শিরোনাম
◈ আমিরাতে ভিসা সংকটে বাংলাদেশি কর্মীরা: অনিশ্চয়তায় কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ◈ কিশোরগঞ্জে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে  যুবক নিহত আহত ৩০ ◈ সাড়ে ১৩ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা—সমাধান খুঁজতে কক্সবাজারে সম্মেলন ◈ ২০১৮ সালের নির্বাচনের বদনাম ঘোচাতে চায় পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার ◈ নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা ◈ জীবনের শেষ চিঠিতে যা লিখে গেছেন বিভুরঞ্জন ◈ দুবাইয়ে কোটিপতিদের স্রোত: কারণ কী?” ◈ বেনাপোল বন্দরে প্রথম চালানে ৩১৫ টন চাল আমদানি  ◈ মেঘনায় উদ্ধার হওয়া লাশটি সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের, নিশ্চিত করলেন স্বজনেরা ◈ জুলাই সনদ নিয়ে মতামত দিয়েছে ২৩টি দল

প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ০১:০৩ রাত
আপডেট : ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুবাইয়ে কোটিপতিদের স্রোত: কারণ কী?”

দুবাইসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোথাও আয়কর দিতে হয় না। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য শহরে যখন বিলাসী জীবন যাপন করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে, তখন দেশটিতে সহজেই এমন জীবনধারা উপভোগ করা যায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশেষ করে দুবাই শহর লম্বা সময় ধরে আশপাশের দেশের ধনীদের স্বাগত জানিয়ে আসছে। তবে এখন পশ্চিমা দেশগুলো থেকেও এখানে পাড়ি জমানো কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। কোটিপতিদের দুবাইয়ে স্থানান্তরে সহায়তাকারীরা এএফপিকে এমনটি জানিয়েছেন।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্তের কোটিপতিরা নজিরবিহীনভাবে আরব আমিরাতে পাড়ি জমাবেন। এ সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৯ হাজার ৮০০, যা বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।

আরব আমিরাতে নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ কড়া। দেশটি ধনীদের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অপরাধের নিম্নমুখী হার, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও অবাধ বিলাসিতার সুযোগ থাকায় দেশটি কোটিপতিদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য।
ধনী ও দক্ষ বিদেশিদের টানতে আরব আমিরাত গোল্ডেন ভিসা চালু করেছে। এর মাধ্যমে ১০ বছরের আবাসিক মর্যাদার সুযোগ পাওয়া যায়।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্কাইবাউন্ড ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান মাইক কোডি বলেন, তাঁর অনেক গ্রাহক মনে করেন, এখন নিজ দেশে সফল হওয়া যেন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোডি বলেন, নিজ দেশে ধনীদের ওপর একদিকে কর ও নজরদারি বাড়ানো হয়, অন্যদিকে সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হয়। অথচ দুবাইয়ে সম্পদ লুকানোর কিছু নেই; বরং সম্পদশালী হওয়া স্বাভাবিক বিষয়।

কোডি আরও বলেন, ‘লন্ডনে আমার গ্রাহকেরা ফিসফিসিয়ে নিজেদের সম্পদের কথা বলেন। তবে দুবাইয়ে তাঁরা মুক্তভাবে বাঁচতে পারেন।’

বিলাসী ইনফ্লুয়েন্সারদের শীর্ষ গন্তব্যও দুবাই। এখানে আছে বড় বড় শপিং মল, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন ও কৃত্রিম দ্বীপ ‘দ্য পাম’—যেখানে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে সারি সারি পাঁচতারকা হোটেল।

খুব দ্রুত ধনীদের পছন্দের জায়গায় পরিণত হওয়া দুবাই শহর নিয়ে সমালোচনাও আছে। স্বল্প বেতনের অভিবাসী শ্রমিকদের ঘামঝরানো পরিশ্রমে এখানকার অর্থনীতি টিকে আছে। কিন্তু সেখানে এসব শ্রমিক ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হন।

‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কম’
কোডি বলেন, তাঁর গ্রাহকদের বেশির ভাগই ৩০ থেকে ৪০ বছরের পেশাজীবী। তাঁদের কেউ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, কেউ পারিবারিক ব্যবসায় জড়িত, কেউ আবার পরামর্শক ও ফান্ড ম্যানেজার।

এমনই একজন একটি ক্লাউড সফটওয়্যার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। ৪২ বছর বয়সী এই ধনী ব্যক্তি নিজের কোম্পানি বিক্রির মূলধনি মুনাফার কর থেকে বাঁচতে ব্রিটেন থেকে আরব আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছেন।

কোটিপতিদের দেশ ছাড়ার দিক থেকে বর্তমানে শীর্ষে ব্রিটেন। ‘নন-ডম’ স্ট্যাটাসধারীদের অনেকেই দেশ ছাড়ছেন। নন-ডম স্ট্যাটাস বলতে বোঝায়, ব্রিটেনে থাকলেও যাঁদের স্থায়ী নিবাস ভিন দেশে। একসময় এসব মানুষকে তাঁদের বৈদেশিক আয়ের ওপর কর দিতে হতো না। এখন তাঁরা কঠোর করনীতির মুখে পড়ছেন।

করসংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি উত্তরাধিকারবিষয়ক নীতিতে কড়াকড়ি ও ধন–বৈষম্য নিয়ে উচ্চবাচ্যের কারণে ব্রিটেন এ বছর রেকর্ড ১৬ হাজার ৫০০ জন কোটিপতি হারাতে চলেছে বলে জানিয়েছে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স।

চলতি বছর ব্রিটেন ছেড়ে আরব আমিরাতে পাড়ি জমানো কোটিপতিদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি জন ফ্রেডরিকসেন। নরওয়ের গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘ব্রিটেন নরকে পরিণত হয়েছে’। তাই তিনি আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছেন।

‘বিল্ডিং ওয়েলথ উইদাউট বর্ডারস’ পডকাস্টে নিজের দুবাইয়ে আসা প্রসঙ্গে প্যাডকো রিয়েল এস্টেটের প্রধান নির্বাহী ম্যাক্স ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘আমরা সবাই নিজেদের পছন্দসই একটা জীবনধারার খোঁজে থাকি।’

যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে পরিবারসহ আমিরাতে পাড়ি জমানোর পর এই উদ্যোক্তা দেখেছেন, একই অর্থ ব্যয় করে সেখানে তাঁর পরিবার আগের চেয়ে ভালো জীবন যাপন করতে পারছে।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের দুবাই অফিসের ফিলিপ আমারান্তে বলেন, ধনীরা তাঁদের সম্পদ ও বিলাসী জীবনধারা ধরে রাখতে চান। তাঁরা ব্যবসার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়তে চান না। এ ক্ষেত্রে আরব আমিরাতের বার্তা স্পষ্ট। দেশটি জানিয়েছে, তারা ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।

কোডি বলেন, ‘আমার গ্রাহকদের কাছে সংযুক্ত আরব আমিরাত যেন একেবারে যুতসই জায়গা।’

‘একটি পুরো ভবন কিনে নাও’
রিয়েল এস্টেট গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাইট ফ্রাঙ্কের মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের প্রধান ফয়সাল দুররানি বলেন, ধনী পরিবারগুলো শুধু বসবাসই নয়, এখন তাদের ব্যবসা আর ব্যক্তিগত অফিসও দুবাইয়ে নিয়ে আসছে, যা আগে দেখা যায়নি।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের হিসাব অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি কোটিপতি আছে, বিশ্বের এমন ২০টি শহরের একটিতে পরিণত হয়েছে দুবাই। শহরটিতে বর্তমানে ৮১ হাজার ২০০ কোটিপতি ও ২০ জন শতকোটিপতি বসবাস করেন।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্যমতে, গত বছর দুবাইয়ে ১ কোটি ডলার বা এর বেশি মূল্যের ৪৩৫টি বাড়ি বিক্রি হয়েছে। অথচ নিউইয়র্ক ও লন্ডনে যৌথভাবে এর চেয়ে কম বিক্রি হয়েছে। উচ্চমূল্যের সম্পত্তির বাজারে এটিই এখন সবচেয়ে ব্যস্ততম শহর। পশ্চিমা দেশের তুলনায় আরব আমিরাতে এসব সম্পত্তি তুলনামূলক সস্তা।

দুররানি বলেন, ‘মোনাকো আর সুইজারল্যান্ডের ক্রেতারা আমাদের কাছে ১০ কোটি ডলারে দুবাইয়ে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে চান। কিন্তু দুবাইয়ে ওই দামে পুরো একটি ভবন কেনা সম্ভব।’ উৎস: প্রথম আলো।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়