শিরোনাম
◈ জমজমের পর আরেক বরকতময় পানি—কাবার ছাদ থেকে ঝরে পড়া রহমতের নালা ◈ “ডলার বাজারে স্বস্তি: সংকটের অবসান নাকি সাময়িক বিরতি?” ◈ অবশেষে আ.লীগ নেত্রী স্বপ্না আক্তার আটক ◈ বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য: দিল্লিতে যে বাড়িতে বসবাস করছেন শেখ হাসিনা ◈ তিন পোশাক কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করতে ইন্টারপোলকে চিঠি ◈ ভিসা নিয়ে যে বার্তা দিল ভারতীয় হাইকমিশন ◈ গাজীপুরের সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার ◈ “ডাকসু নির্বাচন নিয়ে হঠাৎ নাটকীয়তা, উত্তেজনায় ফেটে পড়ল ঢাবি ক্যাম্পাস” ◈ জিয়া পরিবার নিয়ে কুটুক্তি: বিতর্কিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি ◈ ৩৮ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এনবিআরের সহকারী কমিশনার মিতু বরখাস্ত

প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:০৭ রাত
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জমজমের পর আরেক বরকতময় পানি—কাবার ছাদ থেকে ঝরে পড়া রহমতের নালা

পবিত্র নগরী মক্কায় রয়েছে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর। একে কাবা শরিফ ও পবিত্র কাবাঘরও বলা হয়। প্রতি বছর কোটি কোটি মুসলিম হাজরে আসওয়াদের দিকে চেয়ে হাত তোলেন। জমজমের পানি পানের পাশাপাশি কাবা শরিফ তাওয়াফ করেন। পবিত্র এই কাবার বরকতে পৃথিবী স্থির হয়ে যায়। ধীরে ধীরে একে ঘিরে গোড়াপত্তন হয় মানবসভ্যতার। সেখানকার জমজম কূপের পবিত্রতম পানি সম্পর্কে প্রতিটি মুসলিমই জানেন। এটি কেবল একটি পানির উৎস নয়, বরং নবী ইবরাহিম (আ.) ও তার স্ত্রী হাজেরা এবং নবী ইসমাইল (আ.)-এর কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন।
 
কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো-জমজমের পাশাপাশি কাবাতেও রয়েছে আরেকটি বিশেষ ও পবিত্র পানির উৎস, যা হাজার বছরের বেশি সময় ধরে পরিমিত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। তবে মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এর খবর জানেন না। কারণ এটি ব্যাপকমাত্রায় আলোচিত হয়নি এবং পরিমাণে খুবই সীমিত। 

কাবাঘরের ছাদের আয়তন ১,৩০৬ বর্গফুট। এই ছাদে ঝরে পড়া বৃষ্টির পানি ধরার জন্য কাবা শরিফের উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি বিশেষ নকশা চোখে পড়ে যা ‘মিজাবুর রহমান’ নামে পরিচিত যার অর্থ ‘আল্লাহর রহমতের নল’ বা ‘ঝর্ণা’। এটি একটি সোনালি নকশাদার নালা বা পাইপ, যা কাবার ছাদ থেকে পানি নিচের দিকে নিয়ে আসে। শত শত বছর ধরে মরুময় এই শহরটিতে যখনই বৃষ্টি নামে, সেই পানি জমে এই নালা বা পাইপের মাধ্যমে নিচে পড়ে। কাবার এ পানিকে মুসলিমরা পবিত্র বলে মনে করেন।

তবে শুধু বৃষ্টির পানি বলে নয়, মিজাব থেকে ঝরে পড়া এ পানিকে নিয়ে প্রচলিত আছে যে, এটি বিশেষ বরকতময় এবং আল্লাহর রহমতের বিশেষ প্রতীক। পবিত্র হজ ও ওমরাহতে অংশ নেয়া বহু মুসল্লি ভিড় জমান এই পানি গায়ে মাখার জন্য। একে কাবার দ্বিতীয় ‘পবিত্র পানি’ বলে থাকেন অনেকে।

মক্কার ইতিহাসকার এবং প্রাচীন লেখক আল-আজরাকি তার ঐতিহাসিক ‘কিতাব আকবর-ই মক্কা’ বইয়ে উল্লেখ করেন যে, মিজাবের নিচে যারা নামাজ আদায় করেন, তাদের ‘নবজাতকের মতো পবিত্র’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১১৮৩-৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভ্রমণকারী ইবনে জুবায়ের বর্ণনা করেছেন, ভারী বৃষ্টির সময় তিনি দেখেন মুসল্লিরা মিজাবের নিচে এসে তাদের শরীর ভিজিয়ে নেন এবং আত্মিক তৃষ্ণা মেটান। তিনি বলেন, এই পানি ‘বরকতময়’ হিসেবে দেখা হয়। যদিও সরাসরি কোনো হাদিসে এই পানি বিশেষ তৌফিক বা নিরাময়কারী বলা হয়নি। তবে লোকমুখে এটি প্রচলিত রয়েছে। 

১৬২৬ সালের ভয়াবহ বন্যায় কাবা শরীফের তিনটি দেয়াল ধসে পড়লে পরের বছর (১৬২৭ সাল) কাবার ভিত্তি ও কাঠামোকে মজবুত করার জন্য মিজাব এবং শাধারওয়ান সংযোজন করা হয়। এর আগে কাবার ওপরে এমনভাবে ছাদ ছিল না। তবে ছাউনি জাতীয় কিছু ছিল। মিজাবের প্রথম কাঠের সংস্করণ কুরাইশ নির্মিত হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন যুগে এটি লোহা, রৌপ্য ও স্বর্ণ দিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রথম নালাটি বসানো হয় খলিফা হারুনুর রশীদের আমলে (অষ্টম শতাব্দী)। কিন্তু মিজাবটি বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে, নষ্ট হয়ে গেছে, নতুন করে বসানো হয়েছে। বন্যার পরে ১৬২৭ সালে অটোমান সুলতান মুরাদ  কাবাকে নতুনভাবে মজবুত করে পুনর্নির্মাণ করেন। তখন এতে বিশেষ সোনার মিজাব লাগানো হয়, যেটা এখনো রয়েছে। এর আগে মিজাব ছিল কাঠ বা কম টেকসই ধাতুর তৈরি, যা নষ্ট হয়ে যেত। এরপর সৌদি বাদশাহরা এটিকে সংস্কার করে আজকের অবস্থায় নিয়ে আসেন। 

জমজমের কূপের পানি সরাসরি হাজিরা পান করার নিয়ম থাকায় এর কথা গোটা বিশ্বের মুসলিমরা জানেন। কিন্তু মিজাবুর রহমান থেকে পড়া পানি সবার নাগালে আসে না। এটি শুধু বৃষ্টি হলে ঝরে পড়ে। তাছাড়া নিরাপত্তা ও ভিড়ের কারণে সবাই সেখানে পৌঁছাতে পারে না। ফলে অনেক মুসলিম এ পানি সচক্ষে দেখতে পাননি, এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব সম্পর্কেও জানেন না।

যারা এই পবিত্র পানির কয়েক ফোঁটাও গায়ে মাখতে সামর্থ্য হয়েছেন, তারা একে আল্লাহর বিশেষ রহমত বলে বিশ্বাস করেন। অনেকের ধারণা, এ পানি শরীর ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এটি আল্লাহর ঘরের ছাদ থেকে সরাসরি ঝরে পড়া পানি হওয়ায় এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব জমজমের পরেই।

এখনও বৃষ্টির সময় মিজাব থেকে পানি ঝরে পড়ে, ঠিক যেমন ৪০০ বছর আগেও পড়তো। সৌদি কর্তৃপক্ষ কাবার ছাদকে আধুনিক প্রযুক্তিতে সাজালেও এই প্রাচীন স্থাপত্যটি অক্ষত রেখেছে। তাই হজ বা ওমরাহতে গেলে যে কেউ দেখতে পাবেন এই পবিত্রতম পানি। উৎস: চ্যানেল24

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়