রাশিদুল ইসলাম: চীনের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় ও শহরে কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ চলছে তাতে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকার বিরোধী এই আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বিক্ষোভের খবর প্রচার করার জন্য বিবিসির এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন সময়ে সোমবার এক প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, মানুষকে সমবেত হওয়ার, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। জন কিরবি বলেন, হোয়াইট হাউস শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে সমর্থন করে। করোনার টিকার জন্য চীনের কাছ থেকে কোনো অনুরোধ পায়নি যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ‘শূন্য করোনা নীতির’ বিরুদ্ধে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমে বাড়তে থাকা ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপ নেয়। গত বৃহস্পতিবার দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশের উরুমকি শহরের একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ১০ জনের মৃত্যু হয়। বাসিন্দাদের ভবনে আটকে পড়া ও উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হওয়ার জন্য করোনার কঠোর বিধিনিষেধকে দায়ী করা হয়। এই ঘটনার জেরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। চীনে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভে শি জিন পিংয়ের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে বিক্ষোভকারীরা।
দিনভর বিক্ষোভকারীদের দমাতে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা যায় পুলিশকে। শনি ও রোববার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে চীনের একাধিক শহরের রাজপথ। তাদের দাবি, লকডাউন নয়, কাজ চাই। রোববার সাংহাই থেকে সেই বিক্ষোভের খবর সম্প্রচার করছিলেন বিবিসির সাংবাদিক এড লরেন্স। এরপরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে লরেন্সকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহ ধরে চিনে ফের হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। একটানা পাঁচদিন ধরে প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে একাধিক শহরে নতুন করে কোভিড বিধিনিষেধ আরোপ এবং আংশিক লকডাউনের পথে হাঁটতে চলেছে সরকার। উহানেও তেমনটাই হচ্ছে। এতেই খেপেছেন সাধারণ মানুষ। লকডাউনের বিভীষিকায় ফিরতে চান না কেউ। উহান-সহ একাধিক শহরে পথে নেমে, স্লোগান তুলে সে কথাই জানাচ্ছেন তারা।
চীনে সচরাচর এ ধরনের বিক্ষোভ দেখা যায় না। কারণ, সে দেশে সরকারের সমালোচনা করা মানেই কড়া শাস্তির মুখে পড়া। তবে সাম্প্রতিক কালে চীনের ‘জিরো কোভিড নীতি’ এতটাই সমস্যার কারণ হয়েছে, মানুষের অসন্তোষ আর বাঁধ মানছে না। তার জেরেই এই বিক্ষোভ।
জিরো কোভিড নীতি, অর্থাৎ করোনা রোগীর সংখ্যা দেশে একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, তার অন্যতম হাতিয়ার হল নানাবিধ বিধিনিষেধ এবং লকডাউন। লকডাউনের বিরুদ্ধে অনেকদিন থেকেই সমালোচনা করে আসছে দেশটির নাগরিক। কিন্তু সম্প্রতি কোভিড রোগীর সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করায় জিন পিং ফের জোর দিয়ে বলেন, চীন কোনওভাবেই এই নীতি থেকে সরে দাঁড়াবে না। এর ফলে পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে মানুষ।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই বিশ্বের প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মেলে। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চিনে। এর পর খুব দ্রুত বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এই মারণভাইরাস। বহু মানুষের মৃত্যু হতে থাকে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, ভ্রমণ বিধিনিষেধ শুরু হয় সারা বিশ্বে।
অভিযোগ, এখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশ কঠোর করোনা বিধি থেকে সরে এলেও, চীন ‘জিরো কোভিড নীতি’র নাম করে এখনও সেসব জারি রাখছে। ফলে মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না, কাজ হারাচ্ছে বহু মানুষ। এসবের মধ্যেই আবারও ফিরে এসেছে করোনা।