শিরোনাম
◈ আমিনুলকে সরিয়ে হাসিনার নতুন আইনজীবী নিয়োগ, কে এই নতুন আইনজীবী? ◈ এনসিসি'র প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে ঐকমত্য কমিশন : অধ্যাপক আলী রীয়াজ ◈ আইএইএর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ছিন্নে রাশিয়ার সতর্ক প্রতিক্রিয়া ◈ প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি নয় সিদ্ধান্তে একমত বিএনপি ◈ কোড স্ক্যান করে ট্রেনে উঠতে ও নামতে পারবেন, দাঁড়াতে হবে না দীর্ঘ লাইনে! ◈ গাজার জনসংখ্যা উধাও: হার্ভার্ড প্রতিবেদনে গণবিলুপ্তির আশঙ্কা ◈ কমনওয়েলথ গেমসে ২০ ক্রীড়াবিদ পাঠাবে বাংলাদেশ: বিওএর সিদ্ধান্ত ◈ মগবাজার এলাকা থেকে সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল গ্রেপ্তার ◈ রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ, আহত ১, আটক ৩ ◈ জেফ বেজোসের বিয়ের আয়োজন: ৩ দিনে গালা, ২০০ বিলিয়নিয়ার অতিথি, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ইয়ট নিরাপদ দূরত্বে

প্রকাশিত : ২৫ জুন, ২০২৫, ০৫:০৫ বিকাল
আপডেট : ২৫ জুন, ২০২৫, ০৮:০৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্বযুদ্ধের দামামা: কোথায় মিলবে নিরাপদ আশ্রয়? এই ১২টি দেশই হতে পারে শেষ ভরসা!

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং পরাশক্তিগুলোর ক্রমবর্ধমান সামরিক মহড়া বিশ্বকে এক অস্থিতিশীলতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের 'বান্কার বাস্টার' বোমা হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে চাপা আতঙ্ক ছিল, তা যেন নতুন করে গাঢ় হচ্ছে। রাশিয়ার জাতিসংঘ দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়ার ভাষায়, এই ধরনের পদক্ষেপ "প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেওয়ার সামিল", যা বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

এমন এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন—যদি সত্যিই যুদ্ধ বেঁধে যায়, তাহলে নিরাপদ আশ্রয় মিলবে কোথায়? বেশিরভাগ দেশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ভৌগোলিক অবস্থান, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার কারণে কিছু দেশ এই মহাদুর্যোগ থেকে তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম 'দ্য মেট্রো' এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের পর্যালোচনার ভিত্তিতে এমনই ১২টি দেশের একটি তালিকা তুলে ধরা হলো, যা হতে পারে আপনার নিরাপদ গন্তব্য।

কোন বৈশিষ্ট্যগুলো একটি দেশকে নিরাপদ করে তোলে?

একটি দেশ বিশ্বযুদ্ধের সময় কতটা নিরাপদ, তা মূলত কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:

সম্ভাব্য নিরাপদ ১২টি দেশের তালিকা

১. সুইজারল্যান্ড:
নিরপেক্ষতার কথা বললে সুইজারল্যান্ডের নাম আসবেই। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপের কেন্দ্রে থেকেও নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেছিল দেশটি। এর পার্বত্য ও দুর্গম ভূখণ্ড যেকোনো সামরিক অভিযানের জন্য দুঃসাধ্য। এছাড়াও, দেশটির প্রতিটি নাগরিকের জন্য পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র (বান্কার) রয়েছে এবং এর সামরিক প্রস্তুতিও অত্যন্ত শক্তিশালী, যা আত্মরক্ষার জন্য বিশেষভাবে তৈরি।

২. নিউজিল্যান্ড:
প্রশান্ত মহাসাগরের এক কোণে অবস্থিত নিউজিল্যান্ড ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন একটি দেশ। এর পররাষ্ট্রনীতি নিরপেক্ষ এবং দেশটি বরাবরই শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পাহাড়-ঘেরা প্রকৃতি এবং শক্তিশালী গণতন্ত্র দেশটিকে যেকোনো বৈশ্বিক সংঘাতের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হওয়া থেকে দূরে রাখে।

৩. আইসল্যান্ড:
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (GPI) বা বিশ্ব শান্তি সূচকে প্রায়ই শীর্ষে থাকা আইসল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশ। ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় এবং কোনো দেশের সঙ্গে সীমান্ত না থাকায় যুদ্ধের আঁচ এখানে পৌঁছানো কঠিন। দেশটির কোনো পূর্ণাঙ্গ সেনাবাহিনী নেই, যা তার নিরপেক্ষতার প্রতীক।

৪. আর্জেন্টিনা:
বিশ্বযুদ্ধ বা পারমাণবিক সংকটের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো খাদ্য সংকট। আর এখানেই আর্জেন্টিনা অনন্য এক নিরাপদ স্থান। দেশটির উর্বর ভূমি এবং বিশাল প্রাণিসম্পদ দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের খাদ্যচাহিদা মেটাতে সক্ষম। দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত হওয়ায় এটি প্রধান সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে অনেক দূরে।

৫. চিলি:
দক্ষিণ আমেরিকার দীর্ঘতম উপকূলীয় দেশ চিলি তার অনন্য ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একটি প্রাকৃতিক দুর্গ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর উত্তরে রয়েছে বিশ্বের শুষ্কতম আটাকামা মরুভূমি এবং দক্ষিণে বরফাবৃত আন্দিজ পর্বতমালা ও হিমবাহ। এই প্রাকৃতিক বাধাগুলো দেশটিকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও তামা, লিথিয়ামের মতো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এবং উন্নত অবকাঠামো যেকোনো সংকটে টিকে থাকতে সাহায্য করবে।

৬. ফিজি:
অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় ২৭০০ মাইল দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ভেসে থাকা এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র ফিজি। এর সামান্য সেনাবাহিনী, নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি এবং বনজ ও সামুদ্রিক সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এটিকে একটি আদর্শ নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত করেছে। গ্লোবাল পিস ইনডেক্সেও এর অবস্থান বেশ উপরে।

৭. ভুটান:
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট এই দেশটি ১৯৭১ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে নিরপেক্ষ। ভারত ও চীনের মতো দুটি বড় দেশের মাঝে থেকেও ভুটান अपनी शांतिपूर्ण নীতি বজায় রেখেছে। এর দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল দেশটিকে বহিরাগত হুমকি থেকে স্বাভাবিকভাবেই সুরক্ষিত রাখে।

৮. গ্রীনল্যান্ড:
বিশ্বের বৃহত্তম এই দ্বীপটি ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এর জনসংখ্যা অত্যন্ত কম এবং ভৌগোলিকভাবে এটি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন। সামরিক বা কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বহীন হওয়ায় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি সকলের অগোচরেই থেকে যেতে পারে।

৯. ইন্দোনেশিয়া:
ঐতিহাসিকভাবে ইন্দোনেশিয়া জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে (Non-Aligned Movement) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যুদ্ধবিরোধী এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি দেশটিকে সম্ভাব্য সংঘাত থেকে দূরে রাখতে পারে।

১০. তুভালু:
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে মাত্র ১১ হাজার জনসংখ্যার এই ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটির কোনো সামরিক গুরুত্ব নেই। সম্পদের অভাব এবং বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারণে এটিকে কেউ হামলার লক্ষ্যবস্তু বানাবে না।

১১. দক্ষিণ আফ্রিকা:
উর্বর জমি, পর্যাপ্ত মিঠা পানি এবং আধুনিক অবকাঠামোর কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা খাদ্য ও সম্পদে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ভৌগোলিকভাবে এটি প্রধান সংঘাতের কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।

১২. অ্যান্টার্কটিকা:
যদিও এটি কোনো দেশ নয়, একটি মহাদেশ। পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এটি তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। তবে এখানকার চরম প্রতিকূল আবহাওয়া মানুষের বসবাসের জন্য প্রায় অসম্ভব। এটি হতে পারে কেবলই শেষ আশ্রয়।

শেষ কথা:
যদিও কোনো দেশই শতভাগ নিরাপদ নয়, তবে উপরের তালিকাভুক্ত দেশগুলো বিভিন্ন কারণে অন্যদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সর্বোপরি, সেরা আশ্রয় হলো এমন একটি বিশ্ব যেখানে সংঘাতের বদলে কূটনীতি জয়ী হয় এবং বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতিই তৈরি হয় না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়