শিরোনাম
◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ ◈ শ্রীলঙ্কার প্রতি বাংলা‌দে‌শের সমর্থন, চোখ এড়ায়নি লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের ◈ আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের ফল যেমন হলে লাভ বাংলাদেশের ◈ নির্বাচনী দায়িত্বে অপরাধের সাজা বাড়ছে: অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন ◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিএনপি : সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:৪৫ রাত
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, এ দেশে উন্নয়নের জন্য প্রকল্প করা হয় না, দুর্নীতির জন্য প্রকল্প করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক ধারাবাহিক আয়োজনের অংশ হিসেবে, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এর আয়োজিত ‘নিরাপত্তা, দুর্নীতি ও জ্বালানি’ বিষয়ক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।  

উপদেষ্টা বলেন, আইন করা হয় দুর্নীতি থামানোর জন্য। কিন্তু এদেশে আইন ও নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে দুর্নীতি করা হয়েছে। আমরা জ্বালানি খাতে দুর্নীতির কাঠামো ভেঙে দিয়েছি। ৩.২ বিলিয়ন বকেয়া ছিল জ্বালানি খাতে। অনেক বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। আমরা প্রতিযোগিতা আবারও চালু করেছি। তেল নিতে হলে আগে রিফাইনারি মালিক হতে হতো। এটি আমরা বাদ দিয়েছি। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও প্রকল্প আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। রোজার সময় সাধারণত লোডশেডিং হয়। এখন কমেছে। এতে বোঝা যায়, লোডশেডিং কমানো সম্ভব।

আমরা চেষ্টা করছি আগামী সরকারের যেন পরিবর্তন আনতে সুবিধা হয়। এ টেমপ্লেট আমরা তৈরি করছি। এখন পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে না। আগে এ জায়গায় অনেক দুর্নীতি হতো। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির নীতি তৈরি করেছি। দুর্নীতির বিষয়ে আমরা আমাদের কাজে সন্তুষ্ট নই। একটি বড় সমস্যা হলো, অনেকেই চান দুর্নীতি থাকুক যাতে তারা এর থেকে সুবিধা নিতে পারেন। শুধু অতীতের নয় বর্তমানের দুর্নীতি থামানোর দিকেও নজর দিতে হবে। এ দেশে উন্নয়নের জন্য নয়, বরং দুর্নীতির জন্য প্রকল্প করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সিকিউরিটির পাঁচটি তাত্ত্বিক দিক হচ্ছে- রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি ও সমাজ। সিকিউরিটি অব দ্য পিপল নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। মানুষের নিরাপত্তা না থাকলে সেই রাষ্ট্র অর্থহীন। নতুন টেকনোলজি বা সাইবার সিকিউরিটি আমাদের নিরাপত্তার ধারণা পাল্টে দিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়া, ফেক নিউজ, ফ্যাক্ট চেক এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ও আমাদের জন্য নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসেবে তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জ্বালানি আমাদের জন্য নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করছে।

আমাদের কনভেনশোনাল চিন্তা- ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা এখনও সব বিষয়ে ঐকমত্য হতে পারি নি। সব বিষয়ে ঐকমত্য হলে সেখানে সন্দেহ তৈরি হয়। তাই আমাদের ডাইভারসিটিকে জায়গা দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে। অধৈর্য হওয়া যাবে না। আধুনিক যুগে আমরা প্রবেশ করেছি, আমাদের চিন্তা- ভাবনাও আধুনিক করতে হবে। ইনডেমনিটি আইন দ্বারা জ্বালানি খাতে দুর্নীতি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এলএনজি খাতে দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।

সংলাপের শুরুতে সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজ এর সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ একটি বড় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে বলেছেন যে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে নিরাপত্তা সংকট তৈরি হতে পারে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। ২০০৭- ২০০৮ সালে সংস্কার শুরু হয়েছিল কিন্তু তা ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পরে সংস্কার আবারও শুরু হয়েছে। দুর্নীতি আমাদের দেশে অনেক সময় ধরেই আছে। জ্বালানির সঙ্গে দুর্নীতি ও নিরাপত্তা জড়িত। উপদেষ্টাদের কেউ বা এ সরকারের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কেউ কোনো শব্দ করে না, কথা বলে না। 

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এজন্য দরকার কার্যকর গণতন্ত্র। আমাদের রাজনীতি ও নির্বাচন অঙ্গনকে পরিষ্কার করতে হবে। দুর্নীতির মূল চালিকা শক্তি হলো টাকা। আমাদের টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে ছিল তখন তারা সিকিউরিটির ওপর গুরুত্ব বেশি দিয়েছিল। দুর্নীতি দমনে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। দুর্নীতিতে গুরুত্ব দেওয়াটা দরকার ছিল। আইন থাকা সত্ত্বেও গত তিনটি নির্বাচন ঠিক মতো হয় নাই। রাজনীতিকে দুর্নীতি মুক্ত না করতে পারলে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অবসর) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, জুলাই বিপ্লবোত্তর অনেক কমিশন করা হলেও, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো কমিশন করা হয়নি। জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো কৌশল নেই। পানি নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে। পানি নিয়ে যে সমস্যা আছে তা সমাধান না করা হলে আমরা সমস্যায় পড়বো। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এটি নিরাপত্তার হুমকি না, আমাদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আরও আলোচনা করতে হবে। সীমান্তে মানুষ হত্যা নিয়ে বিগত ও বর্তমান সরকারের সময়ে জোরাল কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তায় অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। 

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমাদের থ্রেট অনেক বেশি। এগুলো একে অপরের সঙ্গে জড়িত, আলাদা নয়। আমরা ২২টা সমস্যাকে চিহ্নিত করেছি। এগুলো সমাধান করলে আমাদের উন্নতি হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার, জ্বালানি সমস্যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুর্নীতি রোধ করতে পারলে সামগ্রিকভাবে আমাদের উপকার হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনই এখন দুর্নীতি করে থাকে। পুলিশের মধ্যেও দুর্নীতি হচ্ছে। অনলাইন সার্ভিসের মধ্যে চলে আসলে দুর্নীতি অনেক কমে যাবে।

সাবেক কূটনৈতিক এম শফিউল্লাহ বলেন, স্নায়ু যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করছি। এর বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্র বারবার ক্রিটিসাইজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সেই রাষ্ট্রটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জাতীয় স্বার্থ নির্ণয় করতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা চলছে যা দীর্ঘমেয়াদে খারাপ প্রভাব ফেলবে। দেশের স্বার্থের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)- এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গিয়েছি যে, তারা জ্বালানি নিরাপত্তা তাদের ইস্তেহারে কীভাবে নিশ্চিত করবে। কিন্তু আমি কোনো উত্তর পাইনি তাদের কাছ থেকে। আমাদের জ্বালানি সেক্টরকে আমদানি নির্ভর করার চেষ্টা করা হচ্ছে গত ১৫ বছর ধরে।  

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, বিগত সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা নিজেরাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। বর্তমান সরকারকে আমরা বসিয়েছি বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন করার জন্য। আইন আরও করতে হবে এবং তা প্রয়োগ করতে হবে। টাকার খেলা ও পেশীর খেলা বন্ধ করতে হবে। অসীম নির্বাহী ক্ষমতা বন্ধ করতে হবে।

নাজমুল হক প্রধান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করে আসছি। ভিন্ন মতকে কেউ নিতে পারে না এখন। ভিন্ন মতকে শ্রদ্ধা করতে হবে।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে দলগুলো মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। প্রধান উপদেষ্টা চেষ্টা করেছে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করার। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কেবল সরকার না, রাজনৈতিক দলগুলোকেও আলোচনা করতে হবে। 

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, পানি নিরাপত্তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ভেতর থেকে আমরা নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করতে পেরেছি তা গুরুত্বপূর্ণ। ভেতরে স্টাবিলিটি নিশ্চিত করতে হবে যেন ভারত ইন্টারফেয়ার না করতে পারে। 

ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন ১২ বার হয়েছে। নির্বাচনের মধ্যেও জনগণের কোনো আশা পূরণ হয়নি। পুলিশ বাহিনীর ৮০ শতাংশ এখনও আওয়ামী লীগের লোক। পুরনো সেটআপ বহাল থাকলে বর্তমানে কোনো পরিবর্তন হবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হতে হবে। 
ফজলুল করীম মারুফ বলেন, আমাদের তথ্য অধিকার আইন সংস্কার করার জন্য সুপারিশ করা হয় কিন্তু তা হয়নি। এটি ব্রিটিশ আমলের আইন। 

ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে নিরাপত্তার সরল রৈখিক সম্পর্ক রয়েছে। এর ওপর আরও গবেষণা দরকার। 
সাফকাত মুনির বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। জাতীয় নিরাপত্তাকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করতে হবে। প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। 

এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার পত্রিকার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের দেশে সব অর্জন এসেছে রাজনীতিবিদদের হাত ধরে। সুতরাং আমাদের রাজনীতিবিদদের ওপর কিছুটা হলেও আস্থা রাখতে হবে। আমাদের প্রতিটা খাত দুর্নীতিগ্রস্ত। একটি মসজিদ কমিটির সদস্য হতে হলে দুর্নীতি করা লাগে। দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ আসে, এ সম্পদ একজন মানুষকে সমাজে নিরাপত্তা দেয়। তাই তারা দুর্নীতি করার উপায় খুজতে থাকে। জ্বালানি খাতে আমদানি কমাতে হবে। জ্বালানি খাতে নিলামের মাধ্যমে উদ্যোক্তা নির্বাচন করতে হবে। এতে দুর্নীতি কমবে।  

ইনাম আহমেদ বলেন, গত ১৬ বছরে ইচ্ছামতো টাকা লুটপাট ও সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। কারণ গণতন্ত্র অনুপস্থিত ছিল। পত্রিকার কোনো স্বাধীনতা ছিল না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়