ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের এক দশকেরও বেশি সময় পর জাপানের পারমাণবিক জ্বালানি নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। দেশটির নিইগাতা প্রদেশ সোমবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কাশিওয়াজাকি-কারিওয়ারি পুনরায় চালুর অনুমোদন দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে জাপানের পারমাণবিক শক্তিতে প্রত্যাবর্তনের পথে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
টোকিও থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নিইগাতা প্রদেশের উপকূলে অবস্থিত কাশিওয়াজাকি-কারিওয়ারি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো)। উৎপাদন সক্ষমতার দিক থেকে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
২০১১ সালে জাপানে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। এর পরপরই নিরাপত্তাজনিত কারণে কাশিওয়াজাকি-কারিওয়ারিসহ দেশের সব ৫৪টি পারমাণবিক রিয়্যাক্টর বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফুকুশিমার সেই দুর্ঘটনাকে চেরনোবিলের পর বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
ফুকুশিমার ঘটনার পর দীর্ঘ সময় ধরে জনমত ও নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে জাপানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। তবে আমদানিনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য নিয়ে ধীরে ধীরে অবস্থান পরিবর্তন করছে দেশটি। বর্তমানে জাপানের ৩৩টি কার্যকর রিয়্যাক্টরের মধ্যে ১৪টি পুনরায় চালু হয়েছে। কাশিওয়াজাকি-কারিওয়ারি চালু হলে এটি হবে টেপকোর অধীনে পুনরায় চালু হওয়া প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
টেপকোর মুখপাত্র মাসাকাতসু তাকাতা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে যেন আর কখনো ফুকুশিমার মতো কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তার ভাষায়, নিইগাতার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের যেন এমন কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হতে হয়—এটাই টেপকোর প্রধান অঙ্গীকার।
তবে সব প্রস্তুতির পরও স্থানীয় জনগণের মধ্যে উদ্বেগ পুরোপুরি দূর হয়নি। নিইগাতার অনেক বাসিন্দার মনে এখনো ফুকুশিমার ভয়াবহ স্মৃতি তাজা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় চালু হলে সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে। এরই মধ্যে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে জাপানের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নীতি নিয়েও নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স