আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং হলেও আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বিবিসি বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যে দিন নির্বাচন হোক, আমরা একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট ফর মি টু রেসপন্ড... আমি নিজেই জানি না এক্স্যাক্ট ডেট।’ তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্বাচন কমিশনকে এখনো জানানো হয়নি। তবে ফেব্রুয়ারি, রমজানের আগে অথবা এপ্রিলের প্রথমার্ধে ভোট হতে পারে।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশন ডিসেম্বর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। সরকার কিংবা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা না পেলেও, কমিশন স্বাধীনভাবে তার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু সম্ভব। জনগণ যদি আমাদের সঙ্গে থাকে, কোনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই সমস্যার কারণ হবে না।’ তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীকে প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষপাতের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমি সুপ্রিম কোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি, আমি বিচারকের মতো কাজ করব।’
বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বা জামায়াতপন্থী হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব রাজনৈতিক বক্তব্য। সময়মতো সবাই বুঝবে আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি।’
জাতীয় ফুল ‘শাপলা’ প্রতীক হিসেবে ব্যবহার নিয়ে এনসিপি ও নাগরিক ঐক্যের দাবি প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, শাপলা প্রতীক আমরা কাউকেই দেবো না। যেহেতু এটি জাতীয় প্রতীক এবং আইনি জটিলতা আছে, তাই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাপলা প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।
সিইসি জানান, প্রায় দেড়শো রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। তিনি বলেন, অনেকের সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই। যাচাই-বাছাই শুরু হয়ে গেছে। ফিল্ড অফিসগুলো এই কাজ করছে। প্রয়োজন হলে দলগুলোকে ডকুমেন্টস জমা দিতে ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। যারা আইন অনুযায়ী শর্ত পূরণ করবে, কেবল তারাই নিবন্ধন পাবে।
জামায়াতের পুরনো প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে বলেন, ‘এটা আদালতের রায়ের আলোকে প্রতীকসহ স্ট্যাটাস কো বহাল রাখা হয়েছে।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। তাই আমরা তাদের নিবন্ধনও স্থগিত করেছি। বিচার শেষে যদি তারা দোষী না হয়, তখন বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু এখন তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, যদি কোনো বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, তাহলে নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তবে তার মতে, অংশগ্রহণমূলক মানে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন শুধু জাতীয় নির্বাচন নিয়েই ভাবছি। স্থানীয় নির্বাচন বাস্তবসম্মত নয় এই মুহূর্তে।’
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এই দায়িত্বটাকে জীবনের শেষ পর্যায়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি চাই হাসিমুখে দায়িত্ব নিয়ে, হাসিমুখেই যেন যেতে পারি।’