নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আন্দামান সাগরে ফেলে দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
জাতিসংঘ জানায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিবারের সদস্য এবং তাদের আইনজীবীর বরাতে বলা হয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে একটি নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে মিয়ানমার উপকূলে সমুদ্রে ফেলে দেয়। তাদেরকে কেবল জীবনরক্ষাকারী জ্যাকেট (লাইফ জ্যাকেট) দেওয়া হয়।
তবে ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। দেশটির সরকার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনেছে। আইনগতভাবে ভারতে কেউ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে পারেন না। তাই সব রোহিঙ্গাকে দেশটি অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করেছে।
শুক্রবার কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) জানান, তাদের পরিবারের সদস্যরা ৬ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন। আটককৃতদের মধ্যে ১৫ জন খ্রিস্টানও ছিলেন। ৮ মে তাদের একটি বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ভারতীয় নৌবাহিনীর মাধ্যমে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।
দিলাওয়ার হুসেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আইনজীবী জানান, ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেছে, যাতে ভারত সরকারকে তাদের পরিবারদের দিল্লিতে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
এদিকে ভারতের নৌবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ভারতের মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) জানিয়েছে, যাদের পানিতে ফেলা হয়েছিল তাদের মধ্যে কিশোর, বয়স্ক এবং ক্যানসার রোগীও ছিলেন।
তবে ভাগ্য ভালো থাকায় ওই ৪০ রোহিঙ্গার সবাই জীবিত অবস্থায় তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ভারতীয় নৌ সেনারা তাদের মারধর ও অন্যান্য নির্যাতন করেছে।
মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, “নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা অত্যান্ত ভয়াক। আমি এই ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি এবং ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”
ভারত গত সপ্তাহে বাংলাদেশেও ৭৮ জনকে পুশ ইন করে। যাদের গুজরাট থেকে ধরে এনে সুন্দরবনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল। ১০ মে এসব মানুষকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ। তারা জানিয়েছেন, তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি তাদের না খাইয়ে রাখা হয়েছিল।