ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে নতুন একটি বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এই বিলে বলা হয়েছে, দেশটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি কোনো গুরুতর অভিযোগে গ্রেপ্তার বা আটক হয়ে ৩০ দিন কারাগারে বন্দি থাকেন, তাহলে তারা আর পদে থাকতে পারবেন না। তাদের ওই পদ বাতিল হয়ে যাবে।
আজ বুধবার জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে এই বিল উত্থাপন করবে বিজেপি নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। এরপর বিলটি পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে পাঠানো হতে পারে। মূলত এটি একটি সংবিধান সংশোধন বিল। খসড়া বিলে সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদ সংস্কারের কথা বলে হয়েছে। সংস্কারের পর ওই অনুচ্ছেদে কারাদণ্ডের কারণে মন্ত্রীদের পদ চলে যাওয়ার বিষয়টি যোগ করা হবে।
সরকার দাবি করছে, এই পদক্ষেপ দুর্নীতি ও অপরাধে জড়িত রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেবে এবং জনমানসে আস্থা ফিরিয়ে আনবে।
কিন্তু বিরোধী শিবিরে এই বিল ঘিরে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মুকুল সিংভী অভিযোগ তুলেছেন, এটি বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের হঠাতে সবচেয়ে সহজ অস্ত্র। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চালানো যাবে। অথচ শাসকদলের কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে কখনওই ধরা হবে না।
তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের পোস্টে লিখেছেন, সংবিধান রক্ষার বদলে সরকার ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। কৃষক, শ্রমিক, গরিবদের উন্নয়নে যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে এখন বিরোধীদের দমন করাই প্রধান লক্ষ্য।
মহুয়া মৈত্রও বলেন, মাত্র ২৪০ সাংসদ নিয়ে বিজেপি সংবিধান বদলে ফেলছে। নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদের ভুয়া মামলায় গ্রেফতার করে সরিয়ে দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিল সংসদে পাশ হলে ভারতের ফেডারাল কাঠামো ও বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা প্রশ্নের মুখে পড়বে। সরকারের যুক্তি, দোষী হলে তবেই পদ হারাবে নীতি দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের রক্ষা করছে। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়ার চক্রান্ত।
আজকের অধিবেশনে তীব্র হট্টগোলের মধ্যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হতে পারে। তবে বিরোধীরা আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে—প্রয়োজনে টেবিল ভাঙব, বিল ছিঁড়ে ফেলব। ফলে লোকসভায় আগামী কয়েকদিন উত্তাল বিতর্কের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।