এল আর বাদল : আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর এখন উঠেছে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি৷ তবে এই মুহূর্তে দেশের বৃহত্তম দল বিএনপি নিষিদ্ধ নয়, চায় জাতীয় পার্টির বিচার। এসবের নেপথ্যে কি রাজনীতির কোনো সমীকরণ কাজ করছে?
বিএনপির কথা- বিচারের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির যা হয় হবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের মতো কিছু দল সরাসরি নিষিদ্ধের পক্ষে। তারা চায় আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হোক। কিন্তু কেন? -- ডয়েচেভেলে
আওয়ামী লীগ এখনো সেই অর্থে নিষিদ্ধ হয়নি। দলটির বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হলেও এখনো আওয়ামী লীগ দলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। কিন্তু সন্ত্রাস দমন আইনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দলটি আগামী নির্বাচনে যে অংশ নিতে পারছেনা, তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দলটির প্রতীক নৌকাও স্থগিত আছে। জাতীয় পার্টির কার্যক্রমও যদি একইভাবে প্রশাসনিক আদেশে নিষিদ্ধ হয়, তাহলে তাদেরও একই অবস্থা হবে।
জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে গত শুক্রবার গণঅধিকার পরিষদ মিছিল বের করলে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের সাথে তাদের সংঘাত হয়।
একই দিনে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় গণঅধিকার পরিষদের প্রধান নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন। তারপর থেকে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি আরো প্রবল হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
এনসিপি সরাসরি নিষিদ্ধের দাবিই করেছে। গণঅধিকার পরিষদ জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে মাঠেই আছে। তবে বিএনপি সরাসরি নিষিদ্ধ না চেয়ে বিচারের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে।
যারা জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ চায়, তাদের কথা হলো, জাতীয় পার্টি 'আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর'। তাদের মতে, জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে।
আর যারা বিচারের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন, তাদের মতে, "ফ্যাসিস্ট দলগুলোকে জনগণই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। বাকিটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করা যায়।” প্রশাসনিক আদেশে কোনো দল নিষিদ্ধের বিপক্ষে তারা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবির পিছনে বড় ধরনের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ আছে।
জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে জামায়াত আসন্ন নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আবির্ভূত হবে। এমনটি তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটতে পারে। কিন্তু জাতীয় পার্টি যদি নিষিদ্ধ না হয়, তাহলে জামায়াতের প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করেন তারা।
তাছাড়া নির্বাচন ইস্যুতে শক্তি প্রদর্শনের জন্যও কোনো কোনো দলের জন্য জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হওয়া সুবিধাজনক। যদি কোনো ইস্যু ধরে জামায়াত এবং এনসিপি নির্বাচন বর্জন করে, তাহলে বিএনপির জন্য তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
যদি জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ না হয়, তাহলে তারাও বিএনপির সাথে নির্বাচনে যাবে। তখন বিএনপির জন্য সহজ হবে আর জামায়াত ও এনসিপির জন্য কঠিন হবে।