শিরোনাম
◈ পহেলগাঁও সন্ত্রাস নিয়ে কারাগার থে‌কে ভারতকে ইমরান খা‌নের হুম‌কি ◈ বার্সেলোনা ও  ইন্টার মিলানের শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ ৩-৩ গোলে ড্র ◈ শ্রীলঙ্কা‌কে হা‌রি‌য়ে সিরিজে এগিয়ে গে‌লো বাংলাদেশের যুবারা ◈ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে কাজ চলছে, আইএলওতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ঝুঁকিতে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন ◈ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে: আকাশসীমা বন্ধ, সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ◈ ৩২ বছর পর হতে যাচ্ছে জাকসু নির্বাচন, তারিখ ঘোষণা ◈ মানবিক করিডর আসলে কী, বিশ্বের কোথায় কতটা কার্যকর? ◈ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কি আসন্ন, হুঙ্কার-পাল্টা হুঙ্কার ◈ ব্রাজিলের কোচ হওয়ার স্বপ্ন সফল হ‌লো না আনচেলত্তির, রিয়াল মা‌দ্রিদেই থাক‌তে হ‌চ্ছে ◈ বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী চীন

প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০:৩৭ দুপুর
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইলিয়াস হোসেনের লাইভে আসা মেজর ডালিম এবং মিনহাজুল আরেফিন ভিন্ন ব্যক্তি : ফ্যাক্ট ওয়াচের প্রতিবেদন

শরিফুল হক ডালিম। যিনি মেজর ডালিম নামেই বেশি পরিচিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে।

সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে একটি লাইভ টকশোতে অংশ নিয়ে জনসম্মুখে এসেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে কারোও কারোও দাবি, এই ব্যক্তি মেজর ডালিম না। ভিন্ন কাউকে মেজর ডালিম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মিনহাজুল আরেফিন সিদ্দিক নামে একজনের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, এই মিনহাজকেই মেজর ডালিম হিসেবে দেখানো হয়েছে।

ইউটিউবের লাইভ টকশোতে অংশ নেওয়া ব্যক্তি আসলে মেজর ডালিম না, তিনি মিনহাজ। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মেজর ডালিম পরিচয়ে লাইভ টকশোতে অংশ নেওয়া ব্যক্তি এবং এই মিনহাজুল আরেফিন সিদ্দিক দুইজন আলাদা ব্যক্তি। অর্থাৎ, টকশোতে দেখানো ব্যক্তিটি মিনহাজ আরেফিন নন।

কে এই মেজর ডালিম?

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের একজন মেজর ডালিম। তার পুরো নাম শরিফুল হক ডালিম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন এই কর্মকর্তা মেজর ডালিম নামেই অধিক পরিচিত।  শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর মেজর ডালিম (পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) সেটি বাংলাদেশ বেতারে ঘোষণা দেন।

মেজর ডালিমের নিজের লেখা বই ‘আমি মেজর ডালিম বলছি’ থেকে তার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। বইটি থেকে জানা যায়, মেজর ডালিমের জন্ম ১৯৪৬ সালে। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর তিনি বিমান বাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুতেই সুদূর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যে দলটি সর্বপ্রথম মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিল তিনি ছিলেন তাদের একজন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও কৃতিত্বের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। সেনাবাহিনীর চাকরির বাইরে তিনি  বিদেশে বিভিন্ন বাংলাদেশি দূতাবাসে বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ১৯৯৫ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

মেজর ডালিম বঙ্গবন্ধু হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলেও দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো হদিস ছিল না বলে দেশী-বিদেশী সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা সংস্করণে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনের কোনো খোঁজ নেই। এ তিনজনের একজন মেজর ডালিম। বাকিরা হলেন, আব্দুর রশিদ ও মোসলেম উদ্দিন।

রশীদ ও ডালিমকে বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বহুদিন ধরেই তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছুই জানা যায়নি। পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী তাদের ‘অবস্থান সনাক্তকৃত নয়’৷

দৈনিক ডেইলি স্টারে ২০২২ সালের আগস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও তৎকালীন সরকার মেজর ডালিমকে খুঁজে বের করতে পারেনি বলে উল্লেখ করা হয়।

দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় শুধুমাত্র একটি পুরোনো ছবি ছাড়া মেজর ডালিমের কোনো ছবি বা ভিডিওচিত্রও পাওয়া যায় না। ফলে তাকে নিয়ে রয়েছে নানা ধোঁয়াশা।

মিনহাজুল আরেফিন সিদ্দিক ও ভিডিওতে থাকা মেজর ডালিম আলাদা ব্যক্তি

প্রবাসী ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেনের একটি লাইভ টকশো নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদন নজরে আসে ফ্যাক্টওয়াচের। গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি, ২০২৪) ‘মেজর ডালিমের এক হাতে একটি আঙুল নেই, কী ঘটেছিল?’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, টকশোর এক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইতিহাস বলতে শুরু করেন মেজর ডালিম পরিচয়ে কথা বলা সেই ব্যক্তি। তখন তিনি তার হাত দেখিয়ে জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আহত হয়ে বাম হাতের আঙুল হারিয়েছেন।

লাইভটির ১৪ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ে সেই ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে তার অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বা হাত উঁচিয়ে দেখান, তার বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলটি নেই।

২০১৯ সাল থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত বর্তমানে ঢাকায় বসবাসরত মিনহাজুল বলেন, ‘আমাদের চেহারায় সাদৃশ্য থাকায় আমার আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে নিয়ে মজা করতো। এই মজা থেকেই আমার ছবিটা ভাইরাল হয়ে যায়।’

মিনহাজুল আরেফিনের ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি নিজেও তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) একটি পোস্ট দিয়ে লিখেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, রাতারাতি মেজর ডালিম হয়ে গেছি।’

যেহেতু টকশোতে মেজর ডালিম পরিচয়ের ব্যক্তি দেখিয়েছিলেন যে, তার বা হাতের একটি আঙ্গুল নেই। তাই ফ্যাক্টওয়াচ মিনহাজুল আরেফিন যে ভিডিওর সেই ব্যক্তি নন সেটি প্রমাণে তার কাছ থেকে দুই হাতের ছবি ও ভিডিও চায়। তিনি ফ্যাক্টওয়াচের সঙ্গে তার একটি ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, তার দুই হাতেই সবগুলো আঙ্গুল রয়েছে। হাতের আঙ্গুলের এই তারতম্যই প্রমাণ করে মিনহাজুল আরেফিন ও ভিডিওর ওই ব্যক্তি দুইজন এক নন।

এ ছাড়া মিনহাজুল আরেফিনের আত্মীয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন নিপুর বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত করে বলতেছি, মিনহাজই মেজর ডালিম দাবিতে যে তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে, সেটি শতভাগ ভুয়া।’

এসব তথ্যের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট যে, মিনহাজুল আরেফিন সিদ্দিক ও লাইভের মেজর ডালিম পরিচয়ে থাকা ব্যক্তি দুইজন আলাদা। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি করা হয়েছে মিনহাজুল আরেফিন সিদ্দিককে ইউটিউব লাইভের মেজর ডালিম দাবি করার ভিত্তিতে। ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে লাইভ টকশোতে অংশগ্রহণ করা ব্যক্তি মেজর ডালিম ছিলেন কি ছিলেন না তা এই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে যাচাই করা হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়