মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির মুখে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্রেট নেতা জাওহরান মামদানি। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি মামদানিকে গ্রেপ্তার করবেন। এর জবাবে মামদানি স্পষ্টভাবে বলেছেন, "আমি এই ভয়ভীতি মেনে নেবো না।" এই ঘটনাটি নিউ ইয়র্কের স্থানীয় রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং জাতীয় পর্যায়েও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত
মঙ্গলবার ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে জয়লাভ করে মেয়র পদের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন জাওহরান মামদানি। এর পরপরই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তাকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। অভিবাসন সংক্রান্ত এক গোলটেবিল আলোচনায় ট্রাম্প মামদানিকে "পাগল", "খাঁটি কমিউনিস্ট" এবং "সম্পূর্ণ পাগল" বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্প বলেন, "আমরা ওকে ধরে ফেলবো। আমরা আমাদের দেশে এমন লোক চাই না। তাকে নজরদারির মধ্যে রাখবো। অনেকে বলছেন সে অবৈধভাবে এখানে আছে। আমরা সব খতিয়ে দেখবো।"
ট্রাম্পের মূল হুমকিটি ছিল মামদানির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে। মামদানি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন। এর জবাবেই ট্রাম্প তাকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন।
মামদানির পাল্টা জবাব
ট্রাম্পের এ ধরনের হুমকির পর জাওহরান মামদানি একটি কঠোর বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, "মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমাকে গ্রেপ্তার, নাগরিকত্ব বাতিল, বন্দিশিবিরে পাঠানো এবং দেশ থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছেন। এসব করেছেন শুধু এজন্য যে আমি আইসিই’কে আমাদের শহরে সন্ত্রাস চালাতে দেবো না।"
তিনি আরও বলেন, "এই বক্তব্য শুধু আমাদের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত নয়, বরং প্রতিটি নিউ ইয়র্কবাসীর জন্য একটি বার্তা—যদি তুমি মুখ খোল, তারা তোমার দিকেই আসবে।"
বর্তমান মেয়রের সঙ্গে তুলনা
মামদানি তার বিবৃতিতে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের সঙ্গে ট্রাম্পের সখ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "ট্রাম্প যেভাবে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রশংসা করছেন, তা উদ্বেগজনক। যদিও অ্যাডামস ডেমোক্রেট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।"
মামদানির মতে, যখন "মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন" (মেগা) রিপাবলিকানরা দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চাইছে, তখন অ্যাডামস ট্রাম্পের বিভাজন ও ঘৃণার রাজনীতিরই প্রতিধ্বনি করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, নিউ ইয়র্কের জনগণ আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে এই রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করবে।
জাওহরান মামদানি: এক উদীয়মান নেতা
৩৩ বছর বয়সী জাওহরান মামদানি উগান্ডায় এক দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্ক রাজ্যের একজন অ্যাসেম্বলি সদস্য।
মামদানি তার কার্যকর ও কৌশলী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের জন্য সুপরিচিত। তার ভিডিও বার্তাগুলো লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছেছে এবং তাকে একজন "উদীয়মান সমাজতান্ত্রিক নেতা" হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। তার প্রচার শিবির সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমরা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা ভেঙে দিয়েছি। আমরা এমন ভোটারদের কাছে পৌঁছেছি, যাদের অনেকেই হারিয়ে গিয়েছিলেন।"
বিতর্ক ও ভবিষ্যৎ
রিপাবলিকানদের একটি অংশ মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, কারণ তিনি তুলনামূলকভাবে সম্প্রতি নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে মামদানির প্রচার শিবির এই বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্প ও মামদানির এই হুমকি ও পাল্টা জবাব ২০২৫ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের গতিপথকে অনেকটাই প্রভাবিত করতে পারে। একটি স্থানীয় নির্বাচন এখন জাতীয় রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যা মামদানির প্রোফাইলকে আরও শক্তিশালী করেছে। নির্বাচিত হলে তিনি হবেন নিউ ইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র।
সূত্র: এনডিটিভি অনলাইন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।