প্রতি বছর হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীকে আকর্ষণ করছে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেখানে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী যাচ্ছেন চীন থেকে। মালয় মেইলের হাতে পাওয়া এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেস (ইএমজিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছেন ২৯,৩৮৮ জন চীনা শিক্ষার্থী। সূত্র: মানবজমিন
এ তালিকায় চীনের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ (৮,৯৫৭ জন) এবং ভারত (৩,৪১০ জন)। ইএমজিএসের প্রধান নির্বাহী নোভি তাজউদ্দিন জানান, চীন থেকে শিক্ষার্থী আসার সংখ্যায় সামান্য প্রায় ৩ শতাংশ হ্রাস দেখা গেছে। এর কারণ মালয়েশিয়ার অনেক শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়ে যাওয়া। এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে শিক্ষার মান বজায় রাখা ও ক্যাম্পাসের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য রক্ষার জন্য।
তিনি মালয় মেইলকে বলেন, এর ফলে বর্তমান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্নাতক সম্পন্ন করে বের না হওয়া পর্যন্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয় নতুন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারছে না। এই সীমাবদ্ধতা ভর্তি ব্যবস্থাপনার একটি কাঠামোর অংশ, যার লক্ষ্য হলো সক্ষমতার ভারসাম্য, মান নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পদের সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২০ সালে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চীন থেকে আবেদন পড়েছিল ৮,৮৭৬টি।
২০২১ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ১৯,২০২টিতে। আর ২০২৩ সালে আবেদন বেড়ে হয় ২৬,৬২৭টি। বাংলাদেশ থেকেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত বছরের ৬,১০৩ জন থেকে চলতি বছর তা ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮,৯৫৭ জনে পৌঁছেছে। একইভাবে, ভারত থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যাও ৪১ শতাংশ বেড়ে গত বছরের ২,৪২৩ জন থেকে ৩,৪১০ জনে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে, ইএমজিএসের তথ্য অনুযায়ী এ বছর মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮১,৯৯২ জন থেকে ৮৭,২০৬ জনে উন্নীত হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষা ব্যয়ের সাশ্রয়ী হওয়া। এই খরচ বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। নোভি বলেন, মালয়েশিয়ায় বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা দেশেই পড়াশোনা করে বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, জাপান ও চীন স্বীকৃত ডিগ্রি অর্জন করতে পারছে। তাও অনেক কম খরচে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো চীন ও ভারতীয় উপমহাদেশে ইএমজিএসের সক্রিয় প্রচারণা। নোভি জানান, চীনের গুয়াংজি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্টাডি ইন মালয়েশিয়া কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে, যা সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের জন্য দৃশ্যমানতা ও সহায়তা বাড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ইএমজিএস চীন-আসিয়ান এক্সপোতে মালয়েশিয়া প্যাভিলিয়নে অংশ নিয়েছে।
এর মাধ্যমে বৃহত্তর আঞ্চলিক পর্যায়ে মালয়েশিয়াকে একটি পছন্দের শিক্ষা গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে নিয়মিতভাবে ‘স্টাডি ইন মালয়েশিয়া এডুকেশন ফেয়ার’ আয়োজন করছে ইএমজিএস। নোভি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি উপস্থিতি এবং সরাসরি মাঠপর্যায়ের প্রচারণার কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার আগ্রহ বেড়েছে।
ইএমজিএসের এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় গড়ে প্রতি মাসে ৯,৬০০ রিঙ্গিত ব্যয় করেন। এর মধ্যে টিউশন ফি, আবাসন, খাদ্যসহ অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত। নোভি জানান, বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। এর ফলে প্রতি মাসে দেশটির অর্থনীতিতে প্রায় ১.৪৪ বিলিয়ন রিঙ্গিত এবং বছরে মোট ১৭.২৮ বিলিয়ন রিঙ্গিত অর্থনৈতিক অবদান রাখছেন তারা।