নাটকীয়ভাবে প্রথম দফায় হেরে যাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দ্বিতীয় দফার ভোটে পার্লামেন্ট সদস্যদের সমর্থন পেয়ে জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হয়েছেন ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস। মঙ্গলবার (৪ মে) বিকেলে দ্বিতীয় দফায় তড়িঘড়ি করে আয়োজন করা এক অধিবেশনে ৩২৫ জন আইনপ্রণেতা তার পক্ষে ভোট দেন। চ্যান্সেলর হতে তার প্রয়োজন ছিল ৩১৬ ভোট।
সিএনএন জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর গত মাসে একটি জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেন ম্যার্ৎস। কিন্তু মঙ্গলবার সকালেই প্রথম দফার ভোটে তিনি ৬ ভোটের জন্য হেরে যান—যা ছিল জার্মান রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এতে তাঁর নেতৃত্বাধীন জোটের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও অনিশ্চয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জার্মান প্রেসিডেন্টের অনুমোদন পাওয়ার পর ম্যার্ৎস আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যান্সেলরের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তবে তাঁর যাত্রা শুরু হচ্ছে একটি টালমাটাল পরিস্থিতিতে। মঙ্গলবারের ভোটে তাঁর জোটের ভেতর দ্বিধা-সংকোচ ধরা পড়েছে এবং কট্টর-ডানপন্থী এএফডি পার্টি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।
মার্জের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ করলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল। জার্মানির বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এরপর ম্যার্ৎস মধ্য-বামপন্থী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (এসপিডি) দলের সঙ্গে জোট গঠনের ঘোষণা দেন। জার্মানির দুই প্রধান ধারার রাজনৈতিক দলের এই বিরল ঐক্যে কট্টর-ডানপন্থী এএফডি ক্ষমতার বাইরে থেকে যায়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মান রাজনীতির ‘ফায়ারওয়াল’ বা কট্টর-ডানপন্থীদের ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টার অংশ ছিল। যদিও সেই বাধা এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ম্যার্ৎসের সিডিইউ ও এসপিডি জোটের মোট আসনসংখ্যা ৩২৮। এই হিসেবে চ্যান্সেলর হতে প্রয়োজনীয় ৩১৬ ভোট নিয়ে কোনো শঙ্কাই ছিল না। মার্জের জন্য আজকের দিনটি হওয়ার কথা ছিল তাই একটি উৎসবমুখর দিন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এই পরাজয় ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এএফডির প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েছিল ম্যার্ৎসের জোট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের হস্তক্ষেপও রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল। গোপন ব্যালটের কারণে কে বা কারা প্রথম দফায় ম্যার্ৎসের পক্ষে ভোট দেননি, তা জানা যায়নি—হয়তো কোনো দিনই জানা যাবে না।
তবে ম্যার্ৎস শুরু থেকেই একটি আক্রমণাত্মক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে জার্মানি আবারও ২০২২ সালের নিরাপত্তা নীতির ‘টার্নিং পয়েন্ট’ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ এটি শুরু করেছিলেন। এর মাধ্যমে একটি আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনে প্রতিরক্ষা ব্যয় অনেক গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করার এবং ইউরোপ থেকে নিরাপত্তা প্রত্যাহারের হুমকি দেওয়ায় এই উদ্যোগ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় দফার ভোটে জয়লাভের পরপরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি এজেন্ডাটি আরও জোরালোভাবে সামনে আনেন।
এক্স-এ দেওয়া বার্তায় জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি জার্মানি আরও শক্তিশালী হবে এবং ইউরোপ ও ট্রান্স আটলান্টিক বিষয়াবলিতে জার্মান নেতৃত্ব আরও দৃঢ় হবে। ইউরোপের ভবিষ্যৎ এখন ঝুঁকির মুখে—এবং আমাদের ঐক্যের ওপরই তা নির্ভর করছে।’