নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত ও শ্রীলঙ্কায় শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপ ক্রিকেট এবং পাকিস্তানে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষীক সিরিজ নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাতের প্রভাবই এর কারণ। সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক আরও বৈরী হয়ে উঠেছে। ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। এই উত্তেজনা শুধু কূটনৈতিক নয়, প্রভাব ফেলছে মাঠের ক্রিকেটেও। বিশেষ করে বাংলাদেশের আসন্ন কয়েকটি সিরিজ ঘিরে দেখা দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।
গত কয়েকদিন ধরে চলা এই ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন মাঠের ক্রিকেটেও প্রভাব ফেলছে। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন করলেও ভারতের আপত্তিতে তাদের ম্যাচগুলো হয়েছিল দুবাইয়ে, হাইব্রিড মডেলে। এবার বর্তমান উত্তেজনার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের আসন্ন পাকিস্তান সফরে।
চলতি মে মাসের শেষের দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলার পর টাইগারদের পাকিস্তানে যাওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ২৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত লাহোর ও ফয়সালাবাদে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি খেলার সূচি নির্ধারিত আছে। কিন্তু বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই সফর কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে জেগেছে প্রশ্ন।
এই বিষয়ে বিসিবি জানিয়েছে, আপাতত সফরটি নির্ধারিত সময়েই হওয়ার কথা রয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা বা অনিবার্য পরিস্থিতি তৈরি হলে খেলোয়াড়দের সুরক্ষার স্বার্থে বোর্ড প্রয়োজনীয় এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপও এই রাজনৈতিক উত্তাপ থেকে মুক্ত নয়। ভারত ও শ্রীলঙ্কার যৌথ আয়োজনে এই টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতি না বদলালে পাকিস্তান হয়তো এশিয়া কাপে অংশ নেবে না।
এদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সদ্য চূড়ান্ত হওয়া একটি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি হোম সিরিজ নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর সূচির (এফটিপি) অন্তর্ভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও মিরপুরে আগামী ২০, ২২ ও ২৪ জুলাই এই সিরিজ হওয়ার কথা
অন্যদিকে, আগস্ট মাসে ভারতের বাংলাদেশ সফরের সূচিও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। আগামী ১৩ আগস্ট ভারতীয় দলের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সফর পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও বিসিবি এখনো জানাচ্ছে যে সিরিজটি নির্ধারিত সময়েই হচ্ছে এবং ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে সূচি পরিবর্তনের বিষয়ে নতুন কোনো আলোচনা হয়নি। এই সফরে ১৭ ও ২০ আগস্ট মিরপুরে দুটি ওয়ানডে, ২৩ আগস্ট চট্টগ্রামে শেষ ওয়ানডে হওয়ার কথা। এরপর ২৬ আগস্ট চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টি এবং ২৯ ও ৩১ আগস্ট মিরপুরে বাকি দুটি টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সব মিলিয়ে, উপমহাদেশীয় রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেট পড়ে গেছে এক কঠিন দোলাচলে। পাকিস্তান সফর ও ভারত সিরিজ - দুই দিকের সম্পর্ক এবং খেলার ভারসাম্য বজায় রাখা এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই তিন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সূচির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সামনের দিনগুলোর ভূরাজনৈতিক অবস্থার ওপর।