ইকবাল খান: [২] ১৯৩৯ সালে মারিয়ানা দ্বীপে গিয়েছিলেন তরুণী কাজুকো হিগা। তাঁর বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর। ১৮ বছর বয়সে শোই চি হিগা নামে এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ওই যুবক নানিয়াং জিংফা সংস্থায় কাজ করতেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের আনাতাহান দ্বীপে সংস্থার কাজ নিয়ে চলে যান তিনি। সূত্র: আনন্দবাজার
[৩] সেখানে গিয়ে দম্পতি নারকেল চাষের কাজ তদারকি করতেন। তখনই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যদিও নির্জন সেই দ্বীপে যুদ্ধের প্রভাব পড়েনি। কাজুকো আর তাঁর স্বামী শোইচি নিজের মতো দিন কাটাচ্ছিলেন। ওই দম্পতির সঙ্গে ওই দ্বীপে ছিলেন শোইচির বস মাসামি হিনোশিটা। তিনি আবার কাজুকোর রূপে মুগ্ধ ছিলেন। শোইচি সবই বুঝতেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না।
[৪] তখন জাপানে বিমান হানা চালাচ্ছে আমেরিকা। আনাতাহান দ্বীপে বোমা ফেলে তারা। জঙ্গলে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচে কাজুকো এবং মাসামি হিনোশিটার। কিন্তু সেই বিমান হানার পর কাজুকোর স্বামীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
[৫] এর পর থেকে স্বামী-স্ত্রী হিসাবেই থাকতে শুরু করেন কাজুকো এবং হিনোশিটা। নির্জন দ্বীপে ধীরে ধীরে গুছিয়ে তুলেছিলেন নিজেদের সংসার। ১৯৪৪ সালে আচমকাই বদলে যায় তাঁদের জীবন। আনাতাহান দ্বীপের কাছে আমেরিকার হানায় ভেঙে পড়ে একটি জাপানি জাহাজ। খাদ্যসামগ্রী ছিল তাতে। সব তলিয়ে যায় সাগরের জলে। তাতে সওয়ার ছিলেন ৩১ জন জাপানের নাগরিক। তাঁদের মধ্যে ১০ জন সেনা ছিলেন। কোনও মতেও জাহাজের সওয়ারিরা সাঁতরে আনাতাহান দ্বীপে এসে পৌঁছন। হিনোশিটা এবং কাজুকো তাঁদের আপ্যায়ন করে দ্বীপে নিয়ে যান।
[৬] গোটা দ্বীপে তখন কাজুকো একাই মহিলা ছিলেন। বাকি পুরুষেরা ছিলেন তরুণ। সকলেরই নজর পড়ে কাজুকোর উপর। ধীরে ধীরে তাঁরা জানতে পারেন, কাজুকো এবং হিনোশিটার বিয়ে হয়নি। জাহাজের সওয়ারিদের মধ্যে এক প্রবীণ পরামর্শ দেন, হিনোশিটার সঙ্গে কাজুকোর বিয়ে দেওয়া হোক। তা হলে বাকিরা নিজে থেকেই সরে যাবেন। সেই মতো সকলের উপস্থিতিতে কাজুকোর সঙ্গে হিনোশিটার বিয়ে হয়। কিন্তু সমস্যা মেটে না।
[৭] ১৯৪৬ সালের আগস্টে এই আনাতাহন দ্বীপের উপর দিয়ে যাচ্ছিল একটি আমেরিকার যুদ্ধবিমান। সেখান থেকে দ্বীপে পড়ে যায় পাঁচটি পিস্তল এবং ৭০ রাউন্ড গুলি। তার পরেই শুরু হয় গোলমাল। দেখা যেতে থাকে, দ্বীপে যে পুরুষ কাজুকোর কাছে আসতেন, তিনিই খুন হয়ে যেতেন। এক দিন দেখা গেল জাপানি জাহাজের ক্যাপ্টেনের দেহ সমুদ্রে ভাসছে। তার কিছু দিন পর দ্বীপ থেকে উদ্ধার হল দুই সেনার দেহ। দু’জনের দেহেই ছিল গুলির চিহ্ন। এর পরেই একে অপরের প্রতি সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠেন বাকি পুরুষেরা। কিছু দিন পর সকলেই বুঝতে পারেন, এই খুনের কেন্দ্রে রয়েছেন কাজুকো। তাঁর কাছে যাওয়ার জন্যই লড়াই করে মরছেন পুরুষেরা। ক্রমে বাড়তে থাকে সংঘাত।
[৮] পরের কয়েক মাসে কারও বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়। কেউ গাছ থেকে পড়ে মারা যান। কেউ বেমালুম গায়েব হয়ে যান। শেষে দ্বীপে পুরুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯। আর কাজুকো একা মহিলা। বাইরে যে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে, সেই খবরও জানতে পারেননি তাঁরা।
[৯] ১৯ জন মিলে ঠিক করেন কাজুকোকেই খুন করবেন। তা হলে নিজেদের মধ্যে আর লড়াই হবে না। সেই মতো পরিকল্পনাও করেন। সেই পরিকল্পনার কথা কাজুকোর কাছে ফাঁস করে দেন একজন। কাজুকো কোনও মতে পালিয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকেন। কয়েক সপ্তাহ জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার পর একটি আমেরিকান জাহাজ দেখতে পান তিনি। চিৎকার করে থামান সেটিকে। জাহাজে চেপেই ছাড়েন দ্বীপ। সময়টা ১৯৫০।
[১০] কাজুকো জাপানে ফিরে সকলকে জানান সেই দ্বীপের কথা। সেখানে কী ঘটেছিল, সে সব কথা। ওই দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে জাপান সরকার। শেষ পর্যন্ত ১৯ জনকে উদ্ধার করে আমেরিকার সেনা। শেষ হয় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ।
আইকে/একে
আপনার মতামত লিখুন :