নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে ইউরেনিয়ামের বিপুল মজুদ থাকার সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চলছে। যদি এই মূল্যবান খনিজটি উত্তোলন সম্ভব হয়, তবে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ভারতের আপত্তির কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই খনিজ উত্তোলনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সূত্র: বাংলাভিশন
ইউরেনিয়ামের অবস্থান ও প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা বিশেষ করে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় ইউরেনিয়ামের উপস্থিতির কথা বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) ভূতাত্ত্বিক জরিপেও এই অঞ্চলে ইউরেনিয়াম যুক্ত বালু ও শিলার সন্ধানের উল্লেখ রয়েছে। এমনকি সত্তরের দশকের শেষে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানও এই অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করেছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট অঞ্চলের ভূ-গঠনের সঙ্গে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইউরেনিয়াম বেল্টের মিল থাকায় বাংলাদেশে এর বড় মজুদের সম্ভাবনা অত্যন্ত জোরালো।
ভারতের আপত্তির কারণ কী? বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ইউরেনিয়াম খনির কাজ শুরু হলে পরিবেশগত বিপর্যয় ও ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের অজুহাত তুলে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তবে মূল কারণটি রাজনৈতিক ও কৌশলগত বলে ধারণা করা হয়:
জ্বালানি স্বনির্ভরতা: বাংলাদেশ যদি ইউরেনিয়াম উত্তোলনে সফল হয়, তবে পারমাণবিক জ্বালানির ক্ষেত্রে দেশটি স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।
নিরাপত্তা উদ্বেগ: ভবিষ্যতে বাংলাদেশ চীন বা রাশিয়ার সহায়তায় এই খনিজ কাজে লাগিয়ে পারমাণবিক গবেষণায় এগিয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে ভারতের কৌশলগত উদ্বেগ থাকতে পারে।
রপ্তানি সম্ভাবনা: নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ইউরেনিয়াম বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন পথ তৈরি হতে পারে, যা ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করবে।
উত্তোলনের পথে প্রধান বাধাগুলো ভারতের বাধা ছাড়াও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:
১. আধুনিক ও পর্যাপ্ত ভূতাত্ত্বিক জরিপের অভাব।
২. ইউরেনিয়াম উত্তোলন প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ।
৩. পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতার অভাব।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম আমদানি করতে হচ্ছে। যদি সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক মজুদের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায় এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়, তবে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদে কয়লা বা গ্যাস নির্ভরতা কমিয়ে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে।
যদিও শুধু ইউরেনিয়াম থাকলেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব নয়, তবুও দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতিতে এই খনিজটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় 'গেম চেঞ্জার' হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।