বিশেষ এই তদন্ত ‘অপারেশন ওয়েডলক’ নামে পরিচিত। ৩৫ জন জন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই মিশন পরিচালনার দায়িত্বে ছিল এমআই৫। তারা বিশ্ব ঘুরে এই বিশেষ গোপন অভিযান পরিচালনা করেছেন।
স্নায়ু যুদ্ধের পর ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রধানদের বাধ্য করা হয় সবচেয়ে সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি তদন্ত শুরু করতে। কারণ সন্দেহ ছিল গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর ভেতরে কোনো এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাশিয়ার হয়ে (ডাবল এজেন্ট) কাজ করছেন।
সন্দেহভাজন এই রুশ দ্বৈত চর শনাক্ত করার পেছনে প্রায় দুই দশক সময় ব্যয় করেছে ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কিন্তু প্রমাণের অভাবে শেষ পর্যন্ত সেই তদন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র দেওয়া গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তটি শুরু করা হয়। এই তদন্ত ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়ে আনুমানিক ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলে।
বিশেষ এই তদন্ত শেষ পর্যন্ত ‘অস্পষ্ট ফলাফল’ উল্লেখ করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি সন্দেহভাজন কর্মকর্তা এমআই৬ ছেড়ে দেন বলেও জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
একজন সূত্রের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, ‘আমাদের বলা হয়েছিল সন্দেহভাজন ব্যক্তি একজন রুশ গুপ্তচর। যুক্তরাষ্ট্র মনে করত তিনি রাশিয়ার কাছে তথ্য ফাঁস করছেন। মিশনটি এমআই৫-এর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছিল।’
সন্দেহভাজন কর্মকর্তার বাড়িতে নজরদারি ক্যামেরা বসায় এমআই৫। লন্ডনে তার গতিবিধি অনুসরণ করার পাশাপাশি বিদেশ সফরেও তাকে অনুসরণ করা হতো। এমআই৫-এর ধারণা ছিল, সন্দেহভাজন গুপ্তচরের আরও দুই সহযোগী লন্ডনে আছে। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রমাণই পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, ‘ভেবেছিলাম হয়তো আরেকজন কিম ফিলবি আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।’
কিম ফিলবি ছিলেন ক্যামব্রিজ ফাইভ নামক বিখ্যাত ব্রিটিশ গুপ্তচর চক্রের একজন। চক্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও স্নায়ু যুদ্ধের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে যুক্তরাজ্যের গোপন তথ্য পাচার করত।
তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই এমআই৬ ছেড়ে দেন সন্দেহভাজন। ব্যাপক তদন্ত চালানো সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির কোনো প্রমাণ পায়নি এমআই৫।
একজন সূত্র জানায়, ‘এমআই৫ কখনোই চূড়ান্ত প্রমাণ পায়নি। তবে মিশনটি ছিল অস্বাভাবিক রকম দীর্ঘ... যতদূর মনে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে লম্বা ও ব্যয়বহুল মিশন।’
যুক্তরাজ্য বারবারই প্রমাণ ছাড়াই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপে গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে। ২০১৮ সালে বহুল আলোচিত এক ঘটনায় লন্ডনের অভিযোগ ছিল সাবেক রুশ সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং পরবর্তীতে এমআই৬-এর এজেন্ট সার্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যাকে বিষপ্রয়োগে হত্যাচেষ্টা করেছিল মস্কো। কিন্তু রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০২২ সালে ইউক্রেন সংকট গভীর হওয়ার পর থেকে মস্কো ও লন্ডনের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। যুক্তরাজ্য কিয়েভের অন্যতম শক্ত সমর্থক। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহও করছে দেশটি।
রুশ কর্মকর্তাদের দাবি, রাশিয়ার ভেতরে ধ্বংসাত্মক মিশনের উদ্দেশে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা।