শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০২২, ১০:৫৪ দুপুর
আপডেট : ২৯ আগস্ট, ২০২২, ০২:৪৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুইডিশ পার্লামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি ডাবলু

সুইডিশ পার্লামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি ডাবলু

ভূঁইয়া আশিক রহমান : [২] মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু-বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সুইডিশ রাজনীতিবিদ। দীর্ঘ ৪৫ বছর সুইডেনের রাজধানী স্টকহল্মে স্বপরিবারে বাস করেন। বাংলাদেশে থাকাকালীন ঢাকায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭৫ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করলে তিনি ঢাকা মহানগর জাতীয় ছাত্রলীগের ১৩ সদস্য বিশিষ্ট প্রথম কমিটির সদস্য ছিলেন। গ্রামের বাড়ি সিলেটের মৌলভী বাজারের কনকপুর গ্রাম। বাবা মরহুম আলী মেহদী খান, বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা অফিসার হিসেবে ১৪ আগস্ট পঁচাত্তর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।

[৩] ৫ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মহিবুল ইজদানী ডাবলু পরিবারের চতুর্থ সন্তান। দুই ভাই ও এক বোন থাকেন লন্ডন। বাকিরা সবাই ঢাকায়। পরিবারের সবচেয়ে ছোট ভাই কবিরুল ইজদানী খান বর্তমানে বাংলাদেশ সরকাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব।

[৪] ইজদানী খান ডাবলু ১৯৭৬ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইডিয়াল কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এই সময় সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় থাকাকালীন পুলিশি হয়রানির কারণে প্রথমদিকে পলাতক ও পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালের আঠারো জানুয়ারি বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

[৫] ১৯৯৪ ইজদানী সুইডিশ ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের শেষ দিকে তিনি সুইডেনের মূল ধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সুইডিশ লেফট পার্টি (ভেনস্টার পার্টি) সদস্য হিসেবে ২০০২-২০০৬ মেন্ডেট পিরিয়ডে স্টকহল্ম সিটি কাউন্সিলে নমিনেশন নিয়ে কাউন্সিলার পদে জয়লাভ করেন। এই ধারাবাহিকতায় চলতে থাকে সুইডিশ মূলধারার রাজনীতিতে ডাবলুর অগ্রসরতা।

[৬] ২০০৬-২০১০ ও ২০১৪-২০১৮ সালে গ্রেটার স্টকহল্ম এসেম্বলি (কাউন্টি কাউন্সিল) নির্বাচনে লেফট পার্টির নমিনেশন নিয়ে তিনি জয়লাভ করেন। মহিবুল ইজদানী সুইডেনে প্রথম বাংলাদেশি যিনি স্টকহল্ম সিটি কাউন্সিল ও কাউন্টি কাউন্সিলে নির্বাচিত কাউন্সিলারের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০১০-২০১৪ তিনি সুইডিশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেফট পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

[৭] বর্তমানে লেফট পার্টি স্টকহল্ম হেঁসেলবি ভেলেংবি ব্রাঞ্চের নির্বাচিত সভাপতিষ স্টকহল্ম আপিল কোর্ট ও ইমিগ্রেশন কোর্টের জুরি, স্টকহল্ম হেঁসেলবি ভেলেংবি লোকাল কাউন্সিলে লেফট পার্টির গ্রুপ লিডার স্টকহল্ম আপিল কোর্ট জুরি সমিতির নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট। এছাড়া একটানা ৬ বৎসর ভেনস্টার পার্টি সেন্ট্রাল কমিটির ১১ সদস্য বিশিষ্ট মনোনয়ন বোর্ডের নির্বাচিত সদস্যের দায়িত্ব পালন করে তিনি মনোয়ন পাওয়া সত্ত্বেও গত ফেব্রুয়ারিতে স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান।

[৮] মহিবুল ইজদানী সুইডিশ পোস্ট ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে দীর্ঘ ২৫ বৎসর ফুলটাইম সক্রিয় ছিলেন। এই সময় সুইডিশ পোস্ট ট্রেড ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্রাঞ্চের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ আগস্টে তিনি ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এ বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সুইডেনের জাতীয় নির্বাচনে মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু জাতীয় সংসদে স্টকহল্ম থেকে ভেনস্টার পার্টি (লেফট পার্টি ) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

[৯] সুইডেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জয়ের ব্যাপারে কতোটা আশাবাদী সম্পর্কে জানতে চাইলে মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু বলেন, আমার জয়-পরাজয় নির্ভর করছে বাংলাদেশি ভোটারদের ওপর। স্টকহল্মে আসছে নির্বাচনে অনেক বাংলাদেশি ভোটার প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। আমি তাদের ও অন্যান্যদের প্রতি অনুরোধ করবো, ১১ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে দলমত নির্বিশেষে ভেনস্টার পার্টিকে ভোট দেওয়ার জন্য। আমার বিশ্বাস এবার বাংলাদেশি ভোটাররা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবেন, ভোটের মাধ্যমে। তারা দলমতের ঊর্ধ্বে ওঠে আমাকে ভোটে দেবেন। সুইডিশ পার্লামেন্টে পাঠাবেন, তাদের অধিকার নিয়ে আমি কথা বলবো। নিপীড়িত মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। একজন বাংলাদেশি সুইডেনের পার্লামেন্টের সদস্য হলে নিশ্চয়ই এ গর্ব সবার হবে। বাংলাদেশিরা ভোটার এই সুযোগ হারাতে দেবেন না বলেই বিশ্বাস আমার। 

[৯] বর্তমানে সুইডিশ পার্লামেন্টে ভেনস্টার পার্টির অবস্থান কোথায়?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু : আমরা একমাত্র বামপন্থী রাজনৈতিক দল, যারা দীর্ঘদিন থেকে সুইডিশ পার্লামেন্টে অবস্থান করছে। সুইডিশ পার্লামেন্টে অবস্থানরত অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হলো সোসিয়াল ডেমোক্রেট, মডারেট, সুইডেন ডেমোক্রেট, সেন্টার পার্টি, ক্রিস্ট ডেমোক্রেট, লিবারেল ও গ্রিন পার্টি। পার্লামেন্টের ৩৪৯ আসনের মধ্যে আসন সংখ্যার দিক থেকে ভেনস্টার পার্টির অবস্থান পঞ্চম। বর্তমানে সুইডিশ পার্লামেন্টে ভেনস্টার পার্টির ২৮ আসন রয়েছে।

[১০] ১১ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ভেনস্টার পার্টি (লেফট পার্টি) কতোগুলো আসন পাবে বলে আপনি মনে করেন?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু : বর্তমান ২৮ আসনের চেয়ে আরও বেশি আসন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। জনপ্রিয়তা যাচাই অনুসন্ধান রিপোর্ট অনুসারে ভেনস্টার পার্টি ৩৫-৪০ আসন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে নির্বাচনের এখনো বাকি সারে তিন মাস। এই সময়ে নির্বাচনী হাওয়ায় অনেক পরিবর্তন আসার সম্ভবনা রয়েছে।

[১১] ভেনস্টার পার্টির নির্বাচনী মেনিফেস্টো কী?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু : আমরা কোনো সামরিক জোটে না গিয়ে জোট স্বাধীনতা সুইডেনের জন্য নিরাপদ বলে মনে করি। ভেনস্টার পার্টি বিশ্ব ইতিহাসে সুইডেনের ২০০ বৎসরের নিরপেক্ষতাকে বজায় রাখতে চায়। এজন্য ভেনস্টার পার্টি সুইডেন ন্যাটোর সদস্য পদের বিরোধিতা করেছে। এছাড়া সুইডেনকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে সামনে এগিয়ে নিতে চাই। বেকার সমস্যা সমাধানে চাকরি ক্ষেত্রে কিছু কিছু আইন পরিবর্তন করে স্থায়ী চাকরি পাওয়ার সুযোগ ও জলবায়ু ক্ষেত্রে ভেনস্টার পার্টি আরও অর্থ বিনিয়োগে আগ্রহী। কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হলে প্রথম দিনের (কারেন্সি ডে) আয় কেটে রাখার নিয়ম বাতিল, রিফুজি আইনে শিথিলতা, বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, দরিদ্র দেশে আর্থিক সাহায্যের পরিমান বৃদ্ধি ও সর্বনিম্ন পেনশন গ্রহণকারীদের ১০০০ হাজার ক্রোনার টেক্স ফ্রি প্রদান সহ বয়স্ক যত্ন সেন্টারে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি আর্থিক সাহায্য বাতিল করার পক্ষে।

[১২] প্রবাসে বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু : ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রবাসে বাংলাদেশি রাজনীতির বিরোধিতা করতে চাই না। আমি পজেটিভ মানুষ। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে সামনে এনে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর ও পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও নিজেদের মধ্যে দলাদলির কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাকে আমি সমর্থন করি না, করতে পারি না। কারণ এখানে বাংলাদেশ সামনে আসে। এতে করে বিদেশে বাংলাদেশের মানসম্মানকে আরও ছোট করা হয়। প্রবাসে বাংলাদেশিদের রাজনীতি হতে হবে অনেকটা ঘরোয়া রাজনীতির মতো। আমার মনে হয় না বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দেশের রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের শাখা প্রশাখা আছে।

[১৩] বিদেশে বসবাস করছেন বহু বছর ধরে। এই সময়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া দেখেন বিদেশে বসে। কেমন লাগে। বিদেশিরা কীভাবে দেখে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু : বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে খুব ভালো করছে। ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এশিয়ান টাইগার হিসেবে খ্যাত হচ্ছে। একজন বাংলাদেশি হিসেবে নিশ্চয়ই অনেক ভালোলাগার ব্যাপার এটা। আমার দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নতি যেকোনো বাংলাদেশির গর্ব হওয়ার কথা। আমারও আনন্দ হচ্ছে। খুব ভালো লাগে যখন দেখি বিদেশিরাও বাংলাদেশের কথা বলেন। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনান। প্রশংসা করেন। এই বাংলাদেশকেই তো চাই আমরা, যে বাংলাদেশ বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। পথ চলবে। বিশে^র কাছে উদাহরণ হবে তার কর্মের জন্য। ভালো কাজের জন্য। বাংলাদেশ ভালো থাক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাকÑসবসময়ই চাই। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে একটি উন্নত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করুক। খুব করে চাই এটা। 

[১৪]  বিশ্ব রাজনীতিতে সুইডেনের ২০০ বৎসরের নিরপেক্ষতা ধ্বংস হওয়ার পথে?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু : বিশ্ব রাজনীতিতে সুইডেনের ২০০ বৎসরের নিরপেক্ষতা ধ্বংস হওয়ার পথে। সম্প্রতি ক্ষমতাসীন সোসিয়াল ডেমোক্রেট পার্টি ডানপন্থী দলগুলোর সাথে মিলে ন্যাটোতে সদস্য হওয়ার আবেদন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পার্লামেন্টে অবস্থানরত ভেনস্টার পার্টি (লেফট পার্টি) ও গ্রিন পার্টি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। এমনকি সোসিয়াল ডেমোক্রেট পার্টির মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দলের অনেকে দ্বিমত পোষণ করা সত্ত্বেও দলটি আগামী নির্বাচনে জয়লাভের স্বপ্নে ডানপন্থী দলগুলোর সাথে একত্রিত হয়ে ইতিহাসের পাতা থেকে সুইডেনের নিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। আমরা দৃঢ় ভাষায় এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়