বিশ্বজিৎ দত্ত : [২] এক্সে প্রকাশিত বিশ্বসূচকের হিসাবে বাংলাদেশ এই সময়ে বিশ্বের ৫ম অর্থনীতি সংকোচনের দেশ। যা সৌদিআরবের অর্থনীতি সংকোচনের সমান। একই সময়ে সৌদি আরবেও ৪৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি সংকোচন হয়।
[৩] অবশ্য (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) আইএমএফ ২০২৩ সালের আউটলুকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৪০ বিলিয়ন ডলার সঙ্কুচিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।
[৫] বিশ্বসূচক ও আইএমএফের হিসাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে রাশিয়ার। ২০২২-২৩ সালে রাশিয়ার অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে ১৫২ বিলিয়ন ডলারের। এরপরে রয়েছে মিশর। তাদের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে ৮৮ বিলিয়ন ডলার। কানাডার অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলার। নরওয়ের ২৫ বিলিয়ন ও আরব আমিরাতের ৮.৫৬ বিলিয়ন ডলার।
[৬] ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনীতি সংকোচনের বিষয়ে বিশ্বসূচক জানায়, ভারতের অর্থনীতি উদীয়মান তারা ধারবাহিকভাবে উন্নতি করেছে। করোনাকালে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা দ্রুত তা সামাল দেয় ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়।
[৭] পাকিস্তান সম্পর্কে বলা হয়, দেশটির অর্থনীতি মায়নাস ৫০০ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং এটি আলোচনায় আসেনি। যাদের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হওয়ার পরেও টিকে রয়েছে বা ঘুরে দাঁড়িয়েছে শুধু তাদের এই হিসাবে আনা হয়েছে।
[৮] বাংলাদেশের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হওয়ার কারণ হিসাবে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বিভিন্ন সময় তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে একাধিক বিষয় উল্লেখ করেছে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার অভাব, করোনা সময়ে অর্থনৈতিক অব্যস্থাপনা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিকতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অযাচিত ভর্তুকি। প্রয়োজনহীন বড় প্রকল্প গ্রহণ। সার্বিকভাবে তাদের মতে সামষ্ঠিক অর্থনীতির অব্যবস্থাপনায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
[৯] সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আত্মতুষ্টিতে ভুগে অর্থনীতির শর্তগুলো পুরণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, মূল্যস্ফীতির মতো ঘটনা ঘটেছে। তার মতে সারা বিশ্ব যখন সুদের হার বৃদ্ধি করে মুদ্রাস্ফীতি সামলের চেষ্টা করছে তখন বাংলাদেশ সুদের হার ধরে রেখেছে। এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তিনি রিজার্ভকে অন্যকাজে ব্যবহারেরও সমালোচনা করেন। তিনি মানব সম্পদ উন্নয়ন না করে অতি উচ্ছাসি অবকাঠামো উন্নয়নকে উন্নয়নের কংকাল বলে অভিহিত করেন।
[১০] সাম্প্রতিক বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার পরিস্থিতি এখনতো আরো আশংকাজনক। শ্রীলংকা ১৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। ইডিএফের অর্থ কমানো হয়েছে। অনেক বৈদেশিক পেমেন্ট ডেফার্ড করা হয়েছে। তার পরেও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটছেনা। তার মানে হলো আমরা বৈদেশিক মুদ্রার সংকট যতটা অনুমান করছি পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ। আর আমদানি নির্ভর একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া মানে হলো, আমদানি রপ্তানি দুটোই কমে যাওয়া। আর এগুলো কমে যাওয়ার মানে হলো, কর্মসংস্থান ও সেবাখাতের সংকট সৃষ্টি হওয়া। সুতরাং এটা থেকে খুব সহজেই দেশ বের হতে পারবেনা। আগের অবস্থায় যাওয়ার তো কোন উপায়ই নেই।