শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২২ মে, ২০২২, ০৮:২৪ রাত
আপডেট : ২২ মে, ২০২২, ০৮:৩৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারত পিকে হালদারের টাকা ফেরত দেবে বলে মনে হয়না

গাজী আব্দুর রশিদ : [২] কীভাবে, কেমন করে নগদ এতগুলো টাকা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গেল! বাংলাদেশ থেকে নাকি টাকা পাঠানোর কোনো নিয়ম নেই। ফলে পিকে হালদারের এই টাকাটা গেল কীভাবে! এমন প্রশ্ন করেছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বা বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন।

[৩] রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে দেখা যাবে যে দুর্বৃত্তদের কেমন যেন একটা রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ আছে। কীভাবে একটা আন্তঃরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাও তারা গড়ে তুলেছে। ভারতের বিষয়ে বলব হয়তো এরকম প্রশ্রয়ও থাকে যে বাংলাদেশ থেকে এভাবে এইপরিমাণ টাকা নিয়ে গেলে তাদের জিডিপিতে তা যুক্ত হয়। এই পুঁজিতো ভারতেই থাকে। ফলে এরকম পুঁজি আহরণের এটাও তাদের কোনো কৌশল কি না! কেননা এর আগেও অনেককে আমরা দেখেছি ভারতে গিয়ে অবৈধ টাকার ব্যবসা বাণিজ্য করত।

[৪] বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, পিকে হালদার প্রথম নন এবং আমাদের আশঙ্কা পিকে হালদার সম্ভবত শেষও নন। প্রশ্ন উঠছে এরকম অসংখ্য পিকে হালদাররা কিভাবে টিকে আছেন? তারা কিভাবে বড় হন, কিভাবে দেশের সর্বনাশের চেষ্টা করছেন সেগুলো তো আমরা দেখছি। পিকে হালদারেরও আগে যখন হলমার্কের নামে সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো আত্মসাৎ করা হয়েছিল তখন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন আমাদের এই বিরাট বাজেটের তুলনায় চার হাজার কোটি টাকা কিছুই নয়। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দের জন্য চিকিৎসার জন্য টাকা খরচ করতে যাদের এত কষ্ট তাদের জন্য ৪/৫ হাজার কোটি টাকা কিছুই নয় একথা বলতে পারেন! পিকে হালদারের ঘটনায় দেখুন- আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনছি সব মিলিয়ে প্রায় ১২/১৩ হাজার কোটি টাকার সঙ্গে যুক্ত এই পিকে হালাদার। সরাসরিভাবে প্রায়  চার হাজার কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে যিনি  যুক্ত সেই মানুষটা কিভাবে দেশ থেকে চলে যেতে পারলেন। তারপর আমরা দেখলাম বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতে মাছের ঘের, জায়গা জমি কেনা, ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন তিনি।  সন্দেহবশত ভারতের ইডি তাকে গ্রেপ্তার করেছে। ফলে পিকে হালদাররা যেভাবে দুর্নীতির চূড়ায় উঠেছিলেন এবং তাদেরকে তুলবার জন্য যারা কুশীলব ছিলেন তারা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন স্তরের লোকজন আছে বলে আমরা আশঙ্কা করি।

আমরা মনে করি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন বসবাসেরর পরও ভারতীয় এক নাগরিককে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার করে তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল আমাদের সঙ্গে যেহেতু ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি যেহেতু ভারতের আছে সেহেতু পিকে হালদারকে আমাদের ফেরত চাইতে হবে এবং নিতে হবে। তবে বন্দি বিনিময় চুক্তির ফলে না হয় বন্দিকে ফেরত পাওয়া যাবে কিন্তু যে টাকাটা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে সেই টাকা ফেরত আনার উপায়টাও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

[৫] রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, এটা খুবই অবাক করা ব্যাপার যে বাংলাদেশ থেকে যারা টাকা পাচার করে কানাডায়, মালয়েশিয়ায় গিয়ে বাড়ি কিনতে পারে। সেখানকার নাগরিকত্ব পায়। ভারতে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে বিনিয়োগ করতে পারে। তারমানে এইসব দেশ কি লুটপাটকারী এবং দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দেবার একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমরা দেখেছি আমাদের দেশেও কতমানুষ কতভাবে পাসপোর্ট পেয়ে যায়! একজন সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলতে গেলেও কত ধরণের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে কেউ যদি বাড়ি করতে চায় অনেক ক্ষেত্রে মানুষ টিটকারি করে বলে বিয়ের কাবিননামা ছাড়া সমস্ত কাগজ তাদেরকে জমা দিতে হয়। তাহলে বাংলাদেশ থেকে এতগুলো টাকা গেল কি করে! ভারতে এই টাকা দিয়ে জায়গা জমি কিনলেন কীভাবে! কিসের ভিত্তিতে তিনি জায়গা জমি কিনলেন। পাসপোর্ট পাওয়া কিংবা নাগরিকত্ব পাওয়ার একটা ব্যাপার আছে কিন্তু তিনি তো ওখানে টাকাটা বিনিয়োগ করেছেন। কীভাবে, কেমন করে নগদ টাকাটা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গেল। বাংলাদেশ থেকে নাকি টাকা পাঠানোর কোনো নিয়ম নেই। ফলে এই টাকাটা গেল কীভাবে! এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে দেখা যাবে যে দুর্বৃত্তদের কেমন যেন একটা রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ আছে। কীভাবে একটা আন্তঃরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাও তারা গড়ে তুলেছে। ভারতের বিষয়ে বলব হয়তো এরকম প্রশ্রয়ও থাকে যে বাংলাদেশ থেকে এভাবে এইপরিমাণ টাকা নিয়ে গেলে তাদের জিডিপিতে তা যুক্ত হয়। এই পুঁজিতো ভারতেই থাকে। ফলে এরকম পুঁজি আহরণের এটাও তাদের কোনো কৌশল কি না! কেননা এর আগেও অনেককে আমরা দেখেছি ভারতে গিয়ে অবৈধ টাকার ব্যবসা বাণিজ্য করত।

[৬] বাসদ নেতা বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকলেও অনুমান করতে তো অসুবিধা হয় না। কেননা এর আগে বেসিক ব্যাংককে ডুবানোর জন্য যারা দায়ী ছিল,ফার্মার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রেও যারা জড়িত ছিলেন-কিভাবে তারা ঐ কাজটি করতে পেরেছিলেন? একা একা একজন ব্যক্তি এতগুলো টাকা দেশের ভেতর থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া তারপক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। দুদক কেবলমাত্র মামলা করেই তার দায়িত্ব শেষ! দুদক তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। পুলিশও তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা যখনই এ ধরণের ঘটনা কোনো না কোনো ভাবে বিশেষ করে প্রচার মাধ্যমের কারণে নজরে আসে তখন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার তখন প্রথম দায়িত্ব হয়ে যায় এটি বলার যে, এটা মিথ্য, ভুয়া এইসব কথা বলে দেশের ভাবমূর্তি করা হচ্ছে। এসব বলে বিষয়টিকে ধামাচাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঘটনাটা যদি এত বড় হয় এবং ধামাটা যদি এত ছোট হয় এবং তাকে চাপা দিতে না পারে তখন সমস্ত কিছু বেরিয়ে আসে। ফলে এ যাবতকাল যারা এইসব কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের সহায়তা কিংবা তাদের পাশে থাকার জন্য প্রচুর এইরকম রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ছিলেন যারা কখনও তাদেরকে আঁড়াল করার চেষ্টা করেছেন আবার কখনও রক্ষা করার চেষ্টা  করেছেন। তবে আমি মনে করি সুষ্ঠু তদন্ত হলে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।

[৭] তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র ২১ কোটি টাকা তাও সেটি রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে হয়তো ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু টিআইবি যে জরিপ করে বলে এবং সিপিডি যে সাধারণ ধারণা করে বলে যে প্রতিবছর গড়ে আমাদের এখান থেকে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। কেউ কেউ বলছেন এ যাবতকাল বাংলাদেশ থকে ৬০০ কোটি টাকা  পাচার হয়েছে। এই টাকাগুলো কিন্তু ফেরত আসে নি। ফলে এটাও কিন্তু সম্পদ কিংবা টাকা পাচারকারীদের উৎসাহিত করে যে দুই বছর জেল খেটে গেলে তো কি আর এমন অসুবিধা। আমার পরিবার পরিজন এবং আত্মীয় স্বজন তারা তো ভালোই থাকতে পারবে। ফলে কোনো না কোনো কারণে বিশেষ করে ভারতের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকার কারণে হয়তো বা পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে কিন্তু তার সম্পদ আনা যাবে না। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ঐ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ঠিকই তাদের নিজস্ব সম্পদ বানিয়ে ফেলবে। ঠিক যেভাবে কানাডায়, মালেশিয়ায় করে ফেলে। ভারতের ক্ষেত্রে এই কাজটাই তারা করবেন। ফলে দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ বিদেশে থেকে যাবার আশঙ্কা বহুল পরিমাণে থেকে যায়।

[৮] রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, জনগণের দিক থেকে এই বিরাট ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় দুর্নীতির সমস্ত ফাঁক ফোকরগুলো বন্ধ করা। যাদের আয় যত বেশি তাদের ওপর তত বেশি করের হার আরোপ করা। আর সরকারের দিক থেকে পথ হচ্ছে আসন্ন বাজেটে জনগণের ওপর ট্যাক্সের বোঝা আরও  চাপিয়ে দেয়া। বিশ্ব বাজারে দাম বেড়েছে এই অজুহাতে জিনিষপত্রের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়া এবং জনগণের ওপর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক চাপটা আরও বৃদ্ধি করা। রাজনৈতিকভাবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে, অর্থনৈতিকভাবে লুণ্ঠন করে তারা হয়তো এই জিনিষটার ফয়সালা করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তাতে সংকট আরও গভীর হবে, আরও নতুন নতুন পিকে’র জন্ম হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়