রিফাত হাসান: সলিম কিছু মুগ্ধতা ও ছাত্র তৈরি করেছেন। চিন্তা বা রাজনীতি না। মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে সলিম খান বাংলাদেশে সেক্যুলার অঙ্গনে মিজানুর রহমান আজহারির কাছাকাছি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন ইদানীং। বয়স, বাগ্মীতা ও জ্ঞানগম্যিতে সলিমুল্লাহ খান বড়ই। রীতিমতো ঠাকুর। তার বিখ্যাত দুটি উক্তি আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, ‘যেকোনো অপারেশনে কেজুয়ালিটি হবেই। কিন্তু শাপলাচত্তরের সমাবেশটি অবৈধ কিনাÑ সময় টিভি থিকা শুনতেছিলাম। মে ৭, ২০১৩ তারিখ। মতিঝিলে হেফাজতকর্মীদের উপরে যৌথ বাহিনীর ম্যাসাকারের পর। পরে, আরো ছয় বছর পরে, দুই হাজার উনিশ সালে, বাংলা একাডেমি লেখক বলছি মঞ্চ থেকে বলছেন, ‘কাজেই আল মাহমুদ যদি শিবিরকে সমর্থন করে থাকেন, তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলে তার কবিতা, যিনি লিখেছেন রজতরেখা, সেটা মুছে যাবে না’। এই দুটি মন্তব্য ইতিহাসের উত্তাল একটি সময়ে এবং অন্য একটি নিস্তরঙ্গ সময়েও তিনি কীভাবে স্থির হয়ে চিন্তা করতে সক্ষম ও তিনি যে তার চিন্তাপদ্ধতি থিকা বিচ্যুত হন না, তার সাক্ষ্য দেয়।
পাশাপাশি, দেখেন, ‘শিবিরকে সমর্থন’ করার অপরাধে শাস্তি প্রদানের পরপর আল মাহমুদের কবিতার যে রজত রেখা, তা যে অম্লান, এই ব্যাপারটা অসংকোচে স্বীকার, এইটা সলিমুল্লাহ খানের মহৎ গুণ। মাহমুদুর রহমান নামের একজন ‘এডিটর-ইন-চান্স’-কে শাস্তি প্রদানের পক্ষে তার যে বুদ্ধিবৃত্তিক এডভোকেসি বা পাকিস্তানি মিলিটারির সাখে বাঙালি মেয়ের প্রেমের কাহিনী মেহেরজান ছবি যে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ থাকাই দরকার, খানের এই অবস্থানগুলো আমাদের ভাবনা চিন্তাকে নাড়া দেয়।
তো, শাহবাগের সময়টিতে সলিম খানের প্রতি আমরা উদার থাকতে পারি নাই। তিনিও যেমন। ফলত, কিছুটা ‘শত্রুতা’ তৈরি হইছিল, ধারণা করি, ফেসবুকে থাকাকালীন। তার টেক্সট থেকে ধার কইরা তাকে ‘ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী’ লিখেছিলাম। বোধহয়, গ্রামসির ট্রেডিশনাল বুদ্ধিজীবীরই অনুবাদ তিনি ‘ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী’ করছিলেন। সময়টাই আমাদেরে শান্তভাবে বইসা চিন্তা করতে দেওয়ার মত ছিল না। ‘শাহবাগের আজান’ এবং ‘জয় জয় করিয়া বাড়ে রাজার ব্রাহ্মণ। কিন্তু লেখক-বুদ্ধিজীবীর কাজ কী?’ লেখার পরই, সেই সময়ে ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে তিনি আমাকে ব্লক করেন। শাহবাগের রাষ্ট্রপ্রকল্প ও অসহিষ্ণুতার অংশ হিসেবেই উনি আমারে ব্লক করছিলেন, এইটা আমার পাঠ ছিল। উনার কাছে তার আরো পাঠ থাকিত পারে। এই ঘটনারে উপলক্ষ্য কইরা আমি, মূলত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ লিখি একটা। নাম, বন্ধুত্ব নিয়া জরুরি এলান। আপনারা অনেকেই পইড়া থাকতে পারেন।
সলিমুল্লাহ খান ফরহাদরে হেফাজতের তাত্ত্বিক বলছিলেন। আর সলিম খান নিজে শাহবাগরে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঠাউরে নিছিলেন আর এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নবী হইতে চাইছিলেন বইলাই মনে হইছিল আমার। পরে, তার মনোভঙ্গ হইছিল কী! একটা আশ্চর্য ব্যাপার হলো, বন্ধুত্ব ব্যাপারটি নিয়া সলিম এবং আমার মধ্যে, কোনো কোনো সময়, কাছাকাছি ভাব বিরাজ করে। খেয়াল করবেন, সলিম সব মতভেদ ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বরে ভুইলা ফরহাদ মজহারের এবডাকশনের সময়ে দালাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে ফরহাদ উদ্ধারের পক্ষে অবস্থান নিতে পেরেছিলেন। এই ঘটনাটি এমন, সলিমুল্লাহ খানরে নিয়া এতক্ষণ যা লিখলাম, তার একটা পুনপাঠ করতে প্রলুব্ধ করে। ফেসবুক থেকে