে উত্তম প্রতিস্থাপন দান করুন।শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসহাদিসে এসেছে, ‘আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে, ভবন ধসে বা পেটের রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদের মর্যাদা পায়।’
(সহিহ বুখারি: ২৮২৯) দোয়া পাঠের গুরুত্বপূর্ণ আদব
১. পবিত্রতা অর্জন: দোয়ার আগে অজু বা গোসল করে নিন।
২. কিবলামুখী হওয়া: দোয়া করার সময় কিবলার দিকে মুখ করুন।
৩. দরুদ শরিফ পাঠ: দোয়ার শুরু ও শেষে দরুদ পড়ুন।
৪. নিহতদের নাম উল্লেখ: সম্ভব হলে নিহতদের নাম নিয়ে দোয়া করা উত্তম।শহীদদের রুহের ইসালে সওয়াবের জন্য সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করতে পারেন। তাহাজ্জুদ নামাজে এই দোয়াগুলো পড়লে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু মৃত নয়, আহতদের জন্যও সুস্থতার দোয়া করতে পারবেন। উৎস: সময়নিউজটিভি।