শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন কি পরমাণু আলোচনা করবে ইরান? ◈ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র ◈ আবারও ইসরায়েলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ইরানি ড্রোন ◈ ইসরায়েলে হামলায় ইরানে আনন্দমিছিল ◈ ইসরায়েলকে যারা রক্ষার চেষ্টা করবে তারা হবে পরবর্তী টার্গেট, ইরানের হুমকি ◈ ভিসা জটিলতায় থমকে বাংলাদেশি পর্যটন, বিদেশ ভ্রমণে বড় বাধা অবৈধ অবস্থান ও ওভারস্টে ◈ বাবর, রিজওয়ান ও শা‌হিন আ‌ফ্রিদি ছাড়াই বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান  ◈ বাংলাদেশের পদ্ধ‌তি অনুকরণ করতে চায় ভারত ◈ আসামের ধুবড়ি নিয়ে ‘বাংলাদেশে যুক্ত করার’ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর, জেলায় শুট অ্যাট সাইট নির্দেশ ◈ তেলআবিব ও জেরুজালেমে বিশাল বিস্ফোরণ, ফের ইসরাইলে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইরান!

প্রকাশিত : ১২ জুন, ২০২৫, ১০:২১ রাত
আপডেট : ১৪ জুন, ২০২৫, ১২:৩৭ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

ভারত-পাকিস্তান কি নৌ যুদ্ধে জড়াচ্ছে?

মহসিন কবির: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে স্থল ও বিমান যুদ্ধের পর এবার দুদেশের মধ্যে নৌ যুদ্ধ লাগতে পারে। মুখোমুখি সংঘাতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে পারে তাদের নৌবাহিনী। আল জাজিরাকে এমন কথা জানান বিশেষজ্ঞরা। যেমনটা হয়েছিল দুই দেশের মধ্যকার ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধে। গত ৩০ মে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত পরিদর্শনের সময় বলেন, ‘সাম্প্রতিক যুদ্ধের সময় ভারতীয় নৌবাহিনীকে ডাকা হয়নি, এটা পাকিস্তানের সৌভাগ্য।’

‘নীরব থেকেও, ভারতীয় নৌবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আটকে ফেলতে সফল হয়েছে। যদি কেউ নীরব থেকেও একটি দেশের সেনাবাহিনীকে বোতলে বন্দী রাখতে পারে, তাহলে সরব হলে কী হতে পারে?’ এর মাত্র দুই দিন পরে, এক জুন, পাকিস্তান নৌবাহিনী একটি স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানায়। সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায়, দুই দিনের মহড়ার ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। এতে পাকিস্তানের সব প্রধান বন্দর এবং বন্দরজুড়ে হুমকি মোকাবিলার উপর জোর দেয়া হয়। গত মে মাসের যুদ্ধে নৌবাহিনী মূলত নিষ্ক্রিয় পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকলেও, তারা একে অপরের গতিবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। প্রয়োজন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও প্রস্তুত ছিল।

স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, পেহেলগাম হামলার পরপরই আইএনএস বিক্রান্ত পাকিস্তানের দিকে অগ্রসর হয় এবং কর্ণাটকের ঘাঁটিতে ফিরে আসার আগে চার দিন আরব সাগরে মোতায়েন ছিল। পাকিস্তানও তাদের নৌবহরকে একত্রিত করে। এখন চলমান যুদ্ধ বিরতির মধ্যেও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনাথ সিং-এর মন্তব্য এবং পাকিস্তানের নৌ মহড়া তাদের সংঘাতের পরবর্তী অধ্যায়ে নৌবাহিনীর ক্রমবর্ধমান ভূমিকাই স্পষ্ট করে।

ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর, ভারত ব্রিটিশ ভারতের নৌ সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করে। যদিও ১৯৪৭ সালে কাশ্মীর নিয়ে প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এর কোনো ব্যবহার হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাকিস্তান তার নৌবহর সম্প্রসারণ করে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম যেখানে ভারত বাংলাদেশকে সামরিক সহায়তা দেয়, সেখানে নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন কমোডর উদয় ভাস্কর আল জাজিরাকে বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে পরাজিত করতে ভারতের নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।' তার মতে, 'নৌবাহিনীর ভূমিকা স্থলভাগে চূড়ান্ত ফলাফল অর্জনে সহায়তা করেছিল।’

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সর্বশেষ সংঘাতে প্রচলিত এবং আধুনিক দুই ধরণের যুদ্ধই দেখা গেছে। যার মধ্যে একে অপরের ভূখণ্ডের গভীরে আঘাত হানার জন্য ব্যবহৃত ড্রোনও ছিল। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, ৩০ মে রাজনাথ সিং-এর মন্তব্য ভবিষ্যতের সংঘাতে নৌ-যুদ্ধের বিষয়ে আরো দৃঢ় মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। রাজনাথ বলেন, ‘যদি পাকিস্তান আবারো কোনো হামলা করে, তাহলে ভারতের নৌবাহিনীই সম্ভবত প্রথম জবাব দেয়া শুরু করবে।’

২০০৭ সালে অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় কমোডর ভাস্কর একমত জানান যে, ‘যদি আরেকটি সামরিক সংঘাত তীব্র হয়, তাহলে নৌবাহিনীর সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি।’ নয়াদিল্লি-ভিত্তিক সমুদ্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াশিংটন ডিসির স্টিমসন সেন্টারের সাবেক ফেলো বশির আলী আব্বাস বলেন, ‘নৌ প্ল্যাটফর্মগুলো স্বভাবতই একাধিক ভূমিকা পালন করে।’

আব্বাস আরো বলেন, ‘যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিনগুলো স্বল্প সময়ের নোটিশে টহল বা অনুশীলন থেকে অপারেশনাল মিশনে পরিবর্তন করতে পারে। তবে এর নিজস্ব ঝুঁকি থাকবে।’

লাহোর ভিত্তিক সমুদ্র নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ শারেহ কাজি অবশ্য বলেন যে, ‘ভারতীয় নৌবাহিনী নজরদারি করবে নাকি আগ্রাসন চালাবে, সে বিষয়ে রাজনাথ সিং-এর বক্তব্য অস্পষ্ট।’

লাহোর-ভিত্তিক এই বিশ্লেষকের মতে, ‘পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কেন্দ্র করাচিতে যেকোনো আক্রমণের তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে।’ শারেহ কাজি মনে করেন, ‘ভারত এবারের মতোই লুকোচুরি খেলতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থলভাগে পাকিস্তানের নৌ স্থাপনা, যার মধ্যে বিমান এবং রাডার স্টেশনও রয়েছে, সেখানে ভারতের আক্রমণ করার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটি একটি 'উদ্বেগজনক সম্ভাবনা।’

সূত্র: আল জাজিরা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়