শিরোনাম
◈ ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাবাহিনী প্রধান ◈ দেশের বাজারে আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম ◈ দুই মামলায় ব্যারিস্টার সুমনকে কেন জামিন নয়, হাইকোর্টের রুল ◈ নুরের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ডিএনসিসির, জবাব দিল গণঅধিকার পরিষদ ◈ চাকরিতে শৃঙ্খলা ফিরাতে নতুন অধ্যাদেশ, কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ◈ পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় বিশৃঙ্খলা করছেন নুর, অভিযোগ ডিএনসিসির ◈ উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজকে পদত্যাগ করতে হবে: ইশরাক (ভিডিও) ◈ নতুন পররাষ্ট্র সচিব হচ্ছেন আসাদ আলম ◈ ভারত পুশ-ইনের ঘটনায় চিঠির জবাব দেয়নি: তৌহিদ হোসেন ◈ যে কারণে এই ৩৩ দেশে সন্ত্রাসবিরোধী প্রচার চালাবে ভারত

প্রকাশিত : ২১ মে, ২০২৫, ০৭:২০ বিকাল
আপডেট : ২২ মে, ২০২৫, ১২:২১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকারকি অস্থিরতাবোধ করছে? চট্টগ্রাম সিটিতে আদালতের রায় মানতে পারলে ঢাকা দক্ষিণে সমস্যা কেন

শাহাজাদা এমরান: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে আদালতের রায় অনুযায়ী চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন বিএনপি নেতা  ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি এখন দিব্যি নাকে তেল দিয়ে চসিক চালাচ্ছেন। চসিকের রায় দেখে একই ভাবে আদালতের শরণাপন্ন হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, অবিভক্ত ঢাকা সিটির সর্বশেষ মেয়র সাদের হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইসরাক হোসেনও। 

এরপর ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করলেন আদালত। আদালতের এ রায় ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন থেকে চুড়ান্ত গেজেট প্রকাশিত হলো। কিন্তু গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হচ্ছে না।  অর্থাৎ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসতে দিচ্ছে না সরকার।  সরেকারের মনোভাব দেখে কিংবা অদৃশ্য ইশারায় জনৈক এক ব্যক্তি আদালতে রিট করলেন  ইশরাক হোসেনকে যেন শপথ না পড়ানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার প্রথম দিনের মতো আদালতে শুনানি হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আজ বুধবার (২১ মে) দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় এই বিষয়ে শুনানি ও আদেশ হবে।

গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের ওপর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এ দিকে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানো নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা দায়ী করছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা , কুমিল্লার কৃতি সন্তান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্র নেতা আসিফ মাহমুদকে। একই সাথে এনসিপির বিভিন্ন স্থরের নেতারাও বিভিন্ন ধরনের কথা বলছেন , যা শপথের বিপক্ষে যায়। ফলে এ বিষয়ে কথা কলা শুরু করেছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও। 

এদিকে এ  নিয়ে ঢাকা শহরে চলছে হুলুস্থুল কান্ড। ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো নিয়ে গেল বুধবার থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবন কার্যত অচল। সেখানে কোনো ধরনের দাপ্তরিক কাজ হচ্ছে না। দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা নিতে আসা লোকজন। সিটি করপোরেশন নগরবাসীকে ২৮ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এসব নাগরিক সেবা এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। 

ইশরাক সমর্থকদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মতে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির  মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এই সময়ের মধ্যে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইশরাকের সমর্থকরা।

ঢাকাবাসীর পক্ষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাবেক সচিব মশিউর রহমান। মঙ্গলবার বিকেলে ৬ষ্ঠ দিনের অবস্থান কর্মসুচি থেকে এই ঘোষণা দেন তিনি। 

নোবেল বিজয়ী ও বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকার কি তার মেয়াদের দশ মাসে এসে অস্থিরতা কিংবা অজানা আতঙ্কে বা দেশীয় ও আন্তজার্তিক ষড়যন্ত্রের জালে আটকে যাচ্ছে কিনা। কারণ, সরকারের মধ্যে এক ধরনের  সিদ্ধান্তহীনতা বিরাজ করছে যা দেশবাসী সমক্য অবগত রয়েছে। 

কয়েকমাস আগে ঢাকার  সাত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা  ঢাবি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র  বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে  আন্দোলনে নামলেন। শুরুতে সরকার পাত্তা দিলেন না। আন্দোলন যখন সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেল ঠিক তখনি আলোচনায় বসলেন এবং দাবি মেনে নিলেন। মাঝখানে মানুষের দূর্ভোগসহ রাষ্ট্রীয় নানা ক্ষয়ক্ষতি তো হয়েছেই। এখন আবার শুনছি, সরকার দাবি মেনে নিলেও বাস্তবায়নে কাজ করছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও আমি বিশ^াস করি, এই সরকারের কাছে এই দাবি করাটাও একটা অযৌক্তিক। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন শুরু করল, তখনো শুরুতে সরকারের পাত্তা না দেওয়ার যে রোগ সেটা আবার দেখা দিল। তিন দিনের লাগাতার আন্দোলন যখন উপদেষ্টার মাথায় পর্যন্ত বোতল পড়ল তখন সরকারের হুশ ফিরে এলো। মেনে নিল সব দাবি। কিন্তু মানুষের দূর্ভোগ ও দেশের ক্ষতি কিন্ত এখানেও যা হবার তাই হলো। 

ঢাবির  শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা  সাম্যের হত্যাকা-ের কারণে  চারদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অচল।  কিন্তু এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ব্যাপারে সরকারের  পক্ষ থেকে কার্যকর কোন  পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। আমার অভিজ্ঞতা বলে,  ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে সরকার শপথও করাবে,  আবার সাম্যের হত্যাকান্ডের বিষয়ে বিচারের সুস্পষ্ট আশ্বাসও দিবে। কিন্তু নদীর জল যতটুকু পরিস্কার আছে তার সব টুকু ঘোলা করে। 

আমার একটা বিষয় মাথায় ঢুকছে না যে, আদালতের যে রায়ে এবং যে ধারায় চট্রগ্রাম সিটির মেয়রের দায়িত্ব পেল ডা. শাহাদাত হোসেন একই বিষয়ের অপর আদালতের রায় এবং নির্বাচন কমিশন ঘোষিত গেজেট দেওয়ার পরেও সরকার কেন ইঞ্জিনিয়ার  ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ পড়াচ্ছে না। দুই জন আবার একই দল বিএনপিরই প্রার্থী। এমন যদি হতো যে, চসিকের ডা. শাহাদাত জামায়াত কিংবা এনসিপির আর ঢাকা দক্ষিণের ইশরাক বিএনপির । তাই বিএনপিকে দেবে না। দুই জনতো একই দলের। এখানে চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কি বাংলাদেশের অধীন আর খোদ রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কি দেশের সীমানার বাহিরের কোন ভিন দেশের সিটি। সরকার কেন এখানে অহেতুক বিমাতা সুলভ কিংবা গোয়ার্তমী করে নানা ভাবে অস্থির পরিবেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। এর থেকে কি ফায়দা তুলে নিতে চায় আমাদের কুমিল্লার সন্তান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, তা আমার জানা নেই। নাকি যারাই সরকারে  যায়, তাদের সুখে থাকতে ভূতে কিলায় এর মতো অবস্থা হয়। 

আমার গত তিন দশকের সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের অভিজ্ঞতা থেকে  আজ এই কলামে শতভাগ নিশ্চিত করে বলছি এবং আমার পাঠকগণও স্বাক্ষী থাকেন যে, সরকার ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়াতে অবশ্যই বাধ্য হবেন। শুধু শুধু গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা দক্ষিণের নাগরিকদের ২৮টি সেবা থেকে বঞ্চিত করে কষ্ট দিয়েছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এই সহজ সরল বুঝটি যত দ্রুত বুঝবেন দেশ এবং জাতির জন্য ততই মঙ্গল বয়ে আনবে। 

এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অংশীদার হিসেবে পরিচিত এনসিপির নেতাদের বক্তব্যে দিন দিন অসহিষ্ণুতা ফুটে উঠতে শুরু করেছে। 

বর্তমানে দেশের ইতিহাসে বিএনপির মতো একটি সর্ববৃহৎ দলকে কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে এটা যদি আমাদের নবগঠিত দলের তরুণ তুর্কিরা না বুঝেন,  তাহলে রাজনীতির আদর্শ লিপিতেই আটকে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে তাদের। 

গত ৫ আগষ্ট দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে যে কয়েকজন মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্র নেতা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম কুমিল্লার আরেক সম্পদ , কৃতি সন্তান হাসনাত আবদুল্লাহ। তার অমীত সাহস, কথা বলার স্টাইল ও তেজস্বী মনোভাব ও দৃঢ়তা আমাকে বরাবরই আকৃষ্ট করে। কিন্তু গত ১৬ মে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমীতে জুলাই সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বিএনপি সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা এই মুহুর্তে দেশীয় রাজনীতির হিসাব নিকাশে কতটুকু শোভনীয় হয়েছে তা নিকট ভবিষ্যতই বলে দিবে। 

বিএনপি সম্পর্কে আমি জনাব হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যটি সঠিক হয়েছে কি হয়নি সেই বিতর্কে যাব না। আমি শুধু এতটুকু বলি,নির্বাচনকে সামনে রেখে  যেই মুহুর্তে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য সবচেয়ে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হওয়া দরকার , সেই মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে বড় দলটির বিরুদ্ধে এই কথা বলে কি  এ্যাচিভ করতে চাইল হাসনাত আবদুল্লাহ তা আমার মতো কম জ্ঞান সম্পন্ন লোকের মাথায় আনে না । ইতিমধ্যে তার বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ১৯মে সোমবার কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপি কুমিল্লায় সংবাদ সম্মেলন করে হাসনাত আবদুল্লাহকে সাত দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছেন । নতুবা কুমিল্লায় তাকে কোন অনুষ্ঠানে আসতে দিবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল (২০মে) মঙ্গলবার হাসনাত আবদুল্লাহর উপজেলা কুমিল্লার দেবিদ্বারেও এই বক্তব্যের পক্ষ-বিপক্ষের মিছিল হয়েছে। 

সবচেয়ে বড় কথা, খ্যাতির বিরম্বনায় পড়ে গিয়ে যদি আমরা নিজের শরীরের বহন করার মতো ওজনই যদি ভুলে যাই,  তাহলে কিন্তু শুধু ব্যক্তি না দেশের জন্যই বড় ক্ষতি বহে আনবে। 

সুতরাং, সরকারকে অনুরোধ করব, বৈষম্যমুক্ত সমাজ বির্ণিমান করবে বলে  ২০২৪ এ ছাত্ররা রক্ত দিয়েছিল। মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রে একই বিষয়ে চট্রগ্রামে কার্যকর হবে আর ঢাকায় কার্যকর হবে না এটা সুস্পষ্ট বৈষম্য। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিন। আইনের চোখ সমান রাখুন। আর কালক্ষেপন না করে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ান অথবা চট্রগ্রাম সিটির মেয়রকেও ভুল করেছেন বলে বহিস্কার করে সমান্তালে আইনকে চলতে দিন। 

দেশের মধ্যে অস্থিরতা দিন দিন বাড়ছে। অস্থিরতা বাড়ছে সরকারের মধ্যেও। কতিপয় উপদেষ্টাদের মতিগতিও সুবিধার নয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জনাব, ড. মোহাম্মদ ইউনুস স্যারকে বলব, ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার ইতিহাস ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ এ রয়েছে। আপনার  সরকারের বয়স ১০মাস হতে চলল। তখনকার পরিবেশ পরিস্থিতি আর এখনকার পরিবেশ পরিস্থিতি এক নয়, ছিল না - এ কথা বলে সময় ক্ষেপনের আর সুযোগ নেই। আপনার ঘোষিত ডিসেম্বর ২৫   বা জুন ২৬ এর মধ্যে নির্বাচনে রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন। নিজের অর্জিত সম্মান রক্ষা করে দেশকে এক মহা অস্থিতিশিল অবস্থা থেকে উদ্ধার করুণ। দেশ এবং জাতি আজীবন আপনাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।

লেখক : সম্পাদক, দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লা জেলা।  ০১৭১১-৩৮৮৩০৮

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়