ওয়াই-ফাই বা মোবাইল ফোনের মতো নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসা রেডিয়েশনের মাত্রা অনেক কম, যা ত্বকের ক্ষত ছাড়া তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা তৈরি করে না। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
আজকাল আমরা প্রতিনিয়ত ঘরে বা অফিসে অসংখ্য ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকি। ফোন, কম্পিউটার, ব্লুটুথ স্পিকারসহ আরও অনেক ডিভাইসও এই নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এতসব অদৃশ্য রেডিয়েশন কি আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে?
যদিও ওয়্যারলেস ডিভাইসের সংখ্যা এবং ব্যবহার সম্প্রতি বেড়েছে, তবে এই ধরনের রেডিয়েশন দীর্ঘদিন ধরেই বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের বিষয়। মেডিকেল কলেজ অফ উইসকনসিনের রেডিয়েশন অনকোলজির প্রফেসর জন মোল্ডার বলেন, ওয়াই-ফাই নিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষণা বহু বছর ধরে চলেছে। ২০১৩ সালে আমি ও আমার সহলেখক একটি রিভিউ লিখেছিলাম, যা দেখায় ওয়াই-ফাই রেডিয়েশন মানুষের শরীরে কী প্রভাব ফেলতে পারে।
ওয়াই-ফাই রাউটার ও মোবাইল ফোনের মতো ডিভাইস রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করে। ১৯৫০-এর দশক থেকেই মানুষের উপর রেডিও ওয়েভের প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল। মূলত নৌবাহিনীর সার্ভিস ম্যানদের শক্তিশালী শিপবোর্ড রাডারে এক্সপোজার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।
গবেষণা থেকে জানা গেছে, উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় রেডিয়েশন টিউমার বা ক্যানসার তৈরি করতে পারে। তবে ওয়াই-ফাই বা মোবাইল ফোনের মতো নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসা রেডিয়েশনের মাত্রা অনেক কম, যা ত্বকের ক্ষত ছাড়া তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা তৈরি করে না।
ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার বায়োইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেসর কেনেথ ফস্টার বলেন, ওয়াই-ফাই রাউটার সাধারণত ০.১ শতাংশ সময়ই তথ্য প্রেরণ করে। অধিকাংশ সময় এটি শুধু সক্রিয় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। পাশাপাশি, রাউটার থেকে যতদূর আপনি দূরে থাকবেন, শরীরে যে রেডিয়েশন পড়বে তা অনেক কমে যাবে।
অন্যদিকে, কিছু গবেষকরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদী নিম্ন-স্তরের রেডিয়েশনও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ফ্যামিলি অ্যান্ড কমিউনিটি হেলথের পরিচালক জোয়েল মোস্কোভিটজ বলেন, প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে, এমন রেডিয়েশনে সংস্পর্শে থাকা নড়বড়ে স্বাস্থ্য প্রভাব ফেলতে পারে যেমন স্নায়বিক বিকাশের সমস্যা, ক্যান্সার, এবং প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার মোবাইল ফোনকে সম্ভাব্য ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে বর্তমানে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই যে এটি বা ওয়াই-ফাই সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। জোয়েল মোস্কোভিটজ আরও বলেন, আজকের দিনের ডিভাইস ব্যবহারকারীর এক্সপোজার ভিন্ন, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। দীর্ঘমেয়াদী ও ক্রমবর্ধমান এক্সপোজার নিয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তিনি পরামর্শ দেন, যেখানে সম্ভব, ডিভাইসগুলো শরীর থেকে দূরে রাখুন এবং যখন ব্যবহার না করছেন ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখুন। স্বাস্থ্যঝুঁকি এখনও তাত্ত্বিক, তবে এক্সপোজার কমানোই নিরাপদ।
ওয়াই-ফাই এবং মোবাইল রেডিয়েশনের বর্তমান মাত্রা সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে কিছু গবেষক এখনও সতর্ক। তাই যতটা সম্ভব সংস্পর্শ কমানো এবং সচেতন ব্যবহারই বুদ্ধিমানের কাজ। সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন