শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনার পতনের পর ঐক্যে ভাঙন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিয়ে সন্দিহান মাহাথির; ড. ইউনূসকে বললেন ‘বড় মাপের মানুষ’ ◈ লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নাপিত পিতা-পুত্র আটক, কী ঘটেছে সেখানে? ◈ ভোলা ছাত্রদল নেত্রী ইপ্সিতার নদীতে লাশ উদ্ধার: আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা, রহস্য ঘিরে ধোঁয়াশা ◈ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ায় হতাশ ট্রাম্প, প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়লেন অশ্রাব্য ভাষায় (ভিডিও) ◈ ন্যাটো সম্মেলনের আগে ট্রাম্পকে মহাসচিব রুটের ‘অসাধারণ’ বার্তা ফাঁস, প্রশংসায় ভরপুর চ্যাট ঘিরে বিতর্ক ◈ ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় নিহত ইরানের শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানী ও পরিবার ◈ নগর ভবনের সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার আসিফ মাহমুদের: “কিছু হলেই আমাকেই দায় দাও” ◈ বিদেশিরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বোঝার চেষ্টা করছেন ◈ রাশিয়ায় দালালের খপ্পরে পড়ে যুদ্ধে প্রাণ গেল নরসিংদীর সোহানের ◈ ইরানে আক্রমণের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে প্রশ্ন, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির দাবি হাস্যকর

প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২২, ০২:১৭ রাত
আপডেট : ০৩ জুলাই, ২০২২, ০২:১৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘শিক্ষার পতন মানে একটি জাতিরও পতন’

জাকির হোসেন তপন

জাকির হোসেন তপন: নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘কোনও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক বোমা বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এর জন্য প্রয়োজন শুধু শিক্ষার মান নীচে নামিয়ে আনা এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় জালিয়াতির সুযোগ দেওয়া’। অর্থাৎ নষ্ট শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা ‘শিক্ষিত’ বলে ছাড়পত্র পাবে তাদের দ্বারা যেসব ঘটনা ঘটতে থাকবেÑচিকিৎসকদের হাতে রোগী মারা যাচ্ছে। প্রকৌশলীদের হাতে ভবন ধসে পড়ে। অর্থনীতিবিদ এবং হিসাবরক্ষকদের হাতে অর্থ হারিয়ে যায়। মানবতার মৃত্যু হয় এ ধরনের ধর্মীয় পণ্ডিতদের হাতে। বিচারকদের হাতে ন্যায়বিচার নষ্ট হয়ে যায়... অর্থাৎ ‘শিক্ষার পতন একটি জাতির পতন’।

প্রকৃত শিক্ষিত আর জ্ঞানী মানুষেরা সৎ জীবন যাপনে সচেষ্ট থাকেন। তাঁদের মুখের কথা আর কাজে খুব বেশি ফারাক তাই খুঁজে পাওয়া যায় না। তাঁদের বলা কথাগুলোও সারা পৃথিবী ব্যাপী যুগে যুগে মানুষ সমস্যা আর অবস্থা ব্যাখ্যা করতে তাই ব্যবহার করেন। ম্যান্ডেলা ক্ষমতায় এসে তাঁর স্বদেশি মানুষের দ্বারা নানা ধরনের অনৈতিক/অন্যায় চাপে পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো অন্যায়ের কাছে হেরে যাননি, আপোস করেননি।

ছোটবেলায় এই গল্পটি শুনেছিলাম। এক ‘খারাপ’ ব্যক্তি একবার হযরত মুহম্মদ (সা.) এর কাছে গেলেন, উদ্দেশ্য তিনি ভালো হয়ে যেতে চান। প্রায় সব ধরনের খারাপ স্বভাব, অভ্যাসই সেই লোকের ছিল। কিন্তু তিনি সব অভ্যাস একবারে ছাড়তে পারবেন না। প্রথমবার কেবল একটি ছাড়বেন; এ ব্যাপারে তিনি নবীজীর পরামর্শ কামনা করলেন। সব শুনে নবীজী চিন্তায় পড়লেন। তারপরে ভেবেচিন্তে বললেন, ‘আপনি মিথ্যা কথা বলা ছাড়ুন।’ ওই লোক তো দারুণ খুশি, শুধু মিথ্যা বলা ছাড়লেই হবে! এর কিছুদিন পরেই ওই লোক আবার এলেন নবীজীর কাছে, বললেন, আমি মিথ্যা বলা ছেড়ে দেওয়ার কারণে আর কোনো অপরাধই করতে পারছি না। অর্থাৎ সব অপরাধমূলক কাজ, খারাপ স্বভাবকে সচল রাখতে হলে মিথ্যাচার অপরিহার্য! মিথ্যাচার একেবারে বন্ধ মানেই হলো বাকি সবেরও যবনিকাপাত! 

আমি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক শিক্ষক নির্যাতন, সর্বগ্রাসী রুচির দীনতা আর অবক্ষয়কে আলাদা করে দেখছি না। রাষ্ট্র যখন সঠিক পথে পরিচালিত হয় না, অর্থাৎ সংবিধান, ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ বাক্য পাঠ করেও যারা তাঁর ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন না (বা ব্যর্থ হন) তখন রাষ্ট্রে নানা ধরণের অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ তৈরি হয়। রাষ্ট্র তথা সরকারের, তা সে যে দেশই হোক, প্রধান ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব/ কাজ হলো দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন। পৃথিবীর দেশে দেশে তাকিয়ে দেখুন যারাই এই মূলনীতিকে খুব কঠিনভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছেন সেসব দেশ আজ শিক্ষায়, জ্ঞানে, সৌন্দর্যে, জন নিরাপত্তায়, সু-শাসনে, ধনে, সম্মানে শীর্ষে। 

অত্যধিক মানহীন জনসংখ্যার চাপে এই ভারতীয় উপমহাদেশের অঞ্চল গুলোতে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা সব সময়ই রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরণের প্রভাব রেখে থাকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নানা উদাহরণ যেমন এই অঞ্চলে রয়েছে, তেমনি চরম অসহিষ্ণুতার বীভৎস সব উদাহরণ সব সময়ই ছিল, ইদানীং তা যেন বেড়ে চলেছে আরও! এখানেও চলে আসছে ওই শিক্ষার মানের ব্যাপারটা। একজন প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ কখনোই সাম্প্রদায়িকতার মতো নিম্নশ্রেণীর আবেগ দ্বারা পুরোমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত হন না। সে চালিত হয় যুক্তি দিয়ে, কার্য কারণ দিয়ে। সে কখনোই একের অপরাধের দায় নির্মম ভাবে অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দিতে পারে না। 

তাই শিক্ষার উচ্চ মান নিশ্চিত করুন, আইনকে তাঁর নিজ গতিতে চলতে দিন, বিচার বিভাগ, প্রশাসনকে সংবিধান দ্বারা চালিত হবার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনুন। দেখবেন শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলা, জুতোর মালা দেয়া, অপমান করা, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক ছাত্র ধর্ষণ, স্কুল পড়ুয়ার মোবাইলের জন্য বন্ধুকে হত্যা, সেতুতে মূত্র ত্যাগ- এসব কমতে কমতে নাই হয়ে যাবে। প্রতিটি মানুষ যখন এটা নিশ্চিত ভাবে জানবে যে অপরাধ করলে শাস্তি থেকে কোনোভাবেই রেহাই নেই, তখন অপরাধ অবশ্যই কমে যাবে। বিশে^ুর সফল দেশগুলো সে সাক্ষ্যই দিচ্ছে। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়