শিরোনাম
◈ আ. লীগ নেতার ভাগ্নের ব্যবসা নিয়ে এনসিপি নেত্রীর দরকষাকষির অডিও ফাঁস ◈ আগামী নির্বাচনে যাদের জয়ী হবার কোনো সম্ভবনা নেই তারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে : মির্জা আব্বাস ◈ পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ছাড়া বিকল্প নেই: সুপ্রদীপ চাকমা ◈ শাহবাগে আর্থিক লেনদেন বিরোধে এনসিপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১ ◈ তারেক রহমান ফিরবেন নভেম্বরে, চলতি মাসেই ২০০ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমদ ◈ ‘ভোটকেন্দ্রে থাকবে বডি ক্যামেরা ও সিসিটিভি, উড়বে ড্রোন’ ◈ সাবেক স্ত্রীকে ‘মোটা’ বলায় আদালতে জরিমানা, স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ◈ ভারতের পর আফগা‌নিস্তানও পাকিস্তানকে পা‌নি দেবে না, বাঁধ দিচ্ছে নদীতে ◈ ভারতের বিরুদ্ধে টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি সিরিজে শক্তি বাড়ালো অস্ট্রেলিয়া, ফিরছেন ম‌্যাক্সও‌য়েল ◈ বাংলা‌দে‌শের বিরু‌দ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্পিন শক্তি বাড়ালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ

প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:৩৬ সকাল
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নবীজির সুস্থতার শিক্ষা: জিবরাইলের দোয়া ও প্রাকৃতিক নিরাময়ের উপদেশ

মানবজীবনে সুস্বাস্থ্য কেবল দেহের নয়, আত্মা ও মন—সবকিছুর ভারসাম্য নিশ্চিত করারও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কুরআন ও হাদিসে বারবার দেহ ও আত্মার স্বাস্থ্যকে আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মহানবী (স.)-এর জীবন ও শিক্ষার মধ্যে সুস্থতা ও রোগমুক্তি সংক্রান্ত অসাধারণ নির্দেশনা পাওয়া যায়।

নবীজির শারীরিক দুর্বলতা ও জিবরাইলের আগমন
ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলিতে বর্ণিত আছে, একবার নবীজি (স.) কিছুদিন শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করেছিলেন। সেই সময় ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) এসে তাঁর কাছে উপস্থিত হন এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখান—

১. আরোগ্যের দোয়া (রুকইয়াহ)

২. প্রাকৃতিক ও শক্তিবর্ধক খাদ্য গ্রহণ

সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (স.) যখন অসুস্থ হতেন, তখন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) এসে তাঁকে আরোগ্যের দোয়া শিখিয়ে দিতেন এবং আল্লাহর অনুমতিতে শিফার দোয়া পাঠ করতেন।

উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি উবরিক, মিন কুল্লি দা’ইন ইউশফিক, ও মিন শার্রি হাসিদিন ইযা হাসাদ, ও শার্রি কুল্লি যি আইনিন।”

অর্থ: “আল্লাহর নামে তোমাকে আরোগ্য দিচ্ছি; তিনি যেন সব রোগ থেকে তোমাকে সুস্থ করেন; হিংসুকের হিংসা থেকে এবং বদনজর দেওয়া সবার অনিষ্ট থেকে তোমাকে রক্ষা করেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৮৫; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৮)

নবীজির বিনয় ও অনুযোগ
রাসুলুল্লাহ (স.) অত্যন্ত বিনয়ীভাবে জিবরাইল (আ.)-এর কাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতেন। হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, “হে জিবরাইল, আমি কষ্টে আছি।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৪৬৯১)

এরপর জিবরাইল (আ.) নবীজির মাথা ও শরীরে হাত বুলিয়ে এই দোয়াটি পাঠ করতেন। এই ঘটনা মুসলমানদের জন্য শিক্ষণীয়—রোগ বা দুর্বলতা প্রকাশ করা লজ্জার বিষয় নয়, বরং সমাধান ও সাহায্যের পথে ধৈর্য ও বিনয় প্রদর্শনের সুযোগ।

প্রাকৃতিক খাদ্য ও শক্তি পুনরুদ্ধার
জিবরাইল (আ.) নবীজিকে পরামর্শ দেন মধু, দুধ এবং যব (বার্লি) দিয়ে তৈরি একটি পানীয় গ্রহণের। এটি আরব অঞ্চলে ঐতিহাসিকভাবে “ফালুদা” বা “মিশ্র মিষ্ট পানীয়” নামে পরিচিত ছিল। এই পানীয় শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, হজমশক্তি উন্নয়ন ও স্নায়ু শক্তি জাগ্রত করতে সাহায্য করতো।

ইবনে কাইয়িম জাওযি লিখেছেন, “জিবরাইল (আ.) নবী (স.)-কে যে পানীয়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা ছিল যবের রস, দুধ ও মধুর মিশ্রণ। এটি শরীরের উত্তাপ প্রশমিত করে, শক্তি পুনরুদ্ধার করে ও পেট পরিষ্কার রাখে।” (যাদুল মাআদ, ৪/৩৬, দার আল-কুতুব আল-ইলমিয়্যা, বৈরুত, ১৯৯৮)

এই উপদেশ ইসলামি চিকিৎসাশাস্ত্রে নববী খাদ্যতত্ত্ব (Prophetic Nutrition) হিসেবে প্রমাণিত। নবীজির (স.) জীবন এই শিক্ষা দেয়—শরীর ও মন উভয়ই আল্লাহর নিয়ামত, সুতরাং সঠিক যত্ন অপরিহার্য।

দোয়া ও চিকিৎসা: যুগল সুরক্ষা
নবীজির (স.) জীবন থেকে স্পষ্ট হয়, রোগ বা দুর্বলতার সময়ে শুধু দোয়া যথেষ্ট নয়; প্রাকৃতিক খাদ্য ও চিকিৎসা গ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শিখিয়েছেন—

•দোয়া (রুকইয়াহ) দ্বারা আত্মিক আরোগ্য অর্জন করা যায়

•প্রাকৃতিক ও শক্তিবর্ধক খাদ্য দেহকে সুস্থ রাখে

•ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল বজায় রাখা আবশ্যক

সহিহ হাদিসে নবীজির (স.) খাদ্যাভ্যাস ও সুস্থতা রক্ষার নিয়ম উল্লেখিত, “আল্লাহ এমন কোনো রোগ দেননি, যার আরোগ্য পাঠাননি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৭৮)

এটি নির্দেশ করে যে, দোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদান একসঙ্গে চলার মধ্য দিয়ে প্রকৃত আরোগ্য আসে।

নববী জীবনধারার আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা
আজকের যুগে অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, অনিয়মিত জীবনধারা ও মানসিক চাপ বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। নবীজির (স.) জীবনধারা মুসলিম সমাজকে শিক্ষা দেয়—

১. দোয়া ও আত্মিক নিরাময়: প্রতিদিন আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির জন্য দোয়া করা।

২. প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ: দুধ, মধু, যব, খেজুর ইত্যাদি।

৩. পরিমিত আহার ও বিশ্রাম: অতিভোজন, অনিয়মিত ঘুম বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য থেকে বিরত থাকা।

৪. নিয়মিত শরীরচর্চা: হাঁটাচলা, ফ্লেক্সিবিলিটি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা।

শিক্ষা ও প্রেরণা
রোগ বা দুর্বলতা প্রকাশ করা লজ্জার বিষয় নয়; এটি সমাধানের পথ খোলে।

•প্রাকৃতিক খাদ্য ও শক্তিবর্ধক পানীয় শুধু নবীজির (স.) জন্য নয়, বর্তমান যুগের জন্যও উপযোগী।

•দোয়া, প্রাকৃতিক খাদ্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা—এই তিনের সংমিশ্রণেই নিহিত প্রকৃত আরোগ্য।

•নববী জীবনধারা আমাদের শেখায়, সুস্থ দেহ ও মন ছাড়া কার্যকর ইবাদত ও সঠিক জীবনযাপন সম্ভব নয়।

ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর শেখানো দোয়া ও খাদ্যসংক্রান্ত উপদেশ শুধু নবীজির (স.) জন্য নয়, বরং প্রতিটি মুসলমানের জন্য দিকনির্দেশ। প্রকৃত আরোগ্য আসে দোয়া, প্রাকৃতিক খাদ্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা মিলিয়ে।

এই শিক্ষার আলোকে মুসলমানরা শারীরিক ও আত্মিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে, যাতে ইবাদত, পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা যায়। সূত্র: প্রথম আলো

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়