ভারতের মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমছে না। চলতি বছরজুড়ে রুপির দর ক্রমেই নিচের দিকে নামলেও সোমবার (১ ডিসেম্বর) তা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির মান নেমেছে ৮৯ দশমিক ৭৩-এ, যা মাত্র দুই সপ্তাহ আগের ৮৯ দশমিক ৪৯ এর পূর্বের সর্বনিম্ন মানকেও ছাড়িয়ে গেছে।
দেশটির শেয়ারবাজার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখলেও রুপি এবছর এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রাগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বাজারে ডলার সরবরাহ না করলে পতনের হার আরও বেশি হতো।
রুপির এই নিম্নগতি এমন সময় দেখা গেল, যখন ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশে-যা বহু সংস্থার পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি। কিন্তু অর্থনৈতিক শক্তি সত্ত্বেও মুদ্রাবাজারে প্রভাব তেমন পড়েনি।
ব্যাংক ও আর্থিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্যচুক্তিতে অগ্রগতি না হওয়া, আমদানিকারকদের ঝুঁকি–ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম এবং চলমান লেনদেন ঘাটতি-সবকিছু মিলেই রুপির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
সোমবার নন–ডেলিভারেবল ফরোয়ার্ড মার্কেটে বিভিন্ন চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টিও বাজারে প্রভাব ফেলেছে। এসময় রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে বেশ কয়েকবার ডলার বিক্রি করতে দেখা যায়।
জেপি মর্গানের অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে রুপির কিছুটা অবমূল্যায়ন যেমন স্বাভাবিক, তেমনি ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।
তাদের সতর্কবার্তা- যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যচুক্তি যতদিন ঝুলে থাকবে, রুপির ওপর চাপ ততই বাড়বে।
সম্প্রতি আশা ছিল যে ভারতীয় রপ্তানির ওপর আরোপিত ৫০ শতাংশ আমেরিকান শুল্ক কমতে পারে। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসায় তা রুপির পুনরুদ্ধারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুল্কসংক্রান্ত অনিশ্চয়তার প্রভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে; ফলে চলতি বছর ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি পুঁজি বেরিয়ে গেছে।
মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে তাই রিজার্ভ ব্যাংককে নিয়মিত হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।
এছাড়া গত অক্টোবরে ভারতের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো রুপির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। দি ইকোনমিক টাইমস, রয়টার্স