এশা রুশদীর ইউটিউব পডকাস্টে নানা বিষয়ে কথা বলেন মিথিলা। সেখানে তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে মিথিলা জানান, বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো মানসিক অবস্থা সে সময় তাঁর ছিল না। তাহসানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেপারেশনে থাকার পরও অপেক্ষা করছিলেন সবকিছু ঠিক হওয়ার। দুই বছর পর তিনি বুঝতে পারলেন, সময় এসেছে আলাদা হয়ে যাওয়ার।
২০১৭ সালে ফেসবুকে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে ১১ বছরের সংসারজীবনের ইতি টানার কথা জানান তাহসান খান ও রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। সে সময় মিথিলা জানিয়েছিলেন, বিচ্ছেদের আগে দুই বছর সেপারেশনে ছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত বোঝাপড়া না হওয়ায় চূড়ান্ত বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর এ নিয়ে দুজনের কেউ আর তেমন কিছু বলেননি। সেই ঘটনার প্রায় আট বছর পর সম্প্রতি এক পডকাস্টে মিথিলা জানালেন, তাহসানের সিদ্ধান্তেই সেপারেশনে গিয়েছিলেন তাঁরা। তবে মিথিলা ভেবেছিলেন সময়ের পরিক্রমায় ঠিক হয়ে যাবে সব, কিন্তু তা আর হয়নি।
মিথিলা বলেন, ‘যেকোনো সেপারেশন বা বিচ্ছেদ খুব কঠিন বিষয়। আমার ক্ষেত্রেও এমন সিদ্ধান্তে আসা খুব কঠিন ছিল। সে সময় আমি যে ভালো-মন্দ বিচার করব বা সিদ্ধান্ত নেব, সে ধরনের পরিস্থিতি আমার ছিল না। আমার মেয়ে আইরা এত ছোট, মাত্র ১ বছর বয়স। সেই সময়ে আমি যে সিদ্ধান্ত নেব থাকব কি থাকব না, ডিভোর্স চাই কি চাই না—এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিক অবস্থা ছিল না। ২০১৫ সালে আমরা সেপারেশনে যাই। এরপর দুই বছর আমি ভেবেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। মানসিকভাবে মেনে নিতে পারছিলাম না। ২০১৭ সালে এসে আমি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছিলাম যে আমাদের সম্পর্কটা আর কাজ করছে না।’
বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রথমে তাহসানের পক্ষ থেকে এলেও তাঁকে দোষারোপ করেননি মিথিলা। তিনি বলেন, ‘কোনো সম্পর্ক একটা কারণে বা এক দিনেই নষ্ট হয়ে যায় না। এখন হয়তো সবাই বলবে, আমার পার্টনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ও ছেড়ে দিয়েছে, ডিভোর্স দিয়েছে। কিন্তু এত বছর পর যখন আমি সবকিছু চিন্তা করি, তখন দেখি, একটা মানুষের তার নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। আমার যেমন ২৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল, তারও ২৬ বছরে। সময়ের সঙ্গে মানুষের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন হয়, আরও পরিণত হয়। তার নিজের জীবনের জন্য সে অন্য কিছু চাইতেই পারে।’
মিথিলা জানান, সেপারেশনের সময়টা অনেক কঠিন ছিল তাঁর জন্য। মানসিক অবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। সেপারেশনের ব্যাপারে তাহসান আরেকটু সচেতন বা আরও সময় নিতে পারতেন কি না, জানতে চাইলে মিথিলা বলেন, ‘আমার মনে হয় সবকিছুর একটা সময় থাকে। হয়তো ওটার সময় তখন ছিল। সে কারণে ওই সময়েই হয়েছে। এখন তো আর পেছনের চিন্তা করে কোনো কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। ওটা তখন না হয়ে দুই বছর পর হলে কি আমার জন্য ভালো হতো? সেটা আমি জানি না। আমি আর এখন পেছনের কথা নিয়ে ভাবি না। মা-বাবা হিসেবে আমরা সর্বোচ্চ দিয়েই চেষ্টা করছি কর্তব্য পালন করার।’
মিথিলা জানান, কঠিন সময়টা পার করতে তিনি মনোযোগ দিয়েছিলেন পড়াশোনায়। তিনি বলেন, ‘মাইন্ড পরিবর্তন করার জন্য আমি সব সময় পড়াশোনায় মনোযোগ দিই। সে সময়ও তা-ই করলাম। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে দ্বিতীয় মাস্টার্স শুরু করি। আইরার তখন দেড় বছর বয়স। সে সময় অফিস, পড়াশোনা, বাচ্চার দেখাশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আমি যেন এই সব নিয়ে ভাবতেই না পারি। ওই সময় এটা খুব দরকার ছিল।’
জীবনের এই কঠিন অধ্যায় থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানান মিথিলা। এ কারণেই আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছেন বলে অভিমত তাঁর।