নতুন প্রস্তাবে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট চাচ্ছেন, ইউক্রেন দনবাসের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছাড়ুক। এর পরিবর্তে, খেরসন ও জাপোরিজিয়ার বর্তমান সীমান্তে হামলা বন্ধ রাখবে মস্কো। রাশিয়া বর্তমানে দনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ আর খেরসন ও জাপোরিজিয়ার ৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, রাশিয়া ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি ও দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের ছোট ছোট দখলকৃত অংশ ছেড়ে দিতে রাজি। খবর: রয়টার্স
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে চারটি শর্ত দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিরি পুতিন। এগুলো হলো ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে, নিরপক্ষে থাকতে হবে এবং দেশে কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন রাখা যাবে। ক্রেমলিনের তিন সূত্রের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজ শহরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এটি ছিল চার বছরের মধ্যে প্রথম রুশ-মার্কিন শীর্ষ বৈঠক। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে তারা মূলত ইউক্রেন নিয়ে সম্ভাব্য সমঝোতার পথ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকের পর পুতিন বলেন, আশা করা যায় এ বৈঠক ইউক্রেনে শান্তির পথ খুলে দেবে। তবে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা বিস্তারিত জানাননি কোনো নেতাই।
ক্রেমলিনের সূত্র জানায়, পুতিন গত বছরের জুনে যে দখলের দাবি করেছিলেন তা থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। তখন তিনি চেয়েছিলেন, ইউক্রেন ডোনেস্ক ও লুহানস্ক (দনবাস), খেরসন ও জাপোরিজিয়াসহ চারটি প্রদেশ রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু তখন তা আত্মসমর্পণের সমতুল্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল ইউক্রেন।
নতুন প্রস্তাবে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট চাচ্ছেন, ইউক্রেন দনবাসের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছাড়ুক। এর পরিবর্তে, খেরসন ও জাপোরিজিয়ার বর্তমান সীমান্তে হামলা বন্ধ রাখবে মস্কো। রাশিয়া বর্তমানে দনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ আর খেরসন ও জাপোরিজিয়ার ৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, রাশিয়া ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি ও দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের ছোট ছোট দখলকৃত অংশ ছেড়ে দিতে রাজি।
তবে ন্যাটো ইস্যুতে পুতিনের অবস্থান অপরিবর্তিত। তিনি চান, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা বাতিল করুক। সেইসঙ্গে জোটের পক্ষ থেকে আইনি নিশ্চয়তা দেয়া হোক যে, ন্যাটো আর পূর্বদিকে সম্প্রসারিত হবে না। ইউক্রেনের সেনাশক্তি সীমিতকরণ ও দেশটিতে কোনো পশ্চিমা সেনা না রাখার প্রতিশ্রুতিও চাইছেন পুতিন।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন প্রস্তাব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইউক্রেনীয় জমি ছাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। সেইসঙ্গে ন্যাটোতে যোগদান দেশের সংবিধানে উল্লেখিত ও নিরাপত্তার প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের দনবাস থেকে সরে যাওয়ার দাবি রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। শান্তির নামে এমন প্রস্তাব কেবল ট্রাম্পের জন্য প্রদর্শনী হতে পারে, বাস্তব সমঝোতার ইঙ্গিত নয় বলেও অভিমত তাদের।
রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখল করছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, আলাস্কার বৈঠক এ পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো সুযোগ তৈরি করেছে, কারণ রাশিয়ার শর্তগুলো স্পষ্টভাবে আলোচনা হয়েছে এবং পুতিন কিছুটা ছাড় দিতে প্রস্তুত।
পুতিনের প্রস্তাব নিয়ে হোয়াইট হাউজ ও ন্যাটো এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে যুদ্ধ ও রক্তপাত বন্ধ করে শান্তির প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত হতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর এবার পুতিন ও জেলেনস্কির বৈঠকের আয়োজন করছেন তিনি। তার পর যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে তার।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত, তবে সব শর্ত আগে পরিস্কার করতে হবে। অন্যদিকে পুতিন সত্যিই যুদ্ধ শেষ করতে চান কি না তা নিয়ে পশ্চিমা নেতারা এখনো নিশ্চিত নন।
সূত্রগুলোর মতে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদন পাওয়ার মতো ত্রিপক্ষীয় (রাশিয়া-ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র) চুক্তি হতে পারে। আবার ২০২২ সালের ব্যর্থ ইস্তাম্বুল আলোচনার মতো নিরপেক্ষতার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রস্তাবও আলোচনায় থাকতে পারে। অনুবাদ: বণিকবার্তা।