শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২২% বৃদ্ধি, চীনের হারানো অর্ডার এলো দেশে ◈ বিরল দৃশ্যের অবতারণা, কাবা ঘরের ওপর নেমে এলো চাঁদ ◈ ফজলুর রহমানকে গালি দিয়ে স্লোগান দেওয়া সেই ফারজানা ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার (ভিডিও) ◈ মাহফুজ আলমের ওপর হামলা চেষ্টা, লন্ডন পুলিশকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান অন্তর্বর্তী সরকারের ◈ সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই ◈ বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য চীনের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে যে নতুন নির্দেশনা ◈ জনগণ রায় দিলে ৫ বছরেই দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন করা সম্ভব: জামায়াত আমীর ◈ সহকারী শিক্ষকদের জন্য নতুন নির্দেশনা, সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে যেসব তথ্য ◈ রাতে ঢাকাবাসীর জন্য দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর ◈ ডাকসুর পর জাকসুতেও শিবিরের জয়জয়কার

প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৫ দুপুর
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:৪৪ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের যত চ্যালেঞ্জ

এল আর বাদল : অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বার বার জোর দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বলা হচ্ছে নির্বাচন ভন্ডুলের ষড়যন্ত্রের কথাও। তাই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে শঙ্কা৷

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কোন বিকল্প আমাদের হাতে নেই” এই বক্তব্য দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বৃহস্পতিবার একথা বলেছেন তিনি। --- ড‌য়ে‌চে‌ভে‌লে

নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে ফেব্রুয়ারিতে  নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলেও রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। কিন্তু নতুন করে সীমানা নির্ধারণের পর দেশের কয়েকটি স্থানে এই সীমানা নিয়ে চলছে বিক্ষোভ। ৩০০ আসনে নতুন করে সীমানা নির্ধারণ করার কারণে ৩৭টি আসনে পরিবর্তন এসেছে। আর এর প্রভাব পড়েছে ঢাকাসহ সারাদেশের ৪৬টি আসনে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিং-এ বলেছেন," সবদল সৎ থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোনো বাধা নেই, দেশের মানুষ উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিতে আসবে। কোনো শক্তিই সুষ্ঠু নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।” তার কথা," সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকারের ইচ্ছায় নয়, সমাজের বিভিন্ন অংশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপরও নির্ভর করে। ইলেকশন করে সোসাইটি, পলিটিকাল পার্টিগুলো- তারা যদি চায়, তাহলে একটি ভালো নির্বাচন অবশ্যই সম্ভব।'' তিনি আরো জানান,‘‘নির্বাচনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় আট লাখ পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে।''

এর মাত্র পাঁচদিন আগে শফিকুল আলম বলেছেন," নির্বাচন যে করেই হোক ফেব্রয়ারির  প্রথমার্ধে হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই এই নির্বাচনকে ঠেকাতে পারে। সেজন্য যত প্রস্তুতি লাগে সেগুলো নেয়া হচ্ছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. জাহেদ উর রহমান বলেন," আপনি যখন বার বার কঠোরভাবে বলবেন যে নির্বাচন হবেই, তার মানে হলো আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আছে। অনেক বেশি শপথ করছি যদি বার বার বলা হয় তাহলে কনফিউশন দেখা দেয়। তাহলে একটা সমস্যা আছে।”

তবে নির্বাচন নিয়ে কাজ করা "ডেমোক্রেসি ডায়াসের” চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "এই বার বার বলার মধ্য দিয়ে আসলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় কেটে যাচ্ছে।” তার মতে," নানা কারণে এর আগে নির্বাচন কবে হবে সেটা নিয়েই একটি সংশয় ছিলো। এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা সরকার বলছে। আর বার বার বলার মধ্য দিয়ে সরকার সেটা নিশ্চিত করছে। এটা মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করছে।” 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের সামনে নির্বাচন নিয়ে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আস্থা ফিরিয়ে আনা। এই আস্থা নাগরিকদের মধ্যে যেমন ফিরিয়ে আনতে হবে, তেমনি ফেরাতে হবে রাজনৈতিক দলের মধ্যেও। আর রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা জরুরি। তাদের কথা, নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনের একক যে কাজ তা সরকার সহায়তা করলে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ না। আসল কাজ হলো সাবাইকে নির্বাচনমুখী করা।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার জেসমিন টুলি বলেন," নির্বাচন কমিশনের ওপর ভোটারের , রাজনৈতিক দলের আস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার। কারণ নির্বাচন কমিশনের ওপর তোআগের সরকারের আমলে আস্থা পুরোপুরি চলে গেছে। আর সরকারকেও এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এখনই ঘটাতে হবে। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার প্রতি আস্থা তৈরি করতে হবে। কারণ এটা নির্বাচনের জন্য খুবই জরুরি।”

বিশ্লেষকরা  মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনমুখী হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে যেকোনো ধরনের অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। এখন বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নানা ইস্যুতে অনৈক্য আছে। 

জুলাই সনদ নিয়ে আছে মতবিরোধ। এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে তাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। বিএনপি চায় নির্বাচিত সংসদ এটা করবে। জামায়ত গণভোট চায়। আর এনসিপি চায় গণপরিষদ নির্বাচন।  এই ইস্যুর সমাধান প্রয়োজন। আর জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করারও একটা ইস্যু আছে। 

জামায়াত চায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেভাবে নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাস দমন আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, জাতীয় পার্টির কার্যক্রমও সেভাবেই নিষিদ্ধ করা হোক। এনসিপিও তাই চায়। তবে বিএনপির কথা কোনো নির্বাহী আদেশে নয়, সেটা করা হোক বিচারের মাধ্যমে।

ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনও মনে করেন," প্রধান বিরোধী দল হতে হলে যে আসন পেতে হবে তা  জামায়াত নিশ্চিত করতে চাইবে। এরপরে আমি মনে করি এনসিপিও সেটা চাইবে। এখানে জাতীয় পার্টি নিয়ে তাই একটি হিসাব আছে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকলে এটা তাদের জন্য একটা থ্রেট তৈরি করবে। আর  জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের তো পুনর্বাসন হতে পারে। এখন ওই দুইটি দল যদি দেখে এই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে তাহলে তারা  জাতীয় পার্টির ব্যাপারে তাদের অবস্থান নিয়ে চাপ বাড়াতেই থাকবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন- সরকারের সামনে নির্বাচন নিয়ে মোটাদাগে যে চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো ঠিক করতে আগে দরকার রাজনৈতিক সমঝোতা। কারণ নির্বাচনে মূল প্লেয়ার হলো রাজনৈতিক দল।  কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকার কারণে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ফলে বাকি যে দলগুলো আছে তাদের সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে পারলে সেটা ইনক্লুসিভ হবে।

ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনের মতে," জুলাই সনদ সেই ব্যাপারে সরকারের সামনে আরো একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে রেখেছে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতের ভিন্নতা আছে। এখন সরকারকে সেটা  সমাধান করতে হবে। এটার সমাধান না হলে নির্বাচনের গতিটা ঠিক আসবে না৷ আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোবলও ভেঙে দিয়েছে। সেটা দ্রুত পুনরুদ্ধার করা দরকার। তা না হলে আশঙ্কা থেকেই যাবে। সরকার চাইলে প্রচলিত বাহিনীর পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক ভলান্টিয়ারও তৈরি করতে পারে। সামাজিভাবে উদ্যোগেরও ব্যবস্থা করতে পারে।

 ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন," বাইরের শক্তিও আছে যারা বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে রাখতে চায়। তারা এখানে নির্বাচন চায় না। অস্থিতিশীল হলে তাদের লাভ। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর সরকার আন্তরিকভাবে নির্বাচনের জন্য কাজ করলে বাইরের ওই শক্তি সুবিধা করতে পারবে না বলতে গেলে পাঁচ মাস নির্বাচনের বাকি। 

এই সময়ে নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে কাজ করা উচিত সেই হাওয়া দেখতে পাচ্ছি না। দেশের মানুষ নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো যেনো অন্য আরো অনেক ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত৷

নির্বাচন বিষয়ক গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপ ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন," এখন দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন দেখার জন্য। মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে এই আগ্রহ ইতিবাচক বিষয়। আমি আসলে নির্বাচন নিয়ে এখন বড় কোনো সংশয় দেখছি না। একটিই বড় চ্যালেজ্ঞ, আর তা হলো আইনশৃঙ্খলা। সরকারকে এখন সেটা নিয়েই মনোযোগী হতে হবে।'

 আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে নানা ইস্যু নিয়ে বিরোধ আছে আছে তা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই কমে যাবে। কারণ নির্বাচন হলে তা সবার জন্যই লাভ। যে রাজনৈতিক বয়ানগুলো তৈরি হচ্ছে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এর মাধ্যমে তাদের সমর্থকদের কাছে মেসেজ দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়