ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ইসরায়েলের চালানো হামলায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজ। খবর বিবিসি'র
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্য ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোর্ডো। এই কেন্দ্রটি প্রায় ৩০০ ফুট গভীরে একটি পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাব্য স্থল হিসেবে বিবেচিত।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এই বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন নেই।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টি আলোচিত হওয়ার কথা ছিল।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ।
ইরান ইসরায়েলের হামলার পর দাবি করেছে যে, তারা দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে এই বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছিল যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রযোজ্য ইউরেনিয়ামের মজুদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
ইরান সরকার দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্যে শান্তিপূর্ণ।
ট্রাম্প প্রশাসন জনসমক্ষে এবং গোপনে জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আক্রমণে জড়িত নয়।
যদিও সিবিএস নিউজ আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পাল্টা হামলার প্রতিরোধে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে।
প্রসঙ্গত, টানা ছয়দিন ধরে ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ' দাবি করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অবস্থান জানে।
তিনি এও লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাকে (খামেনি) হত্যা করবে না। তবে ইরানের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের' দাবি জানায়।
ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, 'আমরা জানি তথাকথিত 'সর্বোচ্চ নেতা' কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি একটি সহজ লক্ষ্য, তবে তিনি নিরাপদ। আমরা তাকে বাইরে বের করে আনতে যাব না (হত্যা করব না), অন্তত এখনই নয়। কিন্তু আমরা চাই না ইরান সাধারণ নাগরিকদের বা মার্কিন সেনাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করুক। আমাদের ধৈর্য শেষ হয়ে আসছে। এ বিষয়ে আপনার মনযোগের জন্য ধন্যবাদ।'
এর কয়েক মিনিট পর ট্রাম্প আবারও একটি পোস্ট করেন। সেখানে ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখেন, 'আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার' বা 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ'।
এর প্রায় ৩০ মিনিট আগে ট্রাম্প পৃথক একটি পোস্টে বলেছিলেন, 'আমরা এখন ইরানের আকাশ পুরোপুরি এবং সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।'
অন্যদিকে, ট্রাম্পের এই হুমকির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, 'মর্যাদাবান হায়দারের নামে,যুদ্ধ শুরু হলো।'
'হায়দার' হচ্ছে ইসলামের চতুর্থ খলিফা ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচাতো ভাই ইমাম আলী (রা.)-এর আরেক নাম। ইরানসহ শিয়া মুসলিমরা তাকে তাদের প্রথম ইমাম হিসেবে মানেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খামেনিকে নিয়ে মন্তব্য করার পর এটি ছিল তার প্রথম প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া।
ইরানের এ সর্বোচ্চ নেতা আরেক পোস্টে বলেন, 'আমাদের সন্ত্রাসী জায়নবাদী [ইসরায়েল] শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। আমরা জায়নবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।'
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ইরান বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের ২২৪ জনের বেশি নাগরিক নিহত এবং এক হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা তেহরানে একটি সেন্ট্রিফিউজ স্থাপনাসহ অস্ত্র মজুদের বিভিন্ন স্থাপনায় রাতভর হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে, ইরানও ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
রাতের বেলায় ইসরায়েলে দুই দফায় সাইরেন বেজে ওঠে। তবে তেহরানের হামলার মাত্রা অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিবিসির হুগো ব্যাচেগা।