বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।। ভারতের সেনাবাহিনী দাবি করছে, পাকিস্তান ভারত-শাসিত কাশ্মিরের উধমপুর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটের তিনটি সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভারতের এই অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, ভারত শাসিত কাশ্মীরে কোনো হামলার দায় তার দেশের নয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, ওইসব 'হামলা'র ফলে তাদের কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং হামলাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবী করছে, "জম্মু, পাঠানকোট আর উধমপুরে সামরিক ঘাঁটির ওপরে পাকিস্তানের দিক থেকে ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। এইসব হামলা রুখে দেওয়া গেছে। কোনও জান মালের ক্ষতি হয় নি।"
ভারতের বিভিন্ন শহরে ব্ল্যাকআউট
চন্ডীগড় শহরের প্রশাসন বলছে, বিমান হামলার সঙ্কেত দিতে সাইরেন বাজানো হচ্ছে এবং দ্রুত ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হচ্ছে।
জম্মুরই আরেক শহর রাজৌরিতে প্রশাসন ব্ল্যাক আউট করে দিতে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছে।
এর আগে বিবিসির সংবাদদাতা দিব্যা আরিয়া জানিয়েছিলেন যে, জম্মু অঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, পুরো জম্মু শহরই অন্ধকার করে দেওয়া হয়েছে।
জম্মুর বিমানবন্দর থেকে বিস্ফোরণের খবর আগেই পাওয়া গিয়েছিল।
জম্মু শহরের এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানিয়েছিলেন যে বিমানবন্দরের কাছে তিনি নিজে "১৬টি বস্তুকে" অবতরণ করতে দেখেছেন।
পুরো জম্মু শহর এখন অন্ধকার, দোকান বাজার বন্ধ।
হামলার সঙ্কেত দিতে সাইরেন বাজা শুরু হতেই মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন।
এখন সেখান থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা দূরের কাঠুয়া থেকেও বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। সেখানেও ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হয়েছে পুরো শহর।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে উদ্ধৃত করে বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, জম্মুতে যে ধরনের ড্রোন দিয়ে হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান, সেগুলো 'লয়েটারিং মিউনিশন', অর্থাৎ এই ড্রোনগুলিতে বিস্ফোরক থাকে এবং লক্ষ্যবস্ততে আঘাত করার পরে সেগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটে যায়।
'ফ্যান্টম ডিফেন্স': পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র
ভারত সরকারকে "সিনেমা" থেকে "বাস্তব" জগতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।
কিছুক্ষণ আগে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেছেন। এ সময় পাকিস্তানের উপ প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি ভারতের হামলাকে "ফ্যান্টম ডিফেন্স" বা "ভৌতিক প্রতিরক্ষা" হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এই সামরিক মুখপাত্র আরও বলেছেন, "পাকিস্তান যখন ভারতে হামলা করবে, তখন এর প্রতিধ্বনি সব জায়গায় শোনা যাবে।"
ধরমশালায় আইপিএলের ম্যাচ মাঝপথে বন্ধ
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক সংঘাতের মধ্যেই হিমাচল প্রদেশের ধরমশালায় বৃহস্পতিবার রাতে আইপিএল টুর্নামেন্টের একটি টিটোয়েন্টি ম্যাচ মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আইপিলের দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি পাঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে এই ম্যাচটি মাত্র ১০ ওভার ১ বল খেলা হওয়ার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ইএসপিএন সাইট জানাচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এক বিবৃতিতে বলেছে 'বড়সড় টেকনিক্যাল ফেইলিওরে'র কারণেই এই ম্যাচটি মাঝপথে থামিয়ে দিতে হয়!
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, "ওই এলাকাতে বিদ্যুত সংযোগে বিঘ্ন ঘটার জন্য হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের একটি ফ্লাডলাইট টাওয়ার খারাপ হয়ে যায়।"
স্টেডিয়ামে আসা দর্শকদের এ জন্য যে অসুবিধা হয়েছে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিসিআই তার জন্য দু:খ প্রকাশও করেছে।
ধরমশালার মাঠে এই ঘটনা ঘটল এমন একটা সময়ে যখন বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় যুদ্ধের মোকাবিলায় ব্ল্যাকআউট করা হয়েছে – এবং হিমাচল প্রদেশের লাগোয়া ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
বিমানবন্দর বেসামরিক সেবার জন্য বন্ধ ঘোষণা
ভারতে পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, গুজরাট, রাজস্থান এবং হিমাচল প্রদেশের ২৪টি বিমানবন্দর বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল নিরাপত্তা ব্যুরো (বিসিএএস) দেশটির সকল বিমান সংস্থা ও বিমানবন্দরকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, সকল বিমানবন্দরে সকল যাত্রীর জন্য সেকেন্ডারি ল্যাডার পয়েন্ট চেকিং (এসএলপিসি) করা হবে। টার্মিনাল ভবনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এয়ার মার্শালও মোতায়েন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া, বিসিএএস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে X-এ জানিয়েছে যে, এখন থেকে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে এবং চেক-ইন ৭৫ মিনিট আগে বন্ধ করে দেওয়া হবে।