এল আর বাদল : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফের জারি করল নতুন সতর্কবার্তা। মঙ্গলবারই তারা এই সতর্কতা জারি করেছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ফের বিশ্বে মহামারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়তে পারে চিকুনগুনিয়া। প্রতিটি দেশ যেন অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই রোগটি এর আগেও বিশ্ববাসীকে ব্যতিব্যস্ত করেছিল। সেখান থেকে তাই যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে সেখানে বিশ্বের বহু দেশের কপালে দুঃখ আছে। -- জি নিউজ
চিকুনগুনিয়া হল একটি মশাবাহিত ভাইরাল রোগ। এরফলে জ্বর আসে। তার সঙ্গে হাড়ের বিভিন্ন অংশে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়।
হু ইতিমধ্যে বলেছে চিকুনগুনিয়াকে দেখতে খুব সহজ বলে মনে হলেও এটি বর্তমানে বিশ্বের ১১৯ টি দেশে নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে সেখানকার প্রচুর মানুষ ভয়াবহ বিপদের সামনে রয়েছে।
২০০৪-৫ সালে চিকুনগুনিয়া বিরাট আকার ধারণ করেছিল ভারত মহাসাগরের বেশ কয়েকটি দেশে। সেখানকার ছোটো ছোটো দ্বীপে এই রোগ এমনভাবে তার জাল বিস্তার করেছিল যে সেখান থেকে সহজে বেরিয়ে আসা যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ফের সেই একই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ফের একবার মাথাচাড়া দিয়েছে চিকুনগুনিয়া।
চিকুনগুনিয়া অনেকটা ডেঙ্গুর মতো। পাশাপাশি জিকা ভাইরাসের সঙ্গেও এর মিল রয়েছে। সেদিক থেকে দেখতে হলে একে সহজে ধরা যায় না। এই ভাইরাস এর আগেও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশকে ভুগিয়ে মেরেছে। সেই তালিকায় মাদাগাস্কার, সোমালিয়া এবং কেনিয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেও চিকুনগুনিয়া দেখা গিয়েছে। ফলে ফের একবার ভারতীয় মহাসাগরীয় এলাকায় এই রোগ মাথাচাড়া দিতে পারে। যদি সেটাই সত্যি হয় তাহলে ফের একবার বিশ্ববাসী নতুন করে এক মহামারির সামনে পড়বে।
বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হল ইউরোপে সম্প্রতি চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহন করে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনাও ধরা পড়ছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ১ মে থেকে কেবল ফ্রান্সেই প্রায় ৮০০ জন 'ইমপোর্টেড' বা বিদেশফেরত চিকুনগুনিয়া রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে।
এছাড়া, ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক এলাকায় ১২টি 'লোকাল ট্রান্সমিশন' বা স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, এসব রোগী ভাইরাসপ্রবণ কোনও অঞ্চলে ভ্রমণ না করেও স্থানীয়ভাবে মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন। গত সপ্তাহে ইতালিতেও এই ধরনের একটি স্থানীয় সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চিকুনগুনিয়া ছড়ায় মূলত এডিস প্রজাতির মশা—বিশেষ করে 'টাইগার মশা'র মাধ্যমে। এই মশা \ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও বহন করে থাকে। দিনেরবেলা কামড়ানো এই মশা দ্রুত ও ব্যাপকভাবে ভাইরাস ছড়ায়। তাই প্রতিরোধই এখানে মূল উপায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মশার কামড় থেকে রক্ষায় মশা নিরোধক ব্যবহার, পূর্ণ হাতা জামা ও নিরাপদ পোশাক পরার ওপর জোর দিয়েছে। সংস্থাটির চিকিৎসা কর্মকর্তা ডায়ানা রোজাস আলভারেজ জেনিভায় বলেন, বিশ্বব্যাপী ১১৯টি দেশে প্রায় ৫৬০ কোটি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তীব্র জ্বর, প্রচণ্ড জয়েন্ট ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অক্ষমতা সৃষ্টি করতে সক্ষম এই ভাইরাসটির কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।
আলভারেজ বলেন, 'ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে দেখছি আমরা'। ২০০৪-২০০৫ সালের মহামারির কথা স্মরণ করিয়ে তিনি জানান, সে সময় ছোট ছোট দ্বীপে শুরু হয়ে ভাইরাসটি অর্ধলাখ মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় এবং পরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।