এল আর বাদল : এত প্রশংসা আর মেয়র হিসেবে প্রত্যাশার মাঝে কেউ কেউ এমনও বলছেন, অ্যামেরিকার ভবিষ্যৎ নেতা জোরান মামদানি। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে বিরাট বিজয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থকসহ দেশের মুসলিম শ্রমিক শ্রেণির মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন জোরান মামদানি।
নিউ ইয়র্কবাসী যেন দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিয়েছেন তরুণ এ রাজনীতিককে। বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউ ইয়র্ক সিটিতে মামদানির এ বিজয়কে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে নতুন ধারার সূচনা বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। --- বাংলা নিউইয়র্ক
এত প্রশংসা আর মেয়র হিসেবে প্রত্যাশার মাঝে কেউ কেউ এমনও বলছেন, অ্যামেরিকার ভবিষ্যৎ নেতা জোরান মামদানি। একই সঙ্গে কেউ কেউ আমেরিকার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কল্পনা করছেন তাকে। আসলে কি তিনি পারবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে?
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে কী কী শর্ত পূরণ করতে হয়?
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে হলে দুই ধরনের শর্ত পার হতে হয়। এর মধ্যে একটা অংশ সাংবিধানিক ও একটা অংশ অসাংবিধানিক, কিন্তু রাজনৈতিক। ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নেতাকে এই দুই ধাপ পার হয়ে ভোটের যুদ্ধে নামতে হয়, তবে রাজনৈতিক শর্তগুলোই সাধারণত দৃশ্যমান হয়।
আর সেগুলো হলো বড় রাজনৈতিক দলের (যেমন: রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির) মনোনয়ন। প্রাইমারি ইলেকশন বা পার্টি কনভেনশনের মাধ্যমে প্রার্থিতার নিশ্চয়তা।
রাজনৈতিক এ দুই ধাপ পার হওয়ার পরই অ্যামেরিকান নাগরিকরা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ওই রাজনৈতিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ—সবাই এ প্রাইমারি নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন।
জোরান মামদানিকে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে হলে এসব পথ অতিক্রম করতেই হবে, তবে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে যে পরিমাণ সমর্থন বা ভোট মামদানি পেয়েছেন, তাতে এ কথা বলাই যায় যে, জোরান মামদানি অনায়াসেই রাজনৈতিক এসব শর্ত পূরণ করতে পারবেন।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা -----
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে হলে শুধু রাজনৈতিক যোগ্যতাই যথেষ্ট নয়, তার জন্য প্রয়োজন রয়েছে কিছু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও। অ্যামেরিকার সংবিধানের আর্টিকেল টুর সেকশন ওয়ানে বলা আছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হলে প্রতিটি প্রার্থীর তিনটি প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমত, জন্মসূত্রে অ্যামেরিকার নাগরিক হতে হবে। অর্থাৎ যিনি নির্বাচন করবেন, তাকে অ্যামেরিকাতে জন্মগ্রহণ করতে হবে। অন্য কোন উপায়ে নাগরিকত্ব নিলে এ শর্ত পূরণ করবে না।
দ্বিতীয়ত, কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স হতে হবে। অর্থাৎ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থীর সর্বনিম্ন বয়সসীমা হলো ৩৫।
তৃতীয়ত, অ্যামেরিকায় অন্তত ১৪ বছর বসবাসের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। মোট ১৪ বছর দেশের ভেতরে বসবাস করতে হবে। সাংবিধানিক তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণে অযোগ্য হলে তিনি নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এবার দেখা যাক এসব শর্তের কতটুকু পূরণ করেন জোরান মামদানি। সাংবিধানিক প্রথম শর্ত অ্যামেরিকায় জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পূরণ করতে পারেন না নিউ ইয়র্কের মেয়র পদে জয়ী মামদানি। কারণ মামদানির জন্ম তার বাবার কর্মস্থল উগান্ডার কাম্পালায়। দ্বিতীয় সাংবিধানিক শর্ত অনুযায়ী প্রার্থীর বয়স হতে হয় ৩৫। মামদানির বর্তমান বয়স ৩৪ বছর।
আগামী চার বছর নিউ ইয়র্কের মেয়রের দায়িত্ব পালন শেষে তার বয়স হবে ৩৮। ততদিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হয়ে যাবে মামদানির।
তৃতীয় শর্ত অনুযায়ী, আমেরিকায় কমপক্ষে ১৪ বছর বসবাসের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সে অভিজ্ঞতার দিক থেকেও এরই মধ্যে মামদানি প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য, কিন্তু সাংবিধানিক প্রথম শর্ত পূরণ না করায় দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না জোরান মামদানি।
মামদানির মেয়রের দায়িত্ব থাকাকালে যদি অ্যামেরিকার সংবিধান সংশোধন হয়ে জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়ার শর্ত শিথিল বা বাতিল হয় তাহলে অবশ্যই তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য।
সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের দুই চেম্বারের তিন ভাগের দুই ভাগ সমর্থন লাগবে। একই সঙ্গে দুই তৃতীয়াংশ স্টেইটের সমর্থন পেতে হবে, যা খুবই জটিল বিষয়।