শিরোনাম
◈ চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকার ভূমিকা নিয়ে সতর্ক নয়াদিল্লি: ‘নিবিড় নজর’ রাখছে ভারত ◈ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির পর ভারতের সঙ্গেও 'বড় চুক্তি'র ইঙ্গিত ট্রাম্পের ◈ ‘জুলাই যোদ্ধার’ স্বাস্থ্য কার্ড যুবলীগ কর্মীর হাতে! ফেরত আনল প্রশাসন ◈ ক্লাব বিশ্বকা‌পের শেষ ষোলোতে ম‌্যান‌চেস্টার সিটি ◈ রেডবুল‌কে ৩-০ গো‌লে হা‌রি‌য়ে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় রিয়াল মাদ্রিদ ◈ আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তি হলে ইরান এমন শিক্ষা দেবে যা ইতিহাস হয়ে থাকবে ◈ ইরানের উপর হামলা জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন,বিবৃতি ব্রিকসের ◈ রেলওয়ের কেনাকাটায় পুকুরচুরি: পরিচ্ছন্নতা উপকরণ কিনতে ২৫০০০ ঢাকার বিল আড়াই লাখ টাকা! (ভিডিও) ◈ গাজায় ৫৪৯ জন সাহায্য চাইতে গিয়ে নিহত ◈ গাজায় এক তৃতীয়াংশ পরিবার খাবারই পা‌চ্ছে না, অ‌নেক পরিবার এক বেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছে

প্রকাশিত : ২৭ জুন, ২০২৫, ০৯:৫৮ সকাল
আপডেট : ২৭ জুন, ২০২৫, ০১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনে জরুরি অবস্থা জারির আরেক অজানা কাহিনী

এল আর বাদল: ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে 'ইমার্জেন্সি' বা জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এরই সঙ্গে ভারত এমন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করে যেখানে নাগরিকদের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা হয় এবং বহু রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলেও পাঠানো হয়।

জরুরি অবস্থায় সময় ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃত্ববাদের আড়ালে নিঃশব্দে ভারতকে নতুনভাবে কল্পনা করতে শুরু করেছিল। তারা 'চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স'-এর মাধ্যমে গণতন্ত্র রক্ষা করার পরিবর্তে ভারতকে 'কমান্ড' বা নিয়ন্ত্রণের অধীনে থাকা একটা রাষ্ট্র হিসাবে পরিচালনা করতে চেয়েছিল।

ঐতিহাসিক শ্রীনাথ রাঘবন তার নতুন বইয়ে সেই কথাই তুলে ধরেছেন। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

প্রসঙ্গত, 'চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স'-এর এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অংশের (যেমন সরকারি শাখা) এমন ক্ষমতা থাকে, যারমাধ্যমে একে অপরকে সীমাবদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ইন্দিরা গান্ধী অ্যান্ড দ্য ইয়ার্স দ্যাট ট্রান্সফর্মড ইন্ডিয়া' শীর্ষক ওই বইয়ে অধ্যাপক রাঘবন লিখেছেন, কীভাবে ইন্দিরা গান্ধীর শীর্ষ আমলা এবং দলের অনুগতরা রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার জন্য চাপ দিতে শুরু করেছিলেন। এমন একটা ব্যবস্থা যা নির্বাহী ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করে, 'বাধা সৃষ্টিকারী' বিচার বিভাগকে কোণঠাসা করে এবং সংসদকে 'প্রতীকী' করে তোলে।

শক্তিশালী রাষ্ট্রপতি শাসন সংক্রান্ত এই চিন্তা-ভাবনা ফরাসি জেনারেল এবং রাষ্ট্রনায়ক শার্ল দু গলের আদর্শে তৈরি ফ্রান্স থেকে অনুপ্রাণিত। ইমার্জেন্সির সময় কংগ্রেসের সেই প্রচেষ্টা স্পষ্টতই সংসদীয় গণতন্ত্রকে ছাপিয়ে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

'ইন্দিরা গান্ধী অ্যান্ড দ্য ইয়ার্স দ্যাট ট্রান্সফর্মড ইন্ডিয়া' বইয়ে অধ্যাপক রাঘবন জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও অভিজ্ঞ কূটনীতিক বিকে নেহেরু জরুরি অবস্থাকে 'জনগণের সমর্থনে সৃষ্টি হওয়া অসীম সাহস ও ক্ষমতার সফর' বলে প্রশংসা করে একটা চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে ওই মুহূর্তকে কাজে লাগানোর জন্য আহ্বান জানান।

বিকে নেহেরু লিখেছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্র কিন্তু "আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী জবাব দিতে পারেনি।"

এই ব্যবস্থা (সংসদীয় গণতন্ত্র) নির্বাহী বিভাগ নির্বাচিত আইনসভার সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল থেকেছে। "জনপ্রিয়তার কথা ভেবেছে এবং যে কোনো রকমের অপ্রীতিকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছে।"

অধ্যাপক রাঘবনের বইয়ে উল্লখ করা হয়েছে যে, মি. নেহরু বলেছিলেন ভারতের প্রয়োজন সরাসরি নির্বাচিত একজন রাষ্ট্রপতি, যিনি সংসদীয় নির্ভরতা থেকে মুক্ত এবং জাতীয় স্বার্থে "কঠিন, অপ্রীতিকর এবং অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত" নিতে পারবেন। তিনি যে মডেলের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন তা হলো শার্ল দু গলের গলের ফ্রান্স, যেখানে রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা আছে।

মি. নেহেরুর কল্পনা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে সাত বছরের। সংসদ ও রাজ্য বিধানসভায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে, বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা খর্ব করা হবে এবং গণমাধ্যমকে কঠোর আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এমনকি তিনি সাম্যের অধিকার বা বাক স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারকে তাদের ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত করার পক্ষে ছিলেন মি. নেহেরু।

তিনি মিসেস গান্ধীকে অনুরোধ করে লিখেছিলেন, "আপনার যখন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তখন এখনই সংবিধানে এই মৌলিক পরিবর্তনগুলো করুন।"

তার সেই সমস্ত মতামতকে "আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন" প্রধানমন্ত্রীর সচিব পিএন ধর। এরপর ইন্দিরা গান্ধী বিকে নেহেরুকে তার দলের নেতাদের সঙ্গে এই সমস্ত ধারণা নিয়ে আলোচনা করার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

তবে তিনি "একেবারে স্পষ্ট ও জোরালোভাবে" বলেছিলেন, এই বিষয়ে তার অনুমোদন রয়েছে এমন ধারণা যেন কারও তৈরি না হয়। অধ্যাপক রাঘবন তার বইয়ে লিখেছেন, জগজীবন রাম এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরণ সিংয়ের মতো প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা ওই চিন্তাধারার সমর্থন করেন।

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "নির্বাচনের মতো অর্থহীন বিষয় বাদ দিন। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তবে আমি বলব আমাদের বোনকে (ইন্দিরা গান্ধী) আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি করে দেওয়া হোক। আর অন্য কিছু করার দরকার নেই।"

"তবে, দু'জন অ-কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে একজন, তামিলনাড়ুর এম করুণানিধি কিন্তু এতে খুশি হননি।"

অধ্যাপক রাঘবন লিখেছেন, এরপর বিকে নেহেরু যখন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আবার কথা বলেন, তখনও কিন্তু তিনি (ইন্দিরা গান্ধী) ওই বিষয়ে কোনোরকম প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি ছিলেন না। তিনি তার নিকটতম সহযোগীদের ওই সমস্ত প্রস্তাবগুলোকে আরও বিশ্লেষণ করে দেখতে বলেন।

ফলস্বরূপ অতি গোপনে একটা খসড়া তৈরি করা হয়, যার নাম "আ ফ্রেশ লুক অ্যাট আওয়ার কনস্টিটিউশন: সাম সাজেশনস" (আমাদের সংবিধানের নতুন চেহারা: কিছু পরামর্শ)।

একমাত্র অতি বিশ্বস্ত পরামর্শদাতাদের মধ্যেই এই খসড়া সীমাবদ্ধ ছিল। এতে এমন একজন রাষ্ট্রপতির বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যার ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-এর ক্ষমতা চেয়ে বেশি হবে। তার বিচার বিভাগীয় নিয়োগ এবং আইন প্রণয়নের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে থাকবে নতুন "সুপিরিয়র কাউন্সিল অফ জুডিশিয়ারি" যা "আইন ও সংবিধান" ব্যাখ্যা করবে এবং কার্যকরভাবে সুপ্রিম কোর্টকে বাতিল করবে।

মি. গান্ধী এই নথি মি. ধরের কাছে পাঠিয়েছিলেন। মি. ধর মনে করেছিলেন, "সংবিধানকে দ্ব্যর্থকভাবে কর্তৃত্ববাদের দিকে চালিত করা হচ্ছে, বিকৃতও করা হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি ডিকে বড়ুয়া দলের ১৯৭৫ সালের বার্ষিক অধিবেশনের সময় প্রকাশ্যে সংবিধানের "পুঙ্খানুপুঙ্খ পুনর্বিবেচনার" আহ্বান জানান। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল পরিস্থিতির জল মাপা।

ওই চিন্তা-ভাবনা কখনোই কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের আকার নেয়নি। কিন্তু এর ছায়া পড়েছিল ১৯৭৬ সালে পাশ হওয়া বিয়াল্লিশতম সংশোধনীর সময়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের ক্ষমতা প্রসারিত হয়, বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা সীমিত হয় এবং নির্বাহী কর্তৃত্বকে আরও কেন্দ্রীভূত করা হয়।

এই সংশোধনীর ফলে কোনো আইন বাতিল করা কঠিন হয়ে ওঠে। কারণ এরজন্য পাঁচ বা সাতজন বিচারকের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে সংবিধানের 'মৌলিক কাঠামোগত মতবাদ'কে (যা সংসদের ক্ষমতা সীমিত করে) লঘু করার চেষ্টা করা হয়।

এছাড়া বিভিন্ন রাজ্যে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, অঞ্চলভিত্তিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং প্রেসিডেন্ট শাসনের মেয়াদ ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করার জন্য কেন্দ্রকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর ফলে নির্বাচনি বিরোধও বিচার বিভাগের নাগালের বাইরে চলে যায়।

রাষ্ট্রপতি শাসন না হলেও, এক্ষেত্রে তার একটা জিনগত প্রতিফলন অবশ্যই ছিল- যার মধ্যে শক্তিশালী নির্বাহী বিভাগ, প্রান্তিক বিচার বিভাগ এবং দুর্বল 'চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সিস্টেম'-এর মতো পদক্ষেপ ছিল। 'দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকা' সতর্ক করেছিল, "এটা নিশ্চিত যে এই সংশোধনী সাংবিধানিক ভারসাম্যকে সংসদের দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়"।

এরইমধ্যে ইন্দিরা গান্ধীর সমস্ত অনুগতরা এর পক্ষে ছিল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বংশী লাল প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইন্দিরা গান্ধীর জন্য "আজীবন ক্ষমতার" থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশের কংগ্রেস সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে একটা নতুন গণপরিষদের আহ্বান জানান।

অধ্যাপক রাঘবন লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী এসব দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি এই সমস্ত পদক্ষেপ বন্ধ করতে সংসদে সংশোধনী বিল দ্রুত পাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

এরপর ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে, ওই বিল সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হয়, ১৩টা রাজ্যের আইনসভা দ্বারা অনুমোদিত হয়। শেষপর্যন্ত রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর পাওয়ার পর আইনে পরিণত হয়।

তবে, ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর শোচনীয় পরাজয়ের পর, জনতা পার্টি পরিস্থিতিকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।

তেতাল্লিশতম এবং চল্লিশতম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের কর্তৃত্ববাদী বিধানগুলো বাতিল করা হয় এবং গণতান্ত্রিকভাবে 'চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স'-এর পুনরুদ্ধার করা হয়।

অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং নেতৃত্বের লড়াইয়ের কারণে জনতা পার্টির সরকার ভেঙে যাওয়ার পরে ১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে ইন্দিরা গান্ধী আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন।

প্রসঙ্গত, দুই বছর পরে দলের প্রধান নেতারা আবার রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুলতে থাকেন। ১৯৮২ সালে, রাষ্ট্রপতি সঞ্জীব রেড্ডির মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই পদে বসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

তার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পরে প্রকাশ করেছিলেন যে, ইন্দিরা গান্ধী এই বিষয়ে "খুবই সিরিয়াস" ছিলেন। কংগ্রেস পার্টিকে বহন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন মিসেস গান্ধী।

রাষ্ট্রপতির পদের জন্য চিন্তা-ভাবনাকে "তার দলকে শক ট্রিটমেন্ট" দেওয়ার উপায় হিসেবে দেখেছিলেন তিনি। এতে কংগ্রেস নতুন উদ্দীপনা পেতে পারে বলেও মনে করেছিলেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত তিনি পিছু হটেন। পরিবর্তে, তিনি তার অনুগত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জইল সিংকে রাষ্ট্রপতি পদে বসান। তবে ব্যাপক চেষ্টা সত্ত্বেও, ভারত কখনই রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার দিকে এগোতে পারেনি।

গভীর কৌশলী রাজনীতিবিদ হিসাবে বিবেচিত ইন্দিরা গান্ধী কি নিজেকে আটকেছিলেন না কি আমূল পরিবর্তনের জন্য কোনো জাতীয়স্তরে কোনো আকাঙ্ক্ষা ছিল না?

অধ্যাপক রাঘবনের মতে, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্র ১৯৬৭ সালের পর থেকে আরও ভঙ্গুর রাজনৈতিক জোটের প্রতিযোগিতামূলক এবং অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

এই সময়ে, অনেকে পরামর্শ দিতে শুরু করেন রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা জারি করলে তা ভারতের পক্ষে আরও উপযুক্ত হতে পারে।

সমস্ত রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা সিরিয়াস আকার নেওয়ার পর জরুরি অবস্থার বিষয়টা আসে। উদ্দেশ্য ছিল সিস্টেমকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো, যাতে তৎক্ষণাৎ তার ক্ষমতার ওপর আধিপত্য দৃঢ় হয়। সেখানে বড় কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল না- তার (ইন্দিরা গান্ধীর) শাসনের স্থায়ী পরিণতির বেশিরভাগই সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত ছিল," অধ্যাপক রাঘবন বিবিসিকে বলছিলেন।

জরুরি অবস্থার সময়, তার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল স্বল্পমেয়াদী- যে কোনো চ্যালেঞ্জ থেকে তার অফিসকে রক্ষা করা। বিচার বিভাগও যাতে তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য বিয়াল্লিশতম সংশোধনী তৈরি করা হয়েছিল।

কংগ্রেসের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা সংক্রান্ত চিন্তাটা কখনোই পুরোপুরি ম্লান হয়নি। এরপর ১৯৮৪ সালের এপ্রিলের শেষের দিকে, জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বসন্ত সাঠে ক্ষমতায় থাকাকালীনও রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে দেশব্যাপী আলাপ-আলোচনা শুরু করেছিলেন।

কিন্তু ছয় মাস পর ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের বিষয়টাও আকস্মিকভাবেই শেষ হয় এবং ভারত সংসদীয় গণতন্ত্র অব্যাহত থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়