ভারতের প্রভাবশালী দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত ‘ওয়াচ ক্লোজলি: এডিটরিয়াল অন দ্য শিফট ইন বাইল্যাটারেল রিলেশন্স বিটুইন পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ইসহাক দার ঢাকায় তার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে বাণিজ্য, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর ইসলামাবাদ-ঢাকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নাটকীয় পরিবর্তনের সর্বশেষ পদক্ষেপ। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের স্রোত উল্লেখযোগ্যভাবে বদলে গেছে।
তবে ভারতের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো- মি. দারের বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি এবং ছাত্রনেতাদের একটি সংগঠনও ছিল, যারা শেখ হাসিনাকে হটানোর আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল। বাংলাদেশে ২০২৬ সালের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা।
এমন প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজনৈতিক ‘অ্যাক্টরদের’ সঙ্গে প্রকাশ্যে যোগাযোগ ভারতীয় কূটনীতির জন্য যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি বাংলাদেশের জন্যও তা ভাবনার বিষয়। শেখ হাসিনার বিরোধীরা বহু বছর ধরে তাকে ভারতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখেন। তার বিরুদ্ধে ১৫ বছরের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দমননীতির অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি তার ভারতঘেঁষা নীতির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ তৈরি হয়, যা একসময় প্রবল ভারতবিরোধী মনোভাবে রূপ নেয়।
এখন প্রশ্ন হলো, নির্বাচনের আগে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকার রাজনৈতিক মহলের সখ্য ভোটপ্রক্রিয়াকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? এতে আরও বলা হয়, বিশেষত জামায়াতে ইসলামী এখনও পর্যন্ত ১৯৭১ সালের গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়নি। বাংলাদেশের জনগণের বড় অংশই স্বাধীনতার পর জন্মালেও জাতিকে সেই রক্তাক্ত ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়ার প্রয়াসের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার আড়ালে যেন মুক্তিযুদ্ধের বেদনাদায়ক অধ্যায়কে ধুয়েমুছে ফেলার চেষ্টা না হয়।
অন্যদিকে, ভারতকেও নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। ঢাকায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে দিল্লির অবিশ্বাসের ইতিহাস থাকলেও বাস্তববাদী রাজনীতি ভারতকে নতুন কৌশল নিতে বাধ্য করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বারবার বাস্তববাদী ভূরাজনীতির ওপর জোর দিয়েছেন- এই মুহূর্তে বাংলাদেশ নিয়ে সেই বাস্তববাদই ভারতের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। কারণ, পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের জন্য নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি করছে, আর তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। অনুবাদ: মানবজমিন