শিরোনাম
◈ নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে সরকার ও বিএনপির দূরত্ব কী তিক্ততার দিকে যাচ্ছে ◈ ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধিতে রড থেকে প্লাস্টিক দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের ◈ মে মাসে এলো রেকর্ড ৩৬ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স ◈ নগদের নিয়োগে অনিয়মের ‘সত্যতা মিলেছে’, স্ত্রীসহ আতিক মোর্শেদকে দুদকে তলব (ভিডিও) ◈ রেমিট্যান্সে নতুন মাত্রা: মে মাসে ৩৬ হাজার কোটি টাকার আয় ◈ পৌনে ৪ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য ঈদের আগে সুখবর ◈ শাহ সিমেন্টকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি টিআইবির ◈ সোমবার ৩ টায় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ◈ জামালপুরে দেশের ৩০তম গ্যাসফিল্ড আবিষ্কার! ◈ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনাই বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ: অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ৩১ মে, ২০২৫, ১২:২৪ দুপুর
আপডেট : ০১ জুন, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের ৯ মাস যেমন ছিল!

চলতি বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান ফারুক আহমেদ। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিসিবি’র প্রথম সভাপতি! সবমিলিয়ে তাকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ ছিল তুঙ্গে! কিন্তু ৯ মাস ৮ দিনের মাথাতেই সভাপতি পদ হারিয়েছেন ফারুক। ৯ মাসের দায়িত্ব থাকার সময়ে তাকে ঘিরে নানা বিতর্ক উঠেছে, কখনও সেটা মাত্রাও ছাড়িয়েছে! আবার আগের বোর্ড পরিচালকরা ফারুককে কতটা সহযোগিতা বা অসহযোগিতা করেছেন সেটাও আলোচনার বিষয়! সবমিলিয়ে সভাপতি হিসেবে ৯ মাসে কেমন ছিল ফারুক আহমেদের সময়, সেটাই দেখে নেওয়া যাক! 

২১শে আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর ফারুকের প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট- বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)। সেখানে তিনি ঢাহা ফেল। টিকিট নিয়ে প্রথমদিনেই তোলপাড় হয়! স্টেডিয়ামের গেট ভাঙচুরসহ নানা কাণ্ডে বেশ কয়েকদিনই তুলকালাম হয় বিপিএলে। তড়িঘড়ি ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাচন করায় বিসিবি’র সমালোচনা হয় চারদিকে। দুর্বার রাজশাহী খেলোয়াড়দের ঠিকমতো পারিশ্রমিক দেয়নি! চিটাগং কিংসের মালিকের বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ! তবে টিকিট বিক্রি নিয়ে ফারুক প্রশংসা দাবি করেন! প্রথম ৮ আসরে যে টাকা টিকিট বিক্রিতে আসেনি সেটাই নাকি এবারের এক আসরে এসেছে! বিপিএলের এসব অনিয়মের দায়ও এককভাবে ফারুককে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

যদিও সে দায় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিবসহ অন্যদের ওপরও বর্তায়। অনাস্থা প্রস্তাবে দাবি করা হয়েছে, ফারুক আহমেদ বিসিবি’র তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ না দিয়ে তার পছন্দের নিম্নমানের ও অনিবন্ধিত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে কাজ দিচ্ছেন। যদিও বিসিবি’র তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই বিগত বোর্ডের মাধ্যমে তালিকাবদ্ধ হয়েছে। তখন কিন্তু এসব পরিচালকরা প্রতিবাদ করেছেন বলে শোনা যায়নি। 

এর আগেই অবশ্য আরেকটি বিতর্কের জন্ম দেন ফারুক, সরিয়ে দেন জাতীয় দলের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। ২০২৩ বিশ্বকাপে নাসুম আহমেদকে চড় মারার অভিযোগে হাথুরুকে বরখাস্ত করেন তিনি। যদিও ওই সময়ে কোচিং প্যানেলে থাকা দুজন বিদেশি কোচ দাবি করেছেন এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অন্য পরিচালকরাও ফারুককে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন এমন কিছুও শোনা যায়নি! 

গেল ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে মোহামেডান অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয় কাণ্ডও সামলাতে ব্যর্থ হয় ফারুকের বিসিবি। প্রথম দফায় শাস্তি দেওয়া, এরপর সেটা অনৈতিক প্রক্রিয়ায় কমানো, এরপর আবার শাস্তি দেওয়া পরে সেটা আবার স্থগিত করা! এটা কিন্তু করেছেন বিসিবি’র আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান! অথচ এই দায়ও ফারুকের কাধেই দেওয়া হয়েছে পুরোপুরিভাবে।  এরপর বিসিবি’র এফডিআরের প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা একাধিক ব্যাংকে ট্রান্সফার করা নিয়েও বিতর্কের মুখে পড়েন ফারুক। বিসিবি’র অন্য পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ নিয়েও পরিষ্কার করে কোনো বোর্ড পরিচালক কিছু বলেননি! 

অবশ্য ফারুককে সরানোর জন্য সব অস্ত্র প্রস্তুত করাই ছিল! তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করা অনেকেই ছিলেন দেশের বাইরে! ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম পাকিস্তানে বসেই স্বাক্ষর করে ফেললেন! অনাস্থা প্রস্তাবে প্রকারান্তরে লেখা হয়েছে ফারুকের ‘স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড এবং ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগে অযাচিত হস্তক্ষেপের’ কারণেই নাকি ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ১০ নম্বরে নেমে এসেছে! অথচ এই দায় পুরোটাই ক্রিকেট অপারেশন্সের! এই কমিটির প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম কি কখনও ‘অযাচিত হস্তক্ষেপের’ প্রতিবাদ করেছেন? তিনি নিজেকে এককভাবে বলবেন, বোর্ড সভাপতির কারণেই দল খারাপ করছে! অথচ এর আগে নাজমুল হাসান পাপন হস্তক্ষেপ করতেন বিসিবি’র প্রত্যেক কোনায় তখন কিন্তু এই স্বেচ্ছাচারিতা বা অযাচিত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কোনো পরিচালকরা কিছুই বলেননি! 

ফারুক আহমেদকে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল গঠণতন্ত্রের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা। নাজমুল আবেদীন ফাহিম এটা প্রস্তুত করলেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি ক্লাব রাজনীতির কারণে! শোনা যায়, অনেক বোর্ড পরিচালকরাও এতে জড়িত! এরপর আসে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযান! সবাই জানে গেল ১৫ বছরে পাপনের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েই তদন্ত করছে দুদক। সেখানে কিন্তু ফারুকের বাধা দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি! বরং কোনো এক পরিচালক প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে তাকে দূরে সরিয়েছেন ফারুক! পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন দুদক যেন স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে পারে।

সবমিলিয়ে দেশের বাকি সব সেক্টরের মতো বিসিবিতেও যেন হটাৎ করেই পরিচালকরা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন! যদিও এতদিন তারা কিছু বলতে পারেননি! সভাপতি হিসেবে গেলো ৯ মাসে ফারুক আহমেদের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি! অনেক জায়গাতেই প্রত্যাশার ছিটেফোটাও পূরণ করতে পারেননি। তবে এই যে তাকে ঘিরে হটাৎ প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন বাকি পরিচালকরা তারা কি গেলো ১৫ বছর চোখে পট্টি পরে ছিলেন! আবার নতুন সভাপতির ক্ষেত্রেও তারা প্রতিবাদী থাকবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়! সূত্র: মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়