শিরোনাম
◈ নির্বাচনের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানো পুলিশ: প্রস্তুতি, চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা ◈ "পাষন্ড স্বামীর কান্ড" ঈদের দিন স্ত্রী কে জবাই করে হত্যা ◈ দ্রুতগতিতে টার্ন নিতে গিয়ে যাত্রীবাহী কোচ খাদে পড়ে ৫৫ যাত্রী আহত ◈ সৌদি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জানা গেলো ২০২৬ সালে কবে রমজান ও ঈদ ◈ ‌ক্রিকেটার‌দের পাওনা টাকা না দিয়ে দেশ ছাড়া ক‌রে‌ছে ওমান ক্রিকেট বোর্ড ◈ ভারতে দাঙ্গা লাগাতে চেয়েছিল পাকিস্তান'- জম্মু-কাশ্মীর সফরে গিয়ে বলেছেন নরেন্দ্র মোদী ◈ ‌টি‌কি‌টের দা‌বি‌তে বাফুফে ভবনের সামনেই ফুটবল আলট্রাসের ঈদ ◈ নেত্রীর সঙ্গে দেখা আমাদের প্রেরণা দেয়’—ঈদ রাতে ফিরোজায় বিএনপি নেতারা ◈ প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভব? কী বলছে নির্বাচন কমিশন ও বিশেষজ্ঞরা ◈ স্যার পাঁচ বছর, স্যার পাঁচ বছর’

প্রকাশিত : ০৮ জুন, ২০২৫, ০১:৩১ রাত
আপডেট : ০৮ জুন, ২০২৫, ০৩:১৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচনের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানো পুলিশ: প্রস্তুতি, চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই নির্দেশনার পর থেকেই বাংলাদেশ পুলিশ মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে যেকোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে প্রশ্ন উঠেছে—পুলিশ আসলে কতটা প্রস্তুত? তারা কতটা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে? আদৌ কি তারা আগের অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে?

গত ৫ আগস্টের পর মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে পুলিশ সদস্যদের। গত ১০ মাসে এই সংকট কাটিয়ে সংস্থাটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় মিছিল, প্রতিবাদ ও আন্দোলন দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে পুলিশ, যার ফলে বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের আস্থা কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করছেন, ভবিষ্যতে যেকোনও বড় জাতীয় ইভেন্টেও তারা সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে এবং সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ৯ মাস আগে পুলিশ বাহিনী কার্যত জনবিচ্ছিন্ন ও দুর্বল অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে তারা এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের গণতান্ত্রিক আচরণ নিশ্চিত করা এবং কোনও ছাড় না দিয়ে তাদের জবাবদিহির কাঠামোর মধ্যে আনা—এই দায়িত্ব পুলিশের ওপরই বর্তাবে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশকে অবশ্যই পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘যদি কেউ অন্যায়ভাবে নির্বাচিত হন, তাহলে তার দ্বারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই পুলিশের কেউ যেন কোনও ব্যক্তির হাতিয়ার না হয়, সবাই যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে।’ নতুন বাংলাদেশের পুলিশ হবে জনমুখী ও দায়িত্বশীল—এই বার্তাও দেওয়া হয়।

সূত্র আরও জানায়, যদি ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে তার আগেই পুলিশের প্রস্তুতি উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে যাবে। প্রতিটি সদস্য চেইন অব কমান্ড মেনে নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করবে। এ লক্ষ্যে সব ইউনিটকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাঁচ আগস্টের পর নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব পুলিশ বাহিনীকে অপারেশনাল অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। তখন অনেক সিনিয়র অফিসার অনুপস্থিত ছিলেন, ফলে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন এবং আমরা নাগরিক সেবা বিঘ্নিত না করে কীভাবে দ্রুত সেই সেবা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে কাজ করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি পুলিশ সপ্তাহে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন এবং নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সরকার প্রধানের নির্দেশ বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। মাঠপর্যায়ের সদস্যদের একই বার্তা দেওয়া হয়েছে—যেন তারা পেশাদারিত্ব বজায় রেখে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এখনকার পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত, আমরা জনগণের সহযোগিতাও পাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও আশা করি পাবো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচন মানেই ক্ষমতা দখল, আধিপত্য বিস্তার, অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং দলীয় কোন্দল। অনেক সময় এসব প্রভাব সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে গণ-অভ্যুত্থানের পর এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অতীতের কয়েকটি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব প্রার্থী যেকোনও উপায়ে জয়ী হতে চান—হোক তা কালো টাকা, পেশিশক্তি বা অস্ত্রের মাধ্যমে—তারা যেন নির্বাচনের মাঠ দখল করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই হবে। এবারের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।’

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং নিজেদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। নীতিনির্ধারক ও মাঠপর্যায়ের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করা এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই নির্বাচনি সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।’

এদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরাজিত শক্তি যেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে। পুলিশ নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে। যেকোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।’

সার্বিকভাবে বলা যায়, নানা সংকট পেরিয়ে পুলিশ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা চূড়ান্ত প্রস্তুতির পথে। পেশাদারত্ব ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পুলিশের ওপরেই নির্ভর করছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। উৎস: বাংলাট্রিবিউন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়