শিরোনাম
◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে? ◈ এবার থাইল্যান্ড থেকে ভারতগামী বিমানে ১৬ টি সাপ, এরপর যা ঘটল ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে এবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্তা

প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০:৫৫ দুপুর
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২৪, ০৫:৩৪ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমার দারিদ্র্যের চরম পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে: জাতিসংঘ রিপোর্ট 

খুররম জামান: [২] মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থানের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল অর্থনীতির মধ্যে বিবেচিত হত। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ দেশটিকে দারিদ্র্যের চরম পরিণতির দিকে ধাবিত করেছে। জাতিসংঘের একটি নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

[৪] মিয়ানমারের ৫ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। ৪৯.৭ শতাংশ  মানুষ প্রতিদিন ৭৬ ইউএস সেন্টের কম আয় করে। এই দারিদ্রতা ২০১৭ সালের থেকে দ্বিগুণ হয়েছে, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি(ইউএনডিপি)গবেষকরা এ পরিণতি খুঁজে পেয়েছেন।

[৪] সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের তিন বছর পর, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়েছে এমন এক পর্যায়ে যেখানে মধ্যবিত্তরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং মধ্যবিত্ত এ পরিবারগুলোকে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার খরচ হ্রাস করতে বাধ্য করা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে। গবেষকরা একটি উদ্বেগজনকভাবে উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরে মিয়ানমারের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার দারপ্রান্তে এসে পৌছেছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক গবেষক। তিনি জানান,সেই সময় থেকে, তীব্র সংঘাতের ফলে আরও বাস্তুচ্যুত মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছে, ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১১ সালে সামরিক শাসন থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরার পর মিয়ানমার দ্রুত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নতি করছিল। মিয়ানমার দারিদ্র্য হ্রাসে দৃঢ় অগ্রগতি করে।

[৫]  এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতে, দেশটি এই অঞ্চলের মধ্যে দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি ছিল। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান দেখায় ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মিয়ানমারের অর্থনীতি বছরে গড়ে ৬ শতাংশ  বৃদ্ধি পেয়েছিল।দেশটি কার্যকরভাবে তার দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালে ৪৮.২ শতাংশ থেকে ২০১৭ সালে ২৪.৮ শতাংশে নেমে এসেছিল।

[৬] কিন্তু ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান,  অং সান সুচির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার ফলে দেশকে অস্থিতিশীল এবং সহিংসতার মধ্যে নিমজ্জিত করে। এর সঙ্গে যোগ হয় কোভিড মহামারীর যা অর্থনৈতিক  সেই অগ্রগতিকে বিপরীত দিকে টেনে নিয়ে যায়। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দারিদ্র্য শুধু দ্বিগুণ হয়নি, মানুষ আরও  দরিদ্র হচ্ছে দিন দিন। 

[৭] ইউএনডিপির এশিয়ার আঞ্চলিক সহকারী মহাসচিব এবং পরিচালক কান্নি উইগনারাজা বলেন, সামগ্রিকভাবে, জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের তিন ভাগই দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে।  সুতরাং, দারিদ্র্যের গভীরতা বিশাল। উইগনারাজা বলেন, মিয়ানমারের মধ্যবিত্ত শ্রেণী "আক্ষরিক অর্থেই হারিয়ে যাচ্ছে।"তিনি বলেন, আড়াই বছরের মধ্যে মধ্যবিত্তের ৫০ শতাংশের পতন শুধু এই দেশের জন্য, বিশ্বে যেকোনো দেশের জন্যই বিস্ময়কর। উইগনরাজা বলেন, আমরা কখনই দেখিনি যে বড় শহুরে অঞ্চলগুলো এত দ্রুত দুর্দশার দিকে যেতে পারে। ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয়ের আশেপাশের অঞ্চলগুলো সত্যিই কঠিনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

[৮] প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে তিন মাসে পরিচালিত মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তে ১২ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তৈরি করা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যদিও সারা দেশে দারিদ্র্য বিস্তৃত লাভ করেছে কিন্তু বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারীদের আরও গভীরভাবে নিঃস্ব করার  দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যেখানে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়েছে।

[৯] অভ্যুত্থানের পর থেকে, জান্তা বিরোধী প্রতিরোধ বাহিনী এবং জাতিগত বাহিনী বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সামরিক জান্তা মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান নৃশংস আক্রমণ শুরু করে, গ্রামে, গ্রামে স্থল যুদ্ধ, বিমান হামলা করে। জান্তার হামলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। 

[১০] প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, যারা লড়াইয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়নি তারাও ভুগছে, মিয়ানমারের স্থানীয় মুদ্রা, কিয়াতের মূল্য হ্রাস পেয়েছে, খাদ্য এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। দেশে বিদেশী বিনিয়োগ তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং বিদেশে পাড়ি জমানো বেকারদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে,  রাজনৈতিক সঙ্কট এবং মহামারীর দ্বিগুণ ধাক্কার কারণে মিয়ানমারের জিডিপি ২০২১ সালে ১৮ শতাংশ কমেছিল তা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়