শিরোনাম
◈ ভারতের গুজরাটে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা, সাবেক মুখ্যমন্ত্রীসহ ২০০ যাত্রী নিহতের শঙ্কা (ভিডিও) ◈ ড. ইউনূস ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না হওয়া: নেতিবাচক বার্তা না দিয়ে, উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সৌজন্য বজায় রেখেছে ◈ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ১৯টি নতুন কমিটি ঘোষণা, নারী নেতৃত্বে গুরুত্ব ◈ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের শঙ্কা: যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে কর্মী সরিয়ে নিচ্ছে ওয়াশিংটন ◈ বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ কথা ভাবছে বাংলাদেশ: ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন ◈ তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ সঙ্গী দাবাড়ুকে ঢুকতে দেয়নি ভারত, বিপাকে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদ রানী হামিদ ◈ লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠক: নির্বাচনের তারিখ নয়, গুরুত্ব পাবে সংস্কার ও বিচার, মনে করে এনসিপি ◈ ৫ মিলিয়ন ডলারের ‘গোল্ড কার্ড’, ওয়েবসাইট চালু করলেন ট্রাম্প ◈ ড. ইউনুসের সঙ্গে বৈঠকে অস্বীকৃতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর: ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন

প্রকাশিত : ০৮ জুন, ২০২৫, ০৮:১২ সকাল
আপডেট : ১২ জুন, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতের কর্মকাণ্ডে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে : বিলাওয়াল ভুট্টো

বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, ভবিষ্যতের কোনো সংঘাতে উভয় দেশই হয়তো এত দ্রুত উত্তেজনার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠবে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা অন্য কোনো বিশ্বনেতার পক্ষেও হস্তক্ষেপ করার সময় থাকবে না।

দক্ষিণ এশিয়াকে পানি নিয়ে এক ভয়াবহ পরমাণু যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ভারত—এই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। ওয়াশিংটনে আয়োজিত একটি নীতিনির্ধারণী আলোচনায় তিনি বলেন, যেখানে একসময় ‘পানি যুদ্ধ’ কেবল তাত্ত্বিক আলোচনার বিষয় ছিল, সেখানে এখন ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে এক বাস্তব যুদ্ধের বীজ বুনছে।

এই আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যান প্যাটারসন পাকিস্তানের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, পেহেলগাম হামলার পর ভারতের কোনও ফরেনসিক বা তদন্ত-ভিত্তিক প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়। আর আন্তর্জাতিক মহলও সেটা চোখ বন্ধ করে মেনে নেয়। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

তিনি বলেন, ঘটনাটি প্রায় এক পরমাণু যুদ্ধের দিকে গড়িয়েছিল। এর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। এই তদন্ত এফবিআই বা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো স্বাধীন সংস্থা দিয়ে করানো যেতে পারে।

বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি তাঁর বক্তব্যে পাকিস্তানের তিনটি মূল উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন: সন্ত্রাসবাদ, কাশ্মীর এবং পানি। তাঁর মতে, ভারতের দ্বারা সিন্ধু পানিচুক্তির বারবার লঙ্ঘন শুধু আন্তর্জাতিক আইন ভাঙাই নয়, বরং এটি পাকিস্তানের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি।

পাকিস্তান বহুবার বলেছে, অভিন্ন নদীর পানি বন্ধ করে দেওয়া যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। এটা পাকিস্তান কোনও উগ্র জাতীয়তাবাদী অবস্থান থেকে বলছি না—এটা পাকিস্তানের বেঁচে থাকার প্রশ্ন। যে কোনও রাষ্ট্র তার টিকে থাকার জন্য এবং পানির জন্য লড়াই করবেই, বলেন বিলাওয়াল।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের এই আগ্রাসী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়।

এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। তারা ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার কৌশলগত প্রয়াস হিসেবে এ সব বৈঠক চলছে।

পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সিনেটর শেরি রেহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার, ড. মুসাদ্দিক মালিক, ইঞ্জিনিয়ার খুররম দস্তগীর, ফয়সাল সুবজওয়ারি, তহমিনা জানজুয়া, সিনেটর বুশরা আনজুম বাট ও জলিল আব্বাস জিলানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।

অন্যদিকে, ভারতীয় প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কংগ্রেস এমপি শশী থারুর। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন লোক জনশক্তি পার্টির শম্ভাবী চৌধুরী, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সরফরাজ আহমেদ, তেলেগু দেশম পার্টির জি এম হরীশ বলায়োগি, বিজেপির শশাঙ্ক মানি ত্রিপাঠি, তেজস্বী সূর্য ও ভবনেশ্বর কলিতা, শিবসেনার মাল্লিকার্জুন দেবদা, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত তরনজিৎ সিং সান্ধু এবং এমপি মিলিন্দ দেওরা।

ভারতীয় প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ভ্যান্সের ভারতীয় শিকড় থাকায় ভ্যান্সের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই টানটান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের এই উচ্চপর্যায়ের সফরকে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, দুই দেশের এক উচ্চ-তীব্র কূটনৈতিক অভিযান।

তিনি বলেন, ভারত সাধারণত তার দ্বিপাক্ষিক বিরোধগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলতে চায় না, সেদিক থেকে এই সফর ব্যতিক্রম। পাকিস্তান চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন ভারতের আচরণকে আক্রমণাত্মক এবং অবিশ্বস্ত হিসেবে বিবেচনা করে। অপরদিকে, ভারত চায় যুক্তরাষ্ট্র যেন পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডকে যথেষ্ট বলে ধরে না নেয়।

তবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভারতের কিছু সুবিধা রয়েছে বলেই মনে করেন কুগেলম্যান। যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলীয় রাজনীতির মধ্যে ভারতপন্থী মনোভাব বেশি, বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অনাগ্রহ ভারতের জন্য একধরনের নীরব সমর্থন তৈরি করেছে বলে জানান তিনি।

ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত বিশ্লেষক হাসান আব্বাস বলেন, পাকিস্তান ইতোমধ্যেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অনেক লড়েছে এবং এর জন্য চড়া মূল্যও দিচ্ছে। এখন তাদের প্রয়োজন মার্কিন স্বীকৃতি এবং সহযোগিতা—বিশেষ করে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা।

ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে নিজেদের পক্ষে সমর্থন জোগাড়ে ব্যস্ত। পাকিস্তানি প্রতিনিধিরা হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারসহ অন্যান্য কংগ্রেস সদস্য ও সিনেটরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পাক কূটনৈতিক সূত্র জানান, মার্কিন পক্ষ পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলকে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের প্রতিনিধিদের সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”

ভারতীয় প্রতিনিধিরা সিনেট ফরেন রিলেশনস ও ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই তালিকায় আছেন সিনেটর ডেভ ম্যাককরমিক, জ্যাকি রোজেন, জিম রিশ, মার্ক ওয়ার্নার, জন করনিন এবং এলিসা স্লটকিন।

পাকিস্তানের ভাষায়, ভারত যদি পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। অপরদিকে, ভারত বারবার পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ তুলে আসছে। এই পটভূমিতে ওয়াশিংটনে দুই দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা শুধু বর্তমান উত্তেজনা প্রশমনে নয়, বরং ভবিষ্যতের শক্তির ভারসাম্য নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আর ঠিক এই সময়েই বিলাওয়ালের সতর্কবার্তা যেন এক অনুচ্চারিত আতঙ্ক জাগিয়ে তুলছে,পানি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় কি সত্যিই প্রথম পরমাণু যুদ্ধ ঘনিয়ে আসছে? সূত্র: ডন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়