শিরোনাম
◈ আ. লীগ নেতার ভাগ্নের ব্যবসা নিয়ে এনসিপি নেত্রীর দরকষাকষির অডিও ফাঁস ◈ আগামী নির্বাচনে যাদের জয়ী হবার কোনো সম্ভবনা নেই তারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে : মির্জা আব্বাস ◈ পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ছাড়া বিকল্প নেই: সুপ্রদীপ চাকমা ◈ শাহবাগে আর্থিক লেনদেন বিরোধে এনসিপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১ ◈ তারেক রহমান ফিরবেন নভেম্বরে, চলতি মাসেই ২০০ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমদ ◈ ‘ভোটকেন্দ্রে থাকবে বডি ক্যামেরা ও সিসিটিভি, উড়বে ড্রোন’ ◈ সাবেক স্ত্রীকে ‘মোটা’ বলায় আদালতে জরিমানা, স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ◈ ভারতের পর আফগা‌নিস্তানও পাকিস্তানকে পা‌নি দেবে না, বাঁধ দিচ্ছে নদীতে ◈ ভারতের বিরুদ্ধে টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি সিরিজে শক্তি বাড়ালো অস্ট্রেলিয়া, ফিরছেন ম‌্যাক্সও‌য়েল ◈ বাংলা‌দে‌শের বিরু‌দ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্পিন শক্তি বাড়ালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ

প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৩৮ দুপুর
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইসলামে অন্যায়ভাবে জমি দখলের ভয়াবহ শাস্তি

মানুষের সম্পদ, জমি ও মালিকানার অধিকার ইসলামে অত্যন্ত পবিত্র ও অবিচ্ছেদ্য একটি বিষয়। অন্যের সম্পত্তিতে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করা কেবল সামাজিক অপরাধ নয়, এটি এমন এক গুনাহ, যার শাস্তি পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নয়—পরকালের ভয়াবহ আযাবও এর জন্য নির্ধারিত হয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনে সালিম (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন,

قال رسول الله ﷺ: «من أخذ من الأرض شيئًا بغير حقه خُسف به يوم القيامة إلى سبع أرضين»

অর্থ: “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সামান্য পরিমাণ জমিও দখল করে নেয়, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিনের নিচ পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হবে।”(সহিহ বুখারী, হাদীস: ২৪৫৪; সহিহ মুসলিম, হাদীস: ১৬১০)

হাদিসের ব্যাখ্যা

হাদিসের এই বাণীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ বা দখল করার ভয়াবহ পরিণতির দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

‘সাত তবক জমিনে ধসিয়ে দেওয়া হবে’ —এর অর্থ হচ্ছে, এমন ব্যক্তি আল্লাহর কঠিন ক্রোধের শিকার হবে। কেউ কেউ একে রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন, অর্থাৎ তার গুনাহের গভীরতা ও ভয়াবহতা এত বেশি হবে যেন তাকে সাত তবক জমিন পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হয়। আবার অনেকে একে আক্ষরিক অর্থেও গ্রহণ করেছেন—আল্লাহর আদেশে কিয়ামতের দিন তাকে এমন শাস্তি দেওয়া হবে যা পৃথিবীর গভীরতম স্তর পর্যন্ত ধসিয়ে দেবে।

ইসলামী আইনে জমির অধিকার

ইসলাম স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে—

“وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ”

‘তোমরা নিজেদের মধ্যে অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না।

’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)
অন্যের জমি, বাড়ি, সম্পত্তি, এমনকি এক ইঞ্চি মাটিও অন্যায়ভাবে নেওয়া ইসলামে হারাম। এমন দখলদার ব্যক্তি যদি ইবাদতেও ব্যস্ত থাকে, তাহলেও আল্লাহ তার সেই ইবাদত গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ না সে অন্যায়ভাবে দখলকৃত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়।

ন্যায়ের সামাজিক তাৎপর্য

জমি-দখল বা সম্পত্তি আত্মসাৎ শুধু ব্যক্তিগত অপরাধ নয়; এটি সমাজে ফিতনা, হিংসা, মামলা-মোকদ্দমা ও বিদ্বেষের জন্ম দেয়। যেখানে অন্যায়ের মাধ্যমে কেউ নিজের সম্পদ বাড়ায়, সেখানে অন্য কেউ তার ঘর-বাড়ি হারায়, সন্তানদের ভবিষ্যৎ হারায়।

সমাজে ন্যায়পরায়ণতা, শান্তি ও সহযোগিতা বজায় রাখার জন্য ইসলাম সম্পদের সঠিক মালিকানা রক্ষাকে ঈমানের শর্তগুলোর অন্তর্ভুক্ত করেছে।
কিয়ামতের দিনে প্রতিফল

হাদিসের “সাত তবক জমিন পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া”—এই প্রতিশ্রুতি কেবল একটি প্রতীকী সতর্কবার্তা নয়, বরং তা মানবসমাজে অন্যায় দখলকারীর জন্য এক চিরস্থায়ী লাঞ্ছনার চিত্র। কিয়ামতের ময়দানে তার মুখমণ্ডল কালো হবে, শরীর ভারী শিকলে আবদ্ধ থাকবে, এবং পৃথিবীর মাটি তার পায়ের নিচ থেকে টেনে নামাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ”

‘আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করেননি; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছে।’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৩)

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট

আজকের সমাজে জমি-দখল, রেকর্ড জালিয়াতি, রাস্তা দখল বা প্রতিবেশীর জমিতে অনধিকার প্রবেশ সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অথচ এসব অন্যায় আমাদের সমাজের নৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করছে। ইসলাম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—দুনিয়ার কোনো জমি, সম্পদ, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু অন্যের হক নষ্টের দায় চিরস্থায়ী হয়ে যায়, যদি তা ফেরত না দেওয়া হয়।

হাদিস থেকে শিক্ষা

১. অন্যের সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা মারাত্মক কবীরা গুনাহ।
২. হক আদায় না করা পরকালে কঠিন শাস্তির কারণ হবে।
৩. জমি বা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ হলে ন্যায়বিচারের আশ্রয় নেওয়াই ইসলামী পথ।
৪. সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে ন্যায্যতা ও আমানতের মূল্যবোধ রক্ষা করা অপরিহার্য।

অতএব, সামান্য জমি বা সম্পদ অর্জনের লোভে নিজের পরকাল ধ্বংস করে দেওয়া কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মনে রাখতে হবে— “যে অন্যায়ভাবে এক বিঘা জমিও নেয়, কিয়ামতের দিন সে সাত তবক জমিনের নিচে ধসে যাবে।”

ইসলাম এমন এক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেছে, যেখানে ন্যায়বিচার ও আমানতদারিতা সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। জমি-দখল বা সম্পদ আত্মসাৎ কেবল দুনিয়ার অপরাধ নয়, এটি এমন এক অন্যায়, যা আল্লাহর দরবারে মানুষকে সাত স্তর জমিনের নিচে নামিয়ে দেবে। সুতরাং, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হলো—অন্যের হক হরণ থেকে বিরত থাকা এবং নিজের বৈধ উপার্জনে সন্তুষ্ট থাকা। সূত্র: কালের কণ্ঠ  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়