গার্ডিয়ান প্রতিবেদন: বিশ্বের রাজনৈতিক ও আর্থিক অভিজাতদের কিছু অংশ সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বার্ষিক সমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অক্সফাম এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলছে বিলিয়নেয়ারদের সম্মিলিত সম্পদ গত বছর ২ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়ে ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রতি সপ্তাহে নতুন চারজন করে বিলিয়েনারের সংখ্যা বেড়েছে গত বছর। টেকারস নট মেকারস শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ২,৭৬৯ জন বিলিয়নেয়ার ছিলেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২০৪ জন বেশি। এসব বিলিয়নেয়ারের সম্পদের তিন-পঞ্চমাংশ এসেছে উত্তরাধিকারসূত্রে, একচেটিয়া ক্ষমতা বা ‘ঘনিষ্ঠ সংযোগ’ থেকে।
অক্সফ্যাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে আগামী দশকে কমপক্ষে পাঁচজন ট্রিলিয়নেয়ার আবির্ভূত হবে। এক বছর আগে, গ্রুপটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে সেই সময়ের মধ্যে মাত্র একজন ট্রিলিয়নেয়ার আবির্ভূত হবেন।
অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ বেহার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের বিশ্ব অর্থনীতির উপর সুবিধাভোগী কয়েকজনের দখল একসময় অকল্পনীয় বলে বিবেচিত উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিলিয়নেয়ারদের থামাতে ব্যর্থতা এখন শীঘ্রই ট্রিলিয়নেয়ারদের জন্ম দিচ্ছে। বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ আহরণের হার কেবল তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়, তাদের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। অক্সফাম সতর্ক করে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ‘বৈষম্যের আগুনকে আরও জ্বালিয়ে দেবে।’
অক্সফাম জানিয়েছে, গড়ে, একজন বিলিয়নেয়ারের সম্পদ প্রতিদিন গড়ে ২ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে ধনী ১০ জন বিলিয়নেয়ার গড়ে প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ডলার করে ধনী হয়েছেন। এমনকি যদি তারা রাতারাতি তাদের ৯৯ শতাংশ সম্পদ হারাতেও পারে, তবুও তারা বিলিয়নেয়ারই থেকে যাবে।
বিপরীতে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ১৯৯০ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ‘সবেমাত্র হ্রাস পেয়েছে’ এবং ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মার্কিন ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন ফোর্বস কর্তৃক প্রণীত বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের অনুমান এবং বিশ্বব্যাংকের তথ্য সহ উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দাভোসের আল্পাইন গ্রামে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সভায় প্রায় ৩,০০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন যাদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়িক নির্বাহী, শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা এবং নাগরিক গোষ্ঠীর নেতারাও। ট্রাম্প, যিনি তার প্রথম মেয়াদে দুবার দাভোস সফর করেছিলেন এবং এবার ভিডিওর মাধ্যমে ফোরামের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সম্পদ আহরণের পক্ষে - যার মধ্যে তার নিজস্ব সম্পদও রয়েছে - এবং বহুবিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ককে একজন শীর্ষ উপদেষ্টা হিসেবে গণনা করেন।
অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আপনি বর্তমানে যা দেখছেন তা হল আজ একজন বিলিয়নেয়ার প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে শপথ নিচ্ছেন, যার সমর্থিত হলেন সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি (ইলন মাস্ক)। এটি কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির কথা নয়। এটি এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা আমরা তৈরি করেছি যেখানে কোটিপতিরা এখন অর্থনৈতিক নীতি, সামাজিক নীতি গঠন করতে সক্ষম হচ্ছেন, যা অবশেষে তাদের আরও বেশি মুনাফা দেয়।
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম বিভিন্ন দেশের সরকারকে বৈষম্য এবং চরম সম্পদ কমাতে এবং ‘নতুন অভিজাতদের ভেঙে ফেলার’ জন্য ধনীদের উপর কর আরোপ করার আহ্বান জানিয়েছে। এটি একচেটিয়া ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা, সিইওদের বেতন সীমিত করা এবং কর্পোরেশনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা শ্রমিকদের ‘জীবিকা মজুরি’ প্রদান নিশ্চিত করতে পারে।