ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বুধবার সকালে বিচার বিভাগের প্রধান ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইরানি জাতির ভূমিকা ছিল এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই লড়াই ছিল সাহস, দৃঢ় সংকল্প ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
তিনি বলেন, এটা থেকে প্রমাণিত হয় ইরানি জাতি যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের শিকলে বাঁধা কুকুর ইসরায়েলের মতো শক্তির মুখোমুখিও হতে প্রস্তুত থাকে। এই মানসিকতা অত্যন্ত মূল্যবান।
তিনি সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইরানি জাতির মহান ভূমিকার প্রশংসা করার পাশাপাশি আগ্রাসীদের হিসাব-নিকাশ ও পরিকল্পনার ব্যর্থতার ওপর আলোকপাত করেন। নানা ধরণের মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও দেশ রক্ষায় ইরানি জাতির ঐক্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ঐক্য ধরে রাখা সবার দায়িত্ব।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমরা কখনো কোনো লড়াইয়ে দুর্বল অবস্থানে থাকি না। কূটনৈতিক হোক বা সামরিক, প্রতিটি ময়দানে আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় ভালোভাবে প্রবেশ করি। আমাদের হাতে যেমন যুক্তি আছে, তেমনি শক্তিশালী সামরিক সক্ষমতাও রয়েছে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আমরা ইহুদিবাদী ইসরায়েলকে ক্যান্সার এবং ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে আমেরিকাকে অপরাধী হিসেবে মনি করি, কিন্তু এরপরও আমরা যুদ্ধকে স্বাগত জানাইনি। কিন্তু যখন শত্রু হামলা চালিয়েছে, আমরা শক্ত জবাব দিয়েছি।
যদি ইহুদিবাদী ইসরায়েল ভেঙে না পড়তো এবং আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হতো, তাহলে তারা আমেরিকার কাছে আশ্রয় নিত না, তারা বুঝতে পেরেছে যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে মোকাবেলা করার ক্ষমতা তাদের নেই।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, আমেরিকার যে ঘাঁটিতে আমরা পাল্টা হামলা চালিয়েছি, তা এই অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর কেন্দ্র। একসময় সংবাদমাধ্যমের ওপর থেকে সেন্সরশিপ উঠে গেলে সবাই বুঝতে আমাদের আঘাত কতটা ভয়াবহ ছিল। প্রয়োজনে এর চেয়েও বড় আঘাত আমরা হানতে পারি।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী সাম্প্রতিক যুদ্ধে জাতীয় চেতনার উত্থান এবং শত্রুর ষড়যন্ত্র ভেস্তে দেওয়াকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, শত্রুদের পরিকল্পনা ছিল এমন যে, ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংবেদনশীল স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ব্যবস্থাকে দুর্বল দিতে পারবে। এরপর তাদের মুনাফিক, রাজতন্ত্রপন্থী ও দুর্বৃত্ত ভাড়াটে বাহিনীকে মাঠে নামিয়ে সাধারণ জনগণকে উত্তেজিত করে রাস্তায় নামিয়ে আনতে পারবে এবং এভাবে পুরো ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাস্তবে ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটেছে এবং প্রমাণিত হয়েছে রাজনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অনেকের ধারণাও ভুল ছিল।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, শত্রুর আসল রূপ, তাদের ষড়যন্ত্র ও গোপন উদ্দেশ্য জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং জনগণকে সরকার ও ইসলামি ব্যবস্থার পাশে দাঁড় করিয়েছেন। শত্রুর ধারণার বিপরীতে জনগণ জানমাল দিয়ে এই ব্যবস্থাকে সমর্থন ও রক্ষা করেছে।
তিনি বলেন, আলাদা আলাদা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক অবস্থানের মানুষদের একই সুরে কথা বলা এবং এক কাতারে দাঁড়ানোর ঘটনায় বিশাল জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছে। এসব মানুষের অনেকে একে অপরের বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির ছিলেন। এই মহান ঐক্য রক্ষা করা একান্ত জরুরি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, কর্মকর্তাদের উচিত দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে দায়িত্ব পালন করা। সকলের জানা উচিৎ- আল্লাহ কুরআনের আয়াতে বলেছেন-“আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন, যে তাকে সাহায্য করে”। এই আয়াত অনুযায়ী ইসলামী ব্যবস্থা এবং কুরআন ও ইসলামের ছায়াতলে থাকা ইরানি জাতির জন্য আল্লাহ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই জাতি অবশ্যই বিজয়ী হবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও ব লেন, সাম্প্রতিক যুদ্ধে জায়োনিস্ট ইসরাইল যেসব অপরাধ করেছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। বিচার বিভাগকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আদালতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও সতর্কতার সাথে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।
আজকের বৈঠকের শুরুতে বিচার বিভাগের প্রধান হুজ্জতুল ইসলাম মোহসেনি এজেয়ি বিচার বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশ করেন।