ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাস মালিকরা যাত্রীপ্রতি অতিরিক্ত ২০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এই প্রস্তাবে বিস্ময় প্রকাশ করেছে যাত্রী সাধারণ, যাত্রী কল্যাণ সংগঠন এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১২ মে) রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত ঈদ সংক্রান্ত অংশীজন সভায় বাস মালিকদের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
বাস মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদের সময় যাত্রী সাধারণের যাত্রা হয় একমুখী—অর্থাৎ শুধুমাত্র গ্রামের দিকে। ফলে ফিরতি পথে বাস ফাঁকা যায় এবং এতে লোকসান গুনতে হয়। এ কারণেই যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণের দাবি করা হয়েছে।
বাস মালিকদের যুক্তি: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম বলেন, ‘বাসে যদি ৭৫ শতাংশ যাত্রী থাকে, তাহলে ১০ শতাংশ লাভ হয়। কিন্তু ফেরার পথে যদি মাত্র ২৫ শতাংশ যাত্রী থাকে, তাহলে লোকসান হয়। তাই অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ঠিক যেমন- ঈদের সময় বিমানের ভাড়াও বেড়ে যায়।’
এম এ বাতেন, সমিতির কার্যকরী সভাপতি বলেন, ‘আমরা ঈদের আগে ৭ দিন ও পরে ৭ দিন—মোট ১৪ দিনের জন্য যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়ার প্রস্তাব দিয়েছি। এটি স্থায়ী ভাড়া বৃদ্ধির কোনো প্রস্তাব নয়।’
যাত্রী ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া: ঢাকার সাধারণ যাত্রী মো. রিপন মিয়া বলেন, ‘প্রতি ঈদেই বাস মালিকরা আমাদের জিম্মি করেন। এবার যদি ২০০ টাকা আরও বাড়ায়, সেটা হবে জুলুম।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা লিংকন মো. লুৎফরজামান সরকার বলেন, ‘প্রতি ঈদেই এমন দাবি তোলা হয়, পরে কেউ নির্দেশনা মানে না। বিশেষ করে এসি বাসের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’
গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ: জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়, ‘গত ঈদুল ফিতরে আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, বেশিরভাগ নন-এসি বাস ১০-৩০ শতাংশ এবং এসি বাস ৫০-১০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে। আমাদের কাছে এসব তথ্য ও তালিকা রয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতামত: বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ অনেক রুটেই ঈদের সময় দুইমুখী যাত্রী থাকে। এ নিয়ে একটি সমীক্ষা জরুরি।’
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ: সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, ‘ভাড়ার বিষয়টি আমরা ঈদের পর পর্যালোচনা করব।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার সহকারী শেখ মইনউদ্দিন, মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, সেতু সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
এছাড়া জানানো হয়েছে, ঈদে ৬ দিন মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে, যাতে যাত্রীবাহী যান চলাচলে স্বস্তি থাকে। উৎস: নিউজ২৪