সালেহ্ বিপ্লব: ভারতের মেঘালয়ে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলের সঙ্গে ভার্চুয়াল সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন। সাক্ষাতকারটি নেন সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম।
আপনার বর্তমান অবস্থান কোথায়, এই প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি এখন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে আছি।
প্রশ্ন করা হয়, গণমাধ্যমের খবর, ২০১৫ সালের ১১ মে শিলংয়ে আপনাকে পাওয়া যায়। তার দুমাস আগে ১০ মার্চ আপনি নিখোঁজ হয়ে যান। কী হয়েছিলো আসলে?
জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ আমি এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম। ওখান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকের অস্ত্রধারীরা আমাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। প্রায় ৬১ দিনের মতো তারা আমাকে একটা গোপন জায়গায় আটকে রাখে। ২০১৫ সালের ১০ মে তারা আমাকে চোখ বাঁধা এবং হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় গাড়িতে তুলে নিয়ে রওয়ানা করে। গাড়ি কতো ঘণ্টা চলেছে, আমি বলতে পারবো না। একটা জায়গায় গিয়ে গাড়িটা থামে। গাড়ি থেকে নামিয়ে কিছুটা পথ তারা আমাকে নিয়ে পায়ে হেঁটে এগোয়। এরপর আবার গাড়িতে তোলে। তারপর শিলংয়ে একটা গলফ ক্লাবের পাশে আমাকে ফেলে যায়। তখন ভোর হয়েছে। তারা আমার চোখের বাঁধন ও হ্যান্ডকাফ খুলে দিয়ে চলে যায়।
প্রশ্ন করা হয়, ঢাকা থেকে শিলং তো অনেক দীর্ঘ পথ। পুরোটা পথই কি আপনার চোখ বাঁধা ছিলো? উত্তরে হ্যাঁ বাচক জবাব দেন সালাহউদ্দিন।
এরপর প্রশ্ন করা হয়, শিলং যেতে তো সীমান্ত পার হওয়ার বিষয় আছে। সেটা কীভাবে হয়েছে, মনে আছে আপনার?
জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমার চোখ ও হাত বাঁধা ছিলো। আমি কিছুই দেখতে পাইনি। তবে যেখানে যেখানে তারা আমাকে নামিয়েছিলো, পায়ে হাঁটিয়েছিলো, এখন মনে হচ্ছে, সেটা বর্ডার এলাকা হতে পারে। তারপর এক জায়গায় বসালো। পরে আরেকটি গাড়ি করে নিয়ে গেলো।
শিলংকে বেছে নেওয়ার কী কারণ থাকতে পারে, এই প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, সেটা তারাই বলতে পারেন।
যাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছেন, তাদের কাউকে কি আপনি শনাক্ত করতে পেরেছেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন ইউনিট কাজটি করছে, শনাক্ত করতে পেরেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।
প্রশ্ন করা হয়, মেঘালয়ে আপনি কীভাবে খরচ নির্বাহ করছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজের খরচেই চলছি। আমার পরিবার থেকে টাকা পাঠায়।
পরের প্রশ্ন, পরিবারের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হচ্ছে? সালাহউদ্দিন বলেন, তারা আগে বছরে দুই একবার আসতে পারতো, এখন আরো কম। মাঝখানে তো কোভিডের কারণে ভিসা বন্ধই ছিলো।
অনুপ্রবেশের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারতের আদালত আপনাকে মুক্তি দিয়েছে। দেশে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। এই অবস্থায় সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হচ্ছে কি না, প্রশ্ন করেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক।
বিএনপি নেতা বলেন, আমি খালাস পাওয়ার কয়েক মাস পর সরকারপক্ষ আমার খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করে। ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিল আদালত আমার খালাস বহাল রাখেন। এবং ভারত সরকারকে নির্দেশ দেন আমাকে যাতে আইনি প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। এরপর মেঘালয়ের রাজ্য সরকার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে। সে ব্যাপারে কী হয়েছে জানি না। আমি মে মাসে গৌহাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আমার ট্রাভেল ডকুমেন্ট চেয়ে আবেদন করি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি।
বাংলাদেশ সরকার কিংবা স্বরাষ্ট্র বা কোনো মন্ত্রণালয় থেকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না, এর জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।
প্রশ্ন ছিলো, আপনি কি এই মুহূর্তে দেশে ফিরতে চাচ্ছেন? জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, অবশ্যই। আমি প্রথম দিন থেকেই দেশে ফিরতে চাইছি।
দেশে ফিরলে কি কোনো বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করেন? জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, সেটা তখন দেখা যাবে।
আপনি আপনার এই বিষয়টি বাংলাদেশের আদালতে তোলার চিন্তা করছেন কি না? প্রশ্ন করা হলে সালাহউদ্দিন বলেন, সেই বিষয়ে সেই বিষয়ে আমি এখনো আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলিনি। যদি হাইকমিশন আমাকে ট্রাভেল পাস ইস্যু না করে, সেইক্ষেত্রে কিছু করা যায় কিনা, দেখা যাবে।
দেশে ফেরার পর রাজনীতিতে আবারো ফেরার চিন্তা আছে কি না? এই প্রশ্ন করা হলে সালাহউদ্দিন বলেন, ফেরার প্রশ্ন আসছে কেনো? আমি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। এখান থেকেই আমি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নিচ্ছি। আমি তো রাজনীতিতেই আছি।
রাজনীতির মাঠে নানা রকম আলোচনা হচ্ছে। দেশিবিদেশি নানা রকম উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে কথা হচ্ছে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও কথা হচ্ছে। নানা রকম কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। তো এসব নিয়ে আপনার সঙ্গে ভারত সরকারের কোনো যোগাযোগ হয়?
জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, না। আমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।
মেঘালয়ে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এখন শারীরিক অবস্থা কেমন? এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, কোনো রকমে বেঁচে আছি। আমি চার পাঁচ বছর যাবত চিকিৎসার বাইরে আছি। মেঘালয়ের বাইরে কোথাও যেতে পারি না। এই অবস্থায় আছি। শারীরিক অসুস্থতা তো আছেই।
প্রশ্ন করা হয়, ভবিষ্যতে চিকিৎসা করানোর পরিকল্পনা কী?
জবাবে তিনি বলেন, আমার প্রথম প্রায়োরিটি চিকিৎসা ও চেক আপ। সেটা কোথায় করবো, সেটা পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।
এসবি/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :