ইরানের সামরিক বাহিনী গত মাসে পারস্য উপসাগরে তাদের নৌযানে সামুদ্রিক মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল—এমন তথ্য পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বেড়েছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছিল, ইসরায়েলের হামলার জবাবে সে সময় হরমুজ প্রণালি অবরোধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তেহরান। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কর্মকর্তা গোপন গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এই অজানা প্রস্তুতির বিষয়টি গত ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর শনাক্ত করা হয়। হরমুজ প্রণালিতে এসব মাইন এখনো ব্যবহার করা হয়নি, তবে এ প্রস্তুতি ইঙ্গিত দেয় যে ইরান বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এ বাণিজ্যপথ বন্ধ করার বিষয়ে সত্যিই অগ্রসর হতে চেয়েছিল। এই পদক্ষেপ ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা আরও জটিল করত এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের ধাক্কা দিত। বিশ্বের মোট জ্বালানি তেল ও গ্যাস পরিবহনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ হরমুজ প্রণালি দিয়ে যায়।
২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর পরপরই ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা নিয়ে একটি প্রস্তাবের পক্ষে রায় দেয়, যদিও এটি মানা বাধ্যতামূলক ছিল না। ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদই প্রণালি বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ইরান এর আগেও বহুবার প্রণালি বন্ধের হুমকি দিলেও তা কখনো কার্যকর করেনি।
কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এই মাইন লোডিংয়ের তথ্য পেয়েছে, তা বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, স্যাটেলাইট ছবি, মানব গোয়েন্দা বা দুটির সমন্বয়ে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'অপারেশন মিডনাইট হ্যামার' এবং হুতিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযানের কারণে হরমুজ প্রণালি এখন উন্মুক্ত এবং সেখানে অবাধে নৌ চলাচল নিশ্চিত হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইরানের এ মাইনবোঝাই পদক্ষেপ হয়তো শুধু একটি কৌশলও হতে পারে—তেহরান হয়তো বোঝাতে চেয়েছে যে তারা প্রস্তুত, কিন্তু আসলে তা করতে চায়নি। হরমুজ প্রণালি ওমান ও ইরানের মধ্যবর্তী জলসীমা, যা পারস্য উপসাগরকে গালফ অব ওমান ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এটি বিশ্বের অন্যতম কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ জলপথ।
২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের কাছে পাঁচ হাজারের বেশি সামুদ্রিক মাইন ছিল, যা ছোট ও দ্রুতগামী নৌযানের মাধ্যমে দ্রুত স্থাপন করা সম্ভব। বাহরাইনে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহরের মূল দায়িত্ব হলো এ অঞ্চলের বাণিজ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক আক্রমণের আশঙ্কায় বাহরাইন থেকে সব মাইন পরিষ্কারকারী জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, হরমুজ প্রণালী ওমান ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত। এটি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। সবচেয়ে সংকীর্ণ জায়গায় এটি মাত্র ২১ মাইল চওড়া এবং একদিকে জাহাজ চলাচলের জন্য ২ মাইল করে নির্ধারিত। এই প্রণালী দিয়েই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাক তাদের বেশিরভাগ তেল রপ্তানি করে। কাতারও এখান দিয়ে বিশ্ববাজারে গ্যাস পাঠায়। তেহরান নিজেও এই পথ দিয়ে তেল রপ্তানি করে, তাই এই প্রণালী বন্ধ করলে ইরান নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবুও ইরান অনেক বছর ধরে এই রুট বন্ধ করার সক্ষমতা গড়ে তুলেছে।