শিরোনাম
◈ টেকনাফের গহীন পাহাড়ে মানবপাচার চক্রের ঘাঁটিতে অভিযান, ৮৪ জন উদ্ধার ◈ ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আর কানাডার স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ কী? ◈ লাগাম টানা হলো পুলিশের গ্রেপ্তারি ক্ষমতায়, ১২৭ বছরের পুরোনো ফৌজদারি কার্যবিধিতে বড় পরিবর্তন (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের ৬ নেতাসহ ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ এ‌শিয়া কা‌পে সুপার ফোরেও ভারতের কাছে দিশাহারা পাকিস্তান, হার‌লো ৬ উই‌কে‌টে ◈ ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্য-কানাডা-অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতি, যা বললেন নেতানিয়াহু ◈ ফেসবুক নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে নির্দেশনা দিলো ঢাকা কলেজ ◈ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৯ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ দুই সেনা কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ ◈ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পের সেমিফাইনা‌লে বাংলাদেশ 

প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:২৬ বিকাল
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:১১ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

মানুষকে নির্বাচনমুখী করতে মাঠে নামছে বিএনপি

মহসিন কবির: দেশের মানুষকে নির্বাচনমুখী করতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। এর মধ্যে প্রার্থী যাছাই-বাছাই করা হচ্ছে। সংসদীয় আসনে ধাপে ধাপে একক প্রার্থী অনানুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত করে তাদের সবুজ সংকেত দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে দনের নেতারা। 

জুলাই অভ্যুত্থান-পূর্ববর্তী যেসব নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, অপরাধ বিবেচনায় তাদের অনেককেই ছাড় দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে দলে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। এ ছাড়া দলের নারীনেত্রীদের মধ্যে সরাসরি ভোটে যারা বিজয়ী হতে পারেন, তাদেরও খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারে ঘোষিত ৩১ দফার আলোকে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও দ্রুত শুরু করতে চায় বিএনপি। দলের বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) মিত্র রাজনৈতিক জোট ও দলের সঙ্গে আলোচনা করে আসন ভাগাভাগি করারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দলের তরফে।

আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসব শেষে উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টির উদ্যোগ নেবে দলটি। পাশাপাশি দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো বিভিন্ন কুৎসা ও গুজব মোকাবিলার উদ্যোগও নেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী তৃণমূলকে বার্তা দেওয়া হবে বলে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

এসব নিয়ে গত সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণসহ করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয়কক্ষে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি অভিন্ন দাবিতে মাঠে নামছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিসহ (জাগপা) কয়েকটি দল। এ নিয়েও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

বিএনপি মনে করছে, দলগুলোর এই কর্মসূচি রাজনৈতিক। নির্বাচন ইস্যুতে নিজেদের দলীয় দাবি-দাওয়া আদায় করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের একটা

কৌশল এটি। জনগণের সম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দিয়ে তারাও মাঠে থাকতে চায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার আছে কর্মসূচি ঘোষণা করার। তারা যদি রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে কর্মসূচি দেয়, তাদের মাঠের রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব বিএনপি মাঠের বক্তব্যের মাধ্যমেই দেবে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, নেপালের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কোনো শুভ বার্তা নয়। জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোকে এ অবস্থায় আনার পেছনে সরকারের একটি অংশ দায়ী বলে মনে করে বিএনপি। দলটির মতে, প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন- এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। এজন্য তিনি নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। যদিও সরকারের একটি অংশ সেখানে এখনও বাধা। এ অংশের সঙ্গে ইসলামি দলগুলোর যোগাযোগ আছে বলেও মনে করে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এমতাবস্থায় দেশ ও দেশের জনগণকে নির্বাচনমুখী করা গেলে ইসলামি দলগুলোর কর্মসূচি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করেন, দেশে কোনো বিনিয়োগ নেই। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র  রায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত দলের মহাসচিব জানাবেন। তবে আমরা এ মুহূর্তে নির্বাচন ছাড়া কিছু ভাবছি না। জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোর কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসূচি করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা কেন তাদের পাল্টা কর্মসূচি দেব?

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে এবং বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলে আসছেন, এবারের নির্বাচন সহজ হবে না। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত। বিশেষ করে ‘বিতর্কিত’ ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন এর বড় উদাহরণ। এ অবস্থায় জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামি দলের অভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণাকে সহজভাবে দেখছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। ইসলামি দলগুলোর আন্দোলনের বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি না দিলেও নির্বাচনী জোয়ার সৃষ্টি করতে চায় দলটি। কীভাবে এ জোয়ার সৃষ্টি করা যায়- এ নিয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্বাচনের মাঠে বিএনপি অনেকটাই এগিয়ে। বড় দল হওয়ার কারণে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যাও বেশি। জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে দেশের ৩শ আসনে একাধিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। বিতর্কমুক্ত, জনপ্রিয় ও শিক্ষিতসহ নানা গুণের অধিকারী নেতাদের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এতে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়। জরিপ ও দলের বিবেচনায় যোগ্যপ্রার্থীকে সবুজ সংকেত দিতেও পরামর্শ দেন নেতারা। একই সঙ্গে তারা বলেছেন, কোথাও কোনো বিদ্রোহ দেখা দিলে এর শান্তিপূর্ণ সমাধানও সবুজ সংকেতপ্রাপ্ত প্রার্থীকে করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির নেতাদের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন। তিনি সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পর্যায়ক্রমে সবুজ সংকেত দেবেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, আগামী মাসের অর্থাৎ অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ১২০ থেকে ১৩০ আসনে সবুজ সংকেত দেওয়া হতে পারে। পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর। তিনি সবুজ সংকেত দেওয়ার আগে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনাও করতে পারেন। জানা গেছে, জরিপ অনুযায়ী প্রার্থী ঘোষণা করা হলে সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি অনেক শিক্ষিত তরুণ নেতাও অনেক আসনে এগিয়ে আছেন। তবে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলেন না, এমন নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হলে বড় ধরনের বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে- এমন শঙ্কাও করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনে নারীনেত্রীদেরও গুরুত্ব দিতে চায় বিএনপি। সে অনুযায়ী তিনশ আসনের মধ্যে ৫ থেকে ৭ শতাংশ আসনে অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ জন নারীনেত্রীকে সরাসরি ভোটে মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। সরাসরি ভোটে কারা বিজয়ী হয়ে আসতে পারেন, তাদের একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিগত দিনে যারা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলেন তাদের তালিকায় রাখা হচ্ছে। অবশ্যই কোনো বিতর্কিত কাউকে এই তালিকায় রাখা হবে না- দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনাও এমন।

এদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা যে যার মতো প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপির নেতাদের পাশাপাশি এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারাও মাঠে নেমে পড়েছেন। এ কারণে অধিকাংশ এলাকায় গ্রুপিং চরম আকার ধারণ করছে। এটি রোধে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ইতোমধ্যে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর অপকর্মের কারণে দলের ইমেজ কিছুটা বিবর্ণ হয়েছে। এসব নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ এখনই প্রত্যাহার করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন স্থায়ী কমিটির নেতারা। বিএনপি মনে করে, তারেক রহমানের কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার ফলে সারাদেশে সংগঠনে একটা শৃঙ্খলা এসেছে। এটা ধরে রাখার পক্ষে মতামত দেন নেতারা। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, ৫ আগস্টের আগে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাহিষ্কার করা হয়েছিল যারা, তাদের দলে ফিরিয়ে আনা উচিত। তাদের শাস্তি যা হওয়ার হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয়াবলি স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দলীয় যে অবস্থান ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তুলে ধরেন তিনি, সেটা স্থায়ী কমিটিকে জানান। সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া এমন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করার পক্ষে বিএনপি। সেটা নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে হতে পারে। আর সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো নির্বাচিত সংসদ করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়