১২ দিনের যুদ্ধের সময় ইরানের বিরুদ্ধে হামলার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের উপর ‘মাহসা আমিনি’ লেখা কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে নতুন প্রোপাগাণ্ডা শুরু করেছে ইসরাইল। ইহুদি রাষ্ট্রটি আশা করেছিল, যুদ্ধের সময় জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হলেও তারা এই ছবিগুলি ছড়িয়ে জনমত সংগ্রহে সক্ষম হবে। ভাইরাল করা এসব ছবিতে একজন ইসরায়েলি নারী সেনাকে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের উপর ‘মাহসা আমিনি’ লিখতে দেখা যাচ্ছে।
তবে, ইসরাইলি অস্ত্রশস্ত্রের উপর ‘মাহসা আমিনি’ লেখা ছবি শেয়ার করার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইসরাইলকে সমর্থন তো দূরের কথা অনেক ইরানি এখন ২০২২ সালের সহিংসতায় ইসরায়েলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যে ঘটনা ইরানকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল।
ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিজের (এফডিডি) সাথে যুক্ত একজন ব্যক্তি এক্স-এ লিখেছেন, একটি সূত্র আমাকে এমন কিছু ছবি দিয়েছে, যেখানে একজন মহিলা ইসরায়েলি ফ্লাইট টেকনিশিয়ানকে ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের উপর মাহসা আমিনির প্রতি উৎসর্গ করে লিখতে দেখা যাচ্ছে।
এফডিডি হচ্ছে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক একটি ইসরায়েলপন্থী লবি গ্রুপ যারা দীর্ঘদিন ধরে ইরানের উপর হামলা এবং দেশটির সরকার উৎখাতের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আসছে। গ্রুপটির সাথে ইসরায়েলি শাসকদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এটি নিয়ে ইরানীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, এফডিডি কর্মী কি ইরানিদের বোকা বলে মনে করে। কেউ কেউ লিখেছেন, ‘মাহসা আমিনি’ লেখা অস্ত্র দিয়ে ইরানের কত নারীকে হত্যা করেছে ইসরাইল?
তেহরানের একজন এক্স ব্যবহারকারী তরুণী লিখেছেন, ‘‘আপনারা আমাদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত বোমাগুলিতে মাহসা আমিনির নাম লিখেছো এবং আমাদের কাছ থেকে আশা কর, আমরা ইসরায়েলকে ধন্যবাদ জানাবো?’তোমাদের ইসরায়েলিদের সাহস অবিশ্বাস্য এবং ঘৃণ্য।’’
১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে একটি অপ্রত্যাশিত এবং অভূতপূর্ব যুদ্ধ শুরু করে। নেতানিয়াহু একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে দাবি করেন, তার "লড়াই" ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে নয় বরং তাদের সরকারের বিরুদ্ধে, তাদেরকে "স্বাধীনতার জন্য" "জেগে ওঠার" আহ্বান জানান। ১৩ জুন থেকে ২৪ জুনের মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৬০ জন ইরানি নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, যার মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসরায়েল এবং তার মিত্র এবং অপরাধের অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করেছিল, তারা প্রোপাগাণ্ডা এবং বেসামরিক অবকাঠামোতে আক্রমণের মাধ্যমে ইরানি জনগণকে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে পারবে। তবে, এই উদ্দেশ্য পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ইরান এবং পশ্চিমা উভয় জরিপের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুদ্ধের সময় ইরান সরকার আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সূত্র: তেহরান টাইমস
এক্স-এ অপর একজন ইরানি লিখেছেন, ‘‘আমরা যুদ্ধের সময় তোমার প্রতারণার ফাঁদে পা দেইনি এবং এখন অবশ্যই দিবো না। তোমাদের ভয়ঙ্কর এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাহসা আমিনিকে কাজে লাগাবে না।’’
২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি একজন ইরানি মহিলা যিনি তেহরান পুলিশের হাতে আটক হওয়ার কয়েকদিন পর মারা যান। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি একজন অফিসারের সাথে কথা বলার সময় থানায় পড়ে যাচ্ছেন। ভিডিওতে কোনও শারীরিক ঝগড়া দেখা যায়নি এবং হাসপাতালের রিপোর্টে দেখা গেছে, তিনি একটি পূর্ব-বিদ্যমান শারীরিক অবস্থার কারণে মারা গেছেন। শৈশবে তার মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তার মৃত্যু প্রথমে বিক্ষোভের সূত্রপাত করে, যা পরে মারাত্মক দাঙ্গায় পরিণত হয়। ২০২২ সালের বসন্তে কমপক্ষে ৩০০ জন নিহত হয়, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীও ছিলেন। সেই সময়, ইরান সরকার ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিরতা সংগঠিত করার এবং ইন্ধন জোগানোর জন্য অভিযুক্ত করে। যুদ্ধ এবং ইসরায়েল তাদের প্রচারণায় মাহসা আমিনির নাম ব্যবহারের পর থেকে এই দাবি উল্লেখযোগ্যভাবে সমর্থন লাভ করছে। সূত্র: তেহরান টাইমস